ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

আইজিপির কমপ্লেন সেল গঠন

প্রকাশিত: ১০:৩১, ৫ এপ্রিল ২০১৯

আইজিপির কমপ্লেন সেল গঠন

শংকর কুমার দে ॥ বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর সদস্য সংখ্যা ২ লক্ষাধিক। কিন্তু অসৎ পুলিশের সংখ্যা মাত্র ১৩ হাজার। হাতেগোনা মুষ্টিমেয় অসৎ পুলিশের জন্য গোটা পুলিশ বাহিনীর ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হচ্ছে। অসৎ পুলিশের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পুলিশ বাহিনীতে গঠন করা হয়েছে ‘আইজিপি’স কমপ্লেন সেল’। অসৎ পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ করার জন্য এটা গঠন করেছে পুলিশ সদর দফতর। পুলিশের বিরুদ্ধে থানায় মামলা না নেয়া, থানায় কোর্ট বসানো, বিচার করা ইত্যাদি অভিযোগের বিষয়ে প্রশ্ন তুলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে উচ্চ আদালত। আদালতে ক্ষোভ প্রকাশের বিষয়টিকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নিয়ে পুলিশের উচ্চ পর্যায়ে আলোচনা হয়েছে। পুলিশ সদর দফতর সূত্রে এ খবর জানা গেছে। পুলিশ সদর দফতর সূত্রে জানা গেছে, সারাদেশে গত ১ বছরে নানা ধরনের অপরাধে যুক্ত থাকার অভিযোগে শাস্তি দেয়া হয়েছে পুলিশ বাহিনীর সহস্রাধিক সদস্যকে। গুরুতর অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে চাকরিচ্যুত হয়েছে অর্ধশতাধিক পুলিশ। গত ৫ বছরে বিভিন্ন ধরনের শাস্তি দেয়া হয়েছে ৭৮ হাজার পুলিশ সদস্যকে। অপরাধের গুরুত্ব অনুযায়ী ‘গুরু দন্ড ও লঘু দন্ড’-দুই ধরনের শাস্তির বিধান চালু আছে পুলিশ প্রশাসনে। পুলিশ সদস্যদের অপরাধ প্রবণতা কমিয়ে আনতে শাস্তি প্রদানের পাশাপাশি নানা উদ্যোগ নিচ্ছে পুলিশ সদর দফতর। পুলিশ সদস্যদের কেউ কোন ধরনের অপরাধের সঙ্গে যুক্ত হলে তাকে কঠিন শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে বলে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে সতর্ক করে দিয়েছেন পুুলিশ প্রধান আইজিপি ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী। অসৎ পুলিশের বিষয়টি আবার আলোচনার টেবিলে এসেছে উচ্চ আদালতের রিট শুনানিতে। বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহসান ও বিচারপতি কামরুল কাদেরের হাইকোর্ট বেঞ্চ গত ২৬ মার্চ মঙ্গলবার ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, মামলা না নিয়ে থানার ওসিরা কোন্ সাহসে নিজেরাই বিচার বসায়, সমঝোতার চেষ্টা করে? ওসিরা সব জায়গায় রাতে কোর্ট বসায় কিভাবে? মামলা না নিয়ে থানায় পুলিশের বিচার কার্যক্রম নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে হাইকোর্ট। সাতক্ষীরার শ্যামনগর থানায় একটি মামলার ঘটনায় ওসির মধ্যস্থতা করার অভিযোগে করা এক রিট শুনানিতে বলা হয়, গোটা পুলিশ বিভাগের বদনাম হচ্ছে তাতে। আদালত বলেন, থানা পুলিশ সুবিধা মতো মামলা দেয়। এ ছাড়া টাকা ছাড়া জিডিও হয় না। বলে মন্তব্য করে আদালত। আদালত আরও বলে, অনেক পুলিশ কষ্ট করে দিনযাপন করে, আর অনেকে চার থেকে পাঁচটা বাড়িও করে ফেলেন। এক ব্যক্তির থানায় মামলা না নেয়া এবং সাতক্ষীরার শ্যামনগর থানার ওসির কর্মকা- নিয়ে করা এক রিটের শুনানিতে এমন প্রশ্ন রাখে আদালত। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, অসৎ পুলিশ অফিসারদের আইনের আওতায় আনা হচ্ছে। বুধবার সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে বাংলা নববর্ষ উদযাপন উপলক্ষে আইনশৃঙ্খলা সম্পর্কিত সভায় এক প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন তিনি। অসৎ পুলিশ অফিসারদের বিষয়ে আপনারা কোন ব্যবস্থা নেবেন কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, কেউ আইনের উর্ধে নয়। আইন সবার জন্য সমান পুলিশও যদি অন্যায় করে কাউকে ছাড় দেয়া হচ্ছে না, ছাড় দেয়া হবেও না। সবাইকে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হচ্ছে। পুলিশ সদর দফতরের একজন কর্মকর্তা বলেন, পুলিশ বাহিনীতে গত ৫ বছরে ৭৮ হাজার পুলিশ সদস্যকে অপরাধ ছাড়াও বিভিন্ন অভিযোগে সাজা দেয়া হয়েছে। খুন, ধর্ষণ, ছিনতাই, ডাকাতি, ঘুষ, দুর্নীতিসহ নানা ধরনের অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে তাদের শাস্তি হয়েছে। এদের বেশিরভাগেরই শাস্তি হয়েছে কর্তব্যচ্যুতিসহ নানা লঘু অভিযোগে। পুলিশের কোন সদস্য কিংবা কর্মকর্তা ফৌজদারি অপরাধ করলে তাকে বাহিনী থেকে সরিয়ে দেয়া হয়। মামলা দায়ের করে বিচারে সাজা নিশ্চিত করা হয়। ফৌজদারি অপরাধের বাইরে বাহিনীর নিয়মশৃঙ্খলা ভঙ্গ করাসহ বিভিন্ন অনিয়মের কারণে বিভাগীয় মামলা দায়ের করে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তদন্তে অপরাধ প্রমাণিত হলে শাস্তি দেয়া হয়। ফৌজদারি অপরাধের ক্ষেত্রে মামলা দায়ের করে গ্রেফতার ও জেল হাজতে পাঠানো হয় এবং চাকরিচ্যুত করা হয়। পুলিশ সদর দফতর সূত্রে জানা গেছে, পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ করতে পারবেন নাগরিকরা। পুলিশ বাহিনীতে গঠন করা হয়েছে ‘আইজিপি’স কমপ্লেইন সেল’। অসৎ পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ করার জন্য এটা গঠন করেছে পুলিশ সদর দফতর। পুলিশের এ জন্য গঠন করা হয়েছে সেলটি ২৪ ঘণ্টা চালু থাকবে। সিআইডি পুলিশের ফেসবুক পেজে এক পোস্টে এ তথ্য প্রকাশ করা হয়। কতিপয় পুলিশ সদস্যের অপেশাদার আচারণ ও কর্মকা-ের জন্য ম্লান হয়ে যায় সে সমস্ত সাফল্য। শুধু একজন ব্যক্তি বা মুষ্টিমেয় কয়েকজন অপেশাদার পুলিশ সদস্যের জন্য পুরো বাহিনী কলুষিত হতে পারে না। সেই ভাবনা থেকে সে সব অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যকে শাস্তির আওতায় আনতে বাংলাদেশ পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সে ‘আইজিপি’স কমপ্লেইন সেল’ চালু করা হয়েছে। নেয়া হচ্ছে অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তদন্তপূর্বক বিভাগীয় ব্যবস্থা। ইতোমধ্যে এ কমপ্লেইন সেলের মাধ্যমে অনেক অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। এই কমপ্লেইন সেল দিনের ২৪ ঘণ্টাই চালু থাকে।
×