ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

গ্রাহক সচেতনতা আর সরকারের প্রচারই একমাত্র সমাধান

প্রকাশিত: ১০:৩০, ৫ এপ্রিল ২০১৯

গ্রাহক সচেতনতা আর সরকারের প্রচারই একমাত্র সমাধান

রশিদ মামুন ॥ ‘শর্টসার্কিটে’ আগুন লাগলে প্রায়ই সামনে আসে বিষয়টি। বড় বড় আগুন, অনেক প্রাণহানি আর সম্পদ ধ্বংসের পর তদন্ত কমিটি শর্টসার্কিটকে দায়ী করেছে। সাধারণ মানুষও ধরে নেয় বিদ্যুত থেকে আগুন লেগেছে। কিচ্ছু করার নেই। যদিও বেশিরভাগের এই ধারণা সঠিক নয়। তড়িৎ প্রকৌশলীরা বলছেন, গ্রাহকের সচেতনতা আর সরকারের প্রচার শর্টসার্কিট থেকে মুক্তি দিতে পারে। কিন্তু এই দুই জায়গায় ঘাটতি রয়ে গেছে। সম্প্রতি অগ্নিঝুঁকিতে থাকা ভবন চিহ্নিত করা হচ্ছে। কিন্তু রাজধানীসহ সারাদেশের ভবনে শর্টসার্কিটের ঝুঁকি রয়েছে কি না, থাকলে তা কিভাবে দূর করা যায় সে প্রচার কেউ চালাচ্ছেন না। বিদ্যুত যারা বিতরণ করেন গ্রাহককে সচেতন করে সুরক্ষার দায়িত্ব তাদের হলেও এসব বিষয়ের ধার দিয়েও হাঁটছেন না তারা। পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসাইন বলেন, গ্রাহককে সবার আগে সচেতন হতে হবে। তিনি বাড়িতে কি ধরনের বৈদ্যুতিক তার কিংবা যন্ত্রাংশ ব্যবহার করছেন, তা কতটা মানসম্পন্ন খতিয়ে দেখতে হবে। একই সঙ্গে আমাদের যারা বৈদ্যুত সংযোগ দিচ্ছেন তাদেরও দায় রয়েছে। সংযোগ দেয়ার আগে গ্রাহক মানসম্পন্ন জিনিস ব্যবহার করছে কি না তা দেখতে হবে। এছাড়া গ্রাহক যদি অনুমোদিত লোডের বেশি ব্যবহার করেন সেক্ষেত্রেও সুইচ-বৈদ্যুতিক তার গরম হয়ে শর্টসার্কিট হতে পারে। একেবারে সহজে শর্টসার্কিট বোঝাতে গিয়ে ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির (ডিপিডিসি) নির্বাহী প্রকৌশলী মশিউর রহমান জোয়ারদার বলেন, বিদ্যুতের নেগেটিভ এবং পজেটিভ এক হলেই আগুন লাগে। খারাপ মানের তার ও সুইচ ব্যবহারের কারণে অনেকক্ষেত্রে এ ধরনের অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ঘটে থাকে বলে তিনি জানান। এই দুর্ঘটনা থেকে বাঁচার উপায় গ্রাহক নিজে নিজেই তৈরি করতে পারেন। তিনি বলেন, কোন অবস্থাতেই বাজারের মানহীন কম দামের তার, সুইচ বা অন্য কোন বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম ব্যবহার করা যাবে না। শর্টসার্কিটের সব থেকে বড় কারণ এসব। প্রকৌশলীরা বলছেন, কোন কারণে বৈদ্যুতিক তারের মধ্য দিয়ে অতিরিক্ত বিদ্যুত পরিবাহিত হলে তার গরম হয়ে নেগেটিভ-পজেটিভ এক হয়ে স্ফুলিঙ্গের সৃষ্টি হয়। সেখান থেকে আগুন বাসাবাড়ি বা অন্য কোথাও পড়লে আগুন লেগে যেতে পারে। যা কোন কোন ক্ষেত্রে বিধ্বংসী হয়ে ওঠে। প্রকৌশলীরা বলছেন, বৈদ্যুতিক বর্তনিতে নিরাপত্তা ফিউজ, সার্কিট ব্রেকার না থাকলে ওই বর্তনিতে অধিক উত্তাপের ফলে আগুন ধরে যেতে পারে। যা ঘরবাড়ি বা কারখানায় ছড়িয়ে পড়লে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। ঝড়-বৃষ্টির সময় গাছপালার ডালপালা কিংবা উড়ন্ত পাখি বা বাদুর বৈদ্যুতিক তারে জড়িয়ে ফেজ শর্ট বা লাইন শর্ট করতে পারে। যার ফলে প্রচ- শব্দ, ফুলকি এবং অগ্নিকা- ঘটতে পারে। বাসাবাড়িতে নি¤œমানের তার, বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি আর ত্রুটিপূর্ণ সংযোগই হচ্ছে শর্ট সার্কিটের মূল কারণ। শর্টসার্কিট থেকে বাঁচতে গ্রাহককে সবার আগে উদ্যোগ নিতে হবে। প্রকৌশলীদের মতে কোন অবস্থাতেই বাজারের নি¤œমানের তার কেনা যাবে না। নি¤œমানের তারে বিদ্যুত পরিবহনের সময় আগুন লেগে যেতে পারে। একইভাবে নি¤œমানের সুইচেও অফ-অন করার সময় স্ফুলিঙ্গের সৃষ্টি হয়। সাধারণ গ্রাহক অনেক ক্ষেত্রে এসব বিষয়ে যথাযথ জ্ঞানের অভাবে নিজের বিপদ নিজেই ডেকে আনেন। বাজারে গিয়ে কম দামের বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম কিনে তা সংযোজন করেন। তবে বৈদ্যুত সংযোগ দেয়ার সময়ই বিতরণ কোম্পানির এসব বিষয়ে নজরদারি করা দরকার। যার ঘাটতি রয়েছে। জানতে চাইলে ডিপিডিসির নির্বাহী পরিচালক (অপারেশন) প্রকৌশলী এটিএম হারুন অর রশিদ বলেন, আমরা গ্রাহককে সচেতন করে তোলার জন্য একটি গণশুনানির আয়োজন করার বিষয়ে চিন্তা করছি। সেখানে গ্রাহক কিভাবে শর্টসার্কিট থেকে রক্ষা পেতে পারেন তার ওপর বিস্তারিত বিষয় তুলে ধরা হবে। আমরা সেখানে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যদেরও আমন্ত্রণ জানাব যাতে গ্রাহককে তারাও সচেতনতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করতে পারেন। এছাড়া নিজেদের ওয়েবসাইট, ফেসবুকে এ ধরনের প্রচার চালালে গ্রাহক সচেতন হবে বলে মনে করেন তিনি।
×