ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বুড়িগঙ্গা তুরাগ বালু শীতলক্ষ্যা রক্ষা প্রচেষ্টা

৯ এপ্রিল থেকে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে চূড়ান্ত অভিযান

প্রকাশিত: ১০:৩০, ৫ এপ্রিল ২০১৯

৯ এপ্রিল থেকে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে চূড়ান্ত অভিযান

গাফফার খান চৌধুরী ॥ আগামী ৯ এপ্রিল থেকে আবারও বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, বালু ও শীতলক্ষ্যা নদী ঘিরে গড়ে ওঠা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে চূড়ান্ত পর্যায়ের সাঁড়াশি অভিযান শুরু হচ্ছে। একের পর এক অভিযানে অবৈধ স্থাপনা গুঁড়িয়ে দেয়ার কারণে জৌলুস ফিরছে চার নদী এলাকায়। সবচেয়ে বেশি জৌলুস নিয়ে দৃশ্যমান হয়েছে বহুল আলোচিত তুরাগ নদ। নদটি আগের মতো আবার প্রাণ ফিরে পাচ্ছে। অবৈধ স্থাপনার কারণে পানি প্রবাহে যে বাধা ছিল তা কেটে গেছে। বিস্তৃত হয়েছে নদটি। এমন উচ্ছেদে খুশি নদের দুই পাড়ের বাসিন্দারাও। যদিও হাতেগোনা কতিপয় লোক অবৈধ স্থাপনা ভেঙ্গে ফেলার সময় অসাবধানতাবশত তাদের মালিকানাধীন কোন কোন স্থাপনার কিছু অংশ ভাঙ্গা পড়েছে বলে দাবি করেছেন। তারপরেও তারাও নদের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ হওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। স্থানীয়রা ভেঙ্গে দেয়া অবৈধ স্থাপনার মালামাল দ্রুত সরিয়ে ফেলার দাবি জানিয়েছেন। অন্যথায় নদীর পানি প্রবাহ বিঘ্নিত হবে জানিয়েছেন তারা। সরেজমিনে তুরাগ নদের মিরপুর ছোট দিয়াবাড়ি এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, তুরাগ নদের তীর ঘেঁষে গড়ে ওঠা কোন স্থাপনা নেই। পুরো এলাকা শূন্য। চোখ অনেক দূর চলে যায়। কোথাও আর অবৈধ স্থাপনার কারণে দৃষ্টি আটকায় না। অথচ মাত্র এক মাস আগেও ছোট দিয়াবাড়ি ঘাটে দাঁড়ালে দৃষ্টি একহাজার গজও সামনে যেত না। অবৈধ স্থাপনার কারণে তার পরে কি আছে দেখা যেত না। এখন আর সেই অবস্থা নেই। ছোট দিয়াবাড়ি খেয়া ঘাটে দাঁড়িয়ে দক্ষিণ দিকে অনায়াসে গাবতলী ব্রিজ আর উত্তর দিকে চটবাড়ি পর্যন্ত অনায়াসে দেখা যায়। এক সময় তা দেখার ন্যূনতম কোন সুযোগ ছিল না। বিশেষ করে ছোট দিয়াবাড়ি ঘাট এলাকায় এক সময় নদটি ছিল সরু খালের মতো। তার পাড় ঘেঁষে গড়ে উঠেছিল ইট, বালু, সিমেন্ট, কাঠসহ নানা ধরনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। এক সময় এসব দোকানের আড়ালে যে একটি নদ ছিল, তা কারও বোঝার উপায় ছিল না। এখন অবৈধ স্থাপনা গুঁড়িয়ে দেয়ায় নদ স্পষ্ট হয়েছে। স্থানীয়রা বলছিলেন, নদের তীর ঘেঁষে প্রভাবশালীদের বাড়ি, ঘর, দোকানপাট, অবৈধ বালু তোলার উঁচু স্থাপনা, বহুতল ভবনসহ নানা ধরনের স্থায়ী ও অস্থায়ী স্থাপনা ছিল। নানা আপত্তি, বাধার পরেও এসব আর টেকেনি। এসবের এখন আর বালাই নেই। সত্যিকার অর্থে তুরাগ নদ আগের অবস্থানে ফিরে যাচ্ছে। হারানো জৌলস ফিরে পাচ্ছে নদটি। ছোট দিয়াবাড়ি, চটবাড়িসহ আশপাশের এলাকার মানুষজন তুরাগ নদের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, তুরাগ নদের ভেতরে চটবাড়ি এলাকায় বালু তোলার সেই শত মেশিন আর নেই। টানা অভিযানের মুখে সব সরে গেছে। পুরো এলাকার নদের দুই পাড় দখলমুক্ত হয়েছে। নদটির পাড়ের বাসিন্দাদের মধ্যে প্রায় শতভাগই অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। শুধুমাত্র পূর্বদিকে ঢাকার দারুসসালাম থানাধীন ছোট দিয়াবাড়ি এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে মোহাম্মদ শওকত নামের একজন বলছিলেন, সরকারের এমন উদ্যোগে আমরা খুবই খুশি। বহু বছর পরে হলেও তুরাগ নদের পাড়ে গড়ে ওঠা অবৈধ স্থাপনা সরিয়ে দেয়া হয়েছে। এতে করে বর্ষা ও বন্যার সময় তারা বাড়তি সুবিধা পাবেন। কারণ অবৈধ স্থাপনা থাকার কারণে নদের পানির গতিপথ পরিবর্তিত হয়ে তাদের ভিটেবাড়ির জমির দিকে আছড়ে পড়ে। এতে করে জমি ভাঙ্গে। অবৈধ স্থাপনা সরিয়ে দেয়ার কারণে নদের পানি সঠিক গতিপথে যাবে। তাদের বাড়ি ঘর আর ক্ষয়ক্ষতির কবলে পড়বে না। তিনি বলছিলেন, অবৈধ স্থাপনা ভাঙ্গার সময় ভুলবশত তার ব্যক্তি মালিকানাধীন ৩০ শতাংশ জমির ওপর থাকা স্থাপনা ভাঙ্গা পড়েছে। এ ব্যাপারে সরকার বা বিআইডব্লিউটিএ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিলে আমি ব্যক্তিগতভাবে খুবই খুশি হব। নতুবা আমাকে বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতির মধ্যে পড়তে হবে। ২০১৬ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একনেক বৈঠকে ঢাকার চারপাশের নদী ও চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর দূষণ বন্ধ ও নাব্য ফিরিয়ে এনে নদী রক্ষায় টাস্কফোর্স গঠন করে দেন।
×