ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

প্রবৃদ্ধি হবে ৭.৩% বিশ্বব্যাংকের আভাস

পাঁচটি দ্রুত বর্ধনশীল বিশ্ব অর্থনীতির একটি হবে বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ১০:২৯, ৫ এপ্রিল ২০১৯

পাঁচটি দ্রুত বর্ধনশীল বিশ্ব অর্থনীতির একটি হবে বাংলাদেশ

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ চলতি অর্থবছরে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি অর্জনকারী পাঁচ দেশের একটি হবে বাংলাদেশ, এমন পূর্বাভাস দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। সংস্থাটি বলেছে, এ বছর প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৭ দশমিক ৩ শতাংশ। এছাড়া সামষ্টিক অর্থনীতিতে মোটামুটি স্থিতিশীলতা থাকায় শক্তিশালী প্রবৃদ্ধি বিরাজমান থাকবে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি। তবে এ জন্য আর্থিক খাত ও রাজস্ব আহরণ ব্যবস্থাপনায় ব্যাপক সংস্কার আনা জরুরী বলে মনে করে বিশ্বব্যাংক। একই সঙ্গে দেশের অর্থনীতির সবচেয়ে বড় দুর্বলতা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে খেলাপী ঋণকে। আর্থিক খাতে শৃঙ্খলা ফেরাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে পূর্ণ স্বাধীনতা দেয়ার আহ্বান জানিয়েছে বিশ্বব্যাংক। বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট আপডেটে সংস্থাটি এ তথ্য জানিয়েছে। বৃহস্পতিবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ে বাংলাদেশের অর্থনীতির ওপর এ মূল্যায়ন উপস্থাপন করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রতিবেদনটির চুম্বকাংশ উপস্থাপন করেন বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের লিড অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন। উপস্থিত ছিলেন সংস্থার সদ্য নিযুক্ত ভারপ্রাপ্ত আবাসিক প্রতিনিধি রবার্ট জে সাওম ও প্রতিবেদনটি প্রণয়নের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা। বিশ্ব্যাংকের মূল্যায়নে বলা হয়, বর্তমানে একটি শক্তিশালী প্রবৃদ্ধি বিদ্যমান। এ প্রবৃদ্ধিতে শিল্প খাত বড় ভূমিকা রাখছে। কিন্তু ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগের অপর্যাপ্ততা রয়েছে। এছাড়া সামষ্টিক অর্থনীতি মোটামুটি স্থিতিশীল থাকলেও মাত্রাতিরিক্ত খেলাপী ঋণ ক্ষত তৈরি করছে। পাশাপাশি রাজস্ব আয় দুর্বল ও আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতায় সক্ষমতা কম বলে বিশ্ব্যাংকের মূল্যায়নে বলা হয়। এমন পরিস্থিতিতে টেকসই প্রবৃদ্ধির জন্য সংস্কারের ধারাবাহিকতা প্রয়োজন মনে করছে বিশ্বব্যাংক। আর এ সংস্কারের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকারের কিছু বিষয় চিহ্নিত করেছে সংস্থাটি। এগুলো হলোÑ আর্থিক খাত, রাজস্ব ব্যবস্থাপনা, অবকাঠামো, মানব সম্পদ উন্নয়ন ও ব্যবসায়িক বিধিনিয়ম। অর্থনীতির সার্বিক মূল্যায়নে বিশ্বব্যাংকের হিসাবে চলতি অর্থবছর বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ৩ শতাংশ হতে পারে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি। যদিও কিছুদিন আগে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জানিয়েছেন, প্রবৃদ্ধি হবে ৮ দশমিক ১৩ শতাংশ। এই উপাত্ত ব্যবহার করে প্রবৃদ্ধি হিসাব করা সত্ত্বেও সরকারের হিসাবের সঙ্গে পার্থক্য হওয়ার কারণ জানতে চাইলে ড. জাহিদ সাংবাদিকদের জানান, প্রবৃদ্ধিতে যেসব বিষয় ভূমিকা রাখেÑব্যক্তি খাত ও সরকারী বিনিয়োগ, আমদানি-রফতানি, শিল্পোৎপাদন, ভোগের উপাত্ত অর্থনীতির তত্ত্বের ভিত্তিতে বিশ্লেষণ করে তারা এ পরিমাণ প্রবৃদ্ধির প্রাক্কলন দিয়েছেন। বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বলেন, রফতানি, আমদানি, রাজস্ব আদায়, বেসরকারী বিনিয়োগ এবং সরকারী বিনিয়োগসহ অর্থনীতির সূচকগুলো বিশ্লেষণ করে চলতি অর্থবছরে এই প্রবৃদ্ধি হবে বলে আমরা ধারণা করছি। গত অর্থবছর ৭ দশমিক ৮৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি পাওয়ার পর ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেটে ৭ দশমিক ৪ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ঠিক করেছিল সরকার। কিন্তু অর্থবছরের প্রথম আট মাসের (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) তথ্য বিশ্লেষণ করে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো যে প্রাক্কলন করেছে, তাতে অর্থবছর শেষে জিডিপি প্রবৃদ্ধি হতে পারে রেকর্ড ৮ দশমিক ১৩ শতাংশ। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক-এডিবি বুধবার তাদের বার্ষিক প্রতিবেদন এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট আউটলুকে যে পূর্বাভাস দিয়েছে, তা সরকারের প্রাক্কলন থেকে সামান্য কম হলেও বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাসের চেয়ে বেশি। এডিবি মনে করছে, রফতানি ও সরকারী বিনিয়োগে ইতিবাচক ধারা অব্যাহত থাকায় বাংলাদেশ এবার ৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি পেতে পারে। এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে বিশ্বব্যাংকের অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বলেন, এটা তাদের কাছে জানতে চাইতে পারেন, আমাদের হিসাবে আমরা এটা পেয়েছি। বিশ্বব্যাংকের আবাসিক প্রতিনিধি রবার্ট জে সাওম বলেন, এই প্রবৃদ্ধি অনেক, বিশ্বে যে পাঁচ দেশের জিডিপি সবচেয়ে দ্রুত বাড়ছে, তার মধ্যে বাংলাদেশ একটি। প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে বিশ্বে ইথিওপিয়া (৮.৮%), রুয়ান্ডা (৭.৮%), ভুটান (৭.৬%) এবং ভারতের (৭.৫%) জিডিপি প্রবৃদ্ধির হারই কেবল বাংলাদেশের চেয়ে বেশি। জিডিপি প্রবৃদ্ধির এই ইতিবাচক ধারা অব্যাহত রাখতে ব্যাংক খাতের সংস্কার, রাজস্ব আদায় বাড়ানোসহ অর্থনীতির বড় বড় খাতের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় মনোযোগ দেয়ার পরামর্শ দেন বিশ্বব্যাংকের এই প্রতিনিধি। এদিকে প্রতিবেদনে দেশের অর্থনীতির সবচেয়ে দুর্বল দিক হিসেবে চিহ্নিত করা হয় ব্যাংক খাতে মাত্রাতিরিক্ত খেলাপী ঋণকে। বিশ্বব্যাংকের বিশ্লেষণে দেখানো হয়Ñ যদি নন-পারফর্মিং ঋণ (এনপিএল) ৩ শতাংশ বৃদ্ধি পায় তাহলে ৬টি ব্যাংক ন্যূনতম ব্যাংকিং নিয়ম-কানুন অনুসরণে ব্যর্থ হবে। এ হার যদি ৯ শতাংশ হয়, তাহলে ২৯টি ব্যাংক ঝুঁকিতে পড়বে। আর যদি ১৫ শতাংশ হারে এনপিএল বাড়ে, তাহলে ৩৫টি ব্যাংক ব্যাংকিং কার্যক্রমের ন্যূনতম শর্ত পরিপালনে ব্যর্থ হবে। এছাড়া শীর্ষ ১০ ঋণ গ্রহীতা যদি খেলাপীতে পরিণত হয়, তাহলে পুরো আর্থিক খাতে কেমন প্রভাব পড়বে তারও এটি চিত্র তুলে ধরা হয়।
×