ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

চট্টগ্রাম চেম্বারে প্রাক-বাজেট মতবিনিময়ে এনবিআর চেয়ারম্যান

নতুন বাজেট হবে বিনিয়োগ ও ভোক্তাবান্ধব

প্রকাশিত: ০৯:০০, ৫ এপ্রিল ২০১৯

নতুন বাজেট হবে বিনিয়োগ ও ভোক্তাবান্ধব

স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম অফিস ॥ ২০১৯-২০ অর্থবছরে শিল্প, ব্যবসা ও ভোক্তাবান্ধব বাজেট প্রণয়ন করা হবে, যার আকার হতে পারে প্রায় ৫ লাখ কোটি টাকা। বাজেটে গত কয়েক বছরের ধারাবাহিকতায় এবারও শিল্পকে সুবিধা দেয়া হবে। এতে করে মানুষ শিল্পায়নে আগ্রহী হবে, দেশে বিনিয়োগ বাড়বে। অভ্যন্তরীণ সম্পদ হতে ৬৫ শতাংশ প্রয়োজন মেটানো হবে। সরকার সংযোজন শিল্পের চেয়ে দেশীয় উৎপাদন শিল্পের ওপর অনেক বেশি গুরুত্বারোপ করছে। বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি আয়োজিত প্রাক বাজেট মতবিনিময় সভায় কথাগুলো বলেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান ও অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের সিনিয়র সচিব মোঃ মোশারফ হোসেন ভূঁইয়া। মহানগরীর আগ্রাবাদে ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের বঙ্গবন্ধু কনফারেন্স হলে আয়োজিত এ সভায় সভাপতিত্ব করেন চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলম। এ সময় আগামী বাজেটে বিবেচনার জন্য চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী সমাজের পক্ষ থেকে বেশকিছু প্রস্তাব তুলে ধরা হয়। এনবিআর চেয়ারম্যান মোঃ মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া বলেন, স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ের অন্যতম দরিদ্র রাষ্ট্র বাংলাদেশ বর্তমান বিশ্বে উন্নয়নের ক্ষেত্রে মিরাকল হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। এসএমই হিসেবে যাত্রা করে অনেক বৃহৎ শিল্পের জন্ম হয়েছে। উদ্যোক্তারা উন্নত বিশ্বের অনুকরণে মানসম্পন্ন পণ্য উৎপাদন ও রফতানি করছেন, যার ফলে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হচ্ছে। তিনি বলেন, মানবসম্পদ আমাদের সবচেয়ে বড় সম্পদ। অবকাঠামোগত উন্নয়নের বহুমুখী প্রভাবে মানুষের ক্রয়ের ইচ্ছা বৃদ্ধি পাচ্ছে। একটি সুষম বাজেট প্রণয়নের লক্ষ্যে ঘাটতি ৫ শতাংশের বেশি হবে না। অভ্যন্তরীণ সম্পদ হতে ৬৫ শতাংশ প্রয়োজন মেটানো হবে। শিল্প ও ব্যবসার ক্ষেত্রে আধুনিকায়নের ওপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, ব্যবসা পরিচালনার ক্ষেত্রে আধুনিকায়ন আনতে হবে এবং ট্যাক্সের আওতা বাড়াতে হবে। জাতীয় আয়ে শিল্পের অবদান ৩৩ শতাংশ হতে বাড়িয়ে ২০২১ সালের মধ্যে ৩৫ শতাংশে উন্নীত করতে হবে। তিনি সবার জন্য সুষম সুবিধা নিশ্চিত করার কথা জানিয়ে বলেন, নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়নের মাধ্যমে ভ্যাটের হার হ্রাস করা হলেও সকলের সহযোগিতায় সংগ্রহ বৃদ্ধি পাবে। চট্টগ্রাম চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলম করমুক্ত আয় সীমা বৃদ্ধি, লিমিটেড কোম্পানির ক্ষেত্রে করহার এবং সারচার্জ কমানোর প্রস্তাব করেন। বক্তব্যে তিনি বলেন, ব্যবসায় উদ্যোগ লাভজনক বা টেকসই করার লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট নীতিমালা দীর্ঘমেয়াদী অর্থাৎ কমপক্ষে ১০ বছরের জন্য প্রণয়ন করা উচিত। যে সকল শিল্প ও আমদাননিকারক নিয়মনীতি মেনে ব্যবসা সম্পাদন করে তারা যেন দ্রুত ও হয়রানিমুক্ত আমদানি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে পারে সে জন্য দীর্ঘসূত্রতা বন্ধে পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন। চেম্বার সভাপতি বন্দরের প্রত্যেকটি গেটে স্ক্যানার মেশিন স্থাপন, সরাসরি ভোগের জন্য ব্যবহৃত আমদানি পণ্যের ক্ষেত্রে বিএসটিআই সার্টিফিকেশন বাধ্যতামূলক করা, ইস্পাত ও সিমেন্ট খাতে প্রচ্ছন্ন রফতানি সুবিধা পুনর্বহাল করা, অচামড়াজাত ও সিনথেটিক স্যু সেক্টরকে কর অবকাশ সুবিধা প্রদানের লক্ষ্যে বিশেষ এসআরও প্রণয়ন, ব্যবসা-বাণিজ্যের সূচকে বাংলাদেশের অবস্থানের উন্নয়ন এবং ব্যবসা সহজীকরণ, চট্টগ্রাম হতে আমদানির জন্য আইপি ইস্যু পুনর্বহাল, প্লান্ট কোয়ারেন্টাইন বাতিল করা, বৃহত্তর চট্টগ্রামে বাস্তবায়নাধীন মেগা প্রকল্পসমূহ দ্রুত বাস্তবায়নসহ প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা মোতাবেক সকল ব্যাংকের সুদের হার সিঙ্গেল ডিজিটে আনার দাবি জানান। চট্টগ্রাম চেম্বার সিনিয়র সহসভাপতি মোঃ নুরুন নেওয়াজ সেলিম শিল্পায়নের লক্ষ্যে দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ আকর্ষণে মীরসরাই, আনোয়ারা, ফেনীসহ যেসব ইকোনমিক জোন বাস্তবায়নাধীন রয়েছে তা দ্রুতগতিতে সম্পন্ন করে ওয়ান স্টপ সার্ভিস চালু করার ক্ষেত্রে সরকার দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা প্রত্যাশা করেন। চেম্বার সহসভাপতি সৈয়দ জামাল আহমেদ তার বক্তব্যে কোন সেক্টর বা অঞ্চলের প্রতি যাতে বৈষম্যমূলক আচরণ করা না হয় সেদিকে লক্ষ্য রেখে বাজেট প্রণয়ন এবং চট্টগ্রাম-ঢাকা মহাসড়কে পণ্য পরিবহনে ১৩ টন ওজনের বাধ্যবাধকতা প্রত্যাহার করার আহ্বান জানান। মতবিনিময় সভায় বক্তব্য রাখেন চেম্বার পরিচালক অঞ্জন শেখর দাশ, প্রাক্তন পরিচালক মাহফুজুল হক শাহ, বিএসআরএম’র চেয়ারম্যান আলী হুসেইন আকবর আলী, ইস্ট ডেল্টা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর সিকান্দর খান, চট্টগ্রাম ট্যাক্সেস বার এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোঃ জামাল উদ্দিন, চট্টগ্রাম জেলা দোকান মালিক সমিতির মহানগর সভাপতি সালামত আলী, শিপ ব্রেকিং এ্যাসোসিয়েশনের প্রাক্তন পরিচালক মাস্টার আবুল কাশেম, বিজিএপিএমইএ পরিচালক কেএইচ লতিফুর রহমান আজিম, আইসিএমএ’র চট্টগ্রাম সভাপতি মোঃ মোয়াজ্জেম হোসেন, আইসিএবি’র কাউন্সিলর সিদ্ধার্থ বড়ুয়া, রিহ্যাব’র পরিচালক মাহবুব সোবহান জালাল তানভীর, চট্টগ্রাম বন্দর ট্রাক মালিক ও কন্ট্রাক্টর এ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক জহুর আহাম্মদ, আন্তঃজেলা মালামাল পরিবহন সংস্থা ট্রাক ও কভার্ডভ্যান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী জাফর আহমেদ, মোটর পার্টস এ্যান্ড টায়ার-টিউব মার্চেন্ট এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সৈয়দ ওমর ফারুক, চিটাগাং কাগজ ও সেলোফিন ব্যবসায়ী গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক মোঃ বেলাল ও ফলম-ির সাধারণ সম্পাদক মোঃ আলমগীর প্রমুখ। এনবিআর চেয়ারম্যান বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গেও মতবিনিময় করেন। এ সভায় মেট্রোপলিটন চেম্বার সভাপতি খলিলুর রহমান ব্যবসা পরিচালনায় ব্যয় হ্রাস এবং কর্মসংস্থান বৃদ্ধির লক্ষ্যে শিল্পায়নের অনুকূল পদক্ষেপ গ্রহণের অনুরোধ জানান। এ সময় নেতৃবৃন্দ ইকোনমিক জোনগুলোতে দেশী ও বিদেশী বিনিয়োগ আকর্ষণ ও শিল্প স্থাপনে দীর্ঘসূত্রতা যেন না হয় সে ব্যাপারে অনুকূল অবস্থা প্রত্যাশা করেন।
×