ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

ঋণের আড়াইগুণ পরিশোধের পরও এইচবিএফসি পিছু ছাড়ছে না এক মুক্তিযোদ্ধার

প্রকাশিত: ০৯:০০, ৫ এপ্রিল ২০১৯

ঋণের আড়াইগুণ পরিশোধের পরও এইচবিএফসি পিছু ছাড়ছে না এক মুক্তিযোদ্ধার

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ হাউস বিল্ডিং ফাইন্যান্স কর্পোরেশন থেকে ঋণ নিয়ে ফেঁসে গেছেন মুক্তিযোদ্ধা কাজী হেদায়েতুল ইসলাম। ১৪ লাখ ৬৫ হাজার টাকার ঋণ সুদে-আসলে ৩৬ লাখ ৬৬ হাজার টাকা পরিশোধের পরও কর্পোরেশন বলছে তার কাছে আরও ৩৫ লাখ টাকা পাওনা। অথচ দেনা-পাওনার হিসাব চাইতে গেলে গড়িমসি করে। হিসাব চেয়ে লিখিত চিঠি দিলেও ৫ বছরে তার জবাব মেলেনি। এই হলো দেশের একটি রাষ্ট্রীয় আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সেবার নমুনা। ঋণের আড়াইগুণ পরিশোধের পরও এইচবিএফসি পিছু ছাড়ছে না এক গ্রাহকের। জানা যায়, মুক্তিযোদ্ধা কাজী হেদায়েতুল ইসলাম গৃহ নির্মাণ ঋণদান সংস্থার (এইচবিএফসি) কাছ থেকে ১৯৯৭ সালে ১৪ লাখ ৬৫ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছিলেন। ঋণ কেস নং-৪৫৫৬৯, তারিখ ২৮ মে ১৯৯৭। বিশ বছরে পরিশোধযোগ্য এই ঋণ নিয়ে তিনি মিরপুর রূপনগর আবাসিক এলাকায় আড়াই কাঠা জমির ওপর একটি চারতলা ভবন তৈরি করেন। পরবর্তীতে তার আবেদনের প্রেক্ষিতে ঋণ পরিশোধের মেয়াদ পাঁচ বছর বাড়িয়ে ২০২২ সাল পর্যন্ত করা হয়। হেদায়েতুল ইসলাম (৬৮) জানান, ১৪ লাখ ৬৫ হাজার টাকার ঋণ সুদে-আসলে মোট ২৮ লাখ পরিশোধ করার কথা। কিন্তু এইচবিএফসি ইতোমধ্যেই তার কাছ থেকে ৩৬ লাখ ৬৬ হাজার টাকা আদায় করে নিয়েছে এবং আরও ৩৫ লাখ টাকা দিতে হবে বলে মৌখিকভাবে জানিয়েছে। শুধু তাই নয়, টাকা আদায়ের জন্য তারা ঢাকা জেলার আদালতে মামলাও করেছে। মামলা নং ৯৭৪/২০০৫। মামলায় অবশ্য তাদের দাবি ১৮ লাখ টাকার কিছু বেশি। তিনি অভিযোগ করেন, এইচবিএফসির কাছ থেকে কখনই তিনি তার দেনা-পাওনার সঠিক হিসাব লিখিতভাবে পাননি। ২০১৩ সালের ২২ আগস্ট তিনি এইচবিএফসির কাছে চিঠি দিয়ে জানতে চেয়েছিলেন তিনি কত টাকা ঋণ নিয়েছেন, সুদে-আসলে কত টাকা পরিশোধ করেছেন এবং আর কত পরিশোধ করতে হবে। কিন্তু এই চিঠির জবাব আজ পর্যন্ত পাননি। তথ্য কমিশনকেও তাদের নির্ধারিত ফরমে ২০১৭ সালের ১৭ মে ঘটনাটি জানানো হয়। কিন্তু এতেও কাজ হয়নি। হেদায়েতুল ইসলাম বলেন, ‘এইচবিএফসি ১৮ লাখ টাকার দাবিতে আদালতে মামলা করেছে, এখন তারা চায় ৩৫ লাখ টাকা। আমাকে দেনা-পাওনার বিস্তারিত তথ্যও দিচ্ছে না। এদিকে ঋণের সুদ চক্রবৃদ্ধি হারে বেড়েই চলেছে।’ কিন্তু এখন আদালতে এইচবিএফসির দাবিকৃত ১৮ লাখ টাকা দেয়ার আর্থিক ক্ষমতাও তার নেই। মস্তিষ্কে স্ট্রোকের কারণে তিনি দৃষ্টিশক্তি প্রায় সম্পূর্ণ হারিয়েছেন। তার স্ত্রী ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে কয়েক বছর আগে মারা গেছেন। তার নিজের ও স্ত্রীর চিকিৎসার জন্য প্রচুর অর্থ ব্যয় হয়েছে এবং এখনও খরচ হচ্ছে। তার একটি মেয়ে কলেজে পড়াশোনা করছে। এমনি পরিস্থিতিতে তার পক্ষে সংসার চালানোই কঠিন হয়ে পড়েছে। এ প্রসঙ্গে হেদায়েতুল ইসলাম বলেন, ‘এইচবিএফসি আমাকে যা ঋণ দিয়েছিল, তার আড়াই গুণ আদায় করে নিয়েছে। আরও ৩৫ লাখ টাকা চাচ্ছে, মামলা করেছে, বাড়ি নিলামে বিক্রি করবে বলে হুমকি দিচ্ছে। বাড়ি নিলামে দিলে আমাকে রাস্তায় গিয়ে দাঁড়াতে হবে।’ এইচবিএফসির অবশিষ্ট ঋণ ও সুদের টাকা মওকুফের জন্য মুক্তিযোদ্ধা হেদায়েতুল ইসলাম প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করে তার কার্যালয়ে লিখিতভাবে আবেদন করেছেন। আবেদনে তিনি বলেছেন, ‘আমি দৃষ্টিশক্তিহীন, উপার্জন নাই। এইচবিএফসির ঋণের দায়ে আমাকে যেন পথে দাঁড়াতে না হয়, সেজন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সদয় হস্তক্ষেপ কামনা করছি।’ উল্লেখ্য, হেদায়েতুল ইসলাম ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে ২ নম্বর সেক্টরে মেজর হায়দারের অধীনে পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছেন। তার মুক্তিযোদ্ধা সনদ নম্বর ম-১৯৮৩৯৮।
×