ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ব্যাংকের মাধ্যমে টাকা জমা ও গ্রহণ;###;লাগবে জাতীয় পরিচয়পত্র ও ইটিআইএন

জুলাই থেকে অনলাইনে সঞ্চয়পত্র বিক্রি

প্রকাশিত: ০৯:০০, ৫ এপ্রিল ২০১৯

জুলাই থেকে অনলাইনে সঞ্চয়পত্র বিক্রি

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ সঞ্চয়পত্র বিক্রিতে শৃঙ্খলা আনতে রাজধানীতে অনলাইনে বিক্রি শুরু হয়েছে। আগামী ১ জুলাই থেকে সারাদেশে অনলাইনের মাধ্যমে এটি বিক্রি করা হবে। এজন্য ‘জাতীয় সঞ্চয়স্কীম অনলাইন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম’ চালু করা হয়েছে। এই সিস্টেমের মাধ্যমে ডেটাবেজ তৈরি করা হবে। আর সঞ্চয়পত্র কিনতে লাগবে জাতীয় পরিচয়পত্র ও কর শনাক্তকরণ নম্বর (ইটিআইএন)। কালো টাকা ও বেনামে সঞ্চয়পত্র কেনা এবং সীমার অতিরিক্ত বিনিয়োগ ঠেকাতে এই পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। সূত্র জানায়, সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় উচ্চ সুদে বর্তমানে চার ধরনের সঞ্চয় প্রকল্প চালু আছে। একজন ব্যক্তি কত টাকার সঞ্চয়পত্র কিনতে পারবেন সে বিষয়ে নির্দিষ্ট সীমা আছে। কেউ সীমার বেশি সঞ্চয়পত্র কিনলে সঞ্চয়পত্র বিধি ১৯৭৭ (২০০২ সাল পর্যন্ত সংশোধিত) অনুযায়ী অতিরিক্ত বিনিয়োগের ওপর তিনি কোন সুদ পাবেন না। তবে সঞ্চয়পত্রের নির্দিষ্ট ডাটাবেজ না থাকায় অনেকে ভিন্ন-ভিন্ন অফিস থেকে বিপুল অঙ্কের সঞ্চয়পত্র কিনছেন। এতে সুদহারও ব্যাংকের তুলনায় বেশি। বর্তমানে ১১ থেকে ১২ শতাংশ সুদ পাওয়া যায়। একজন গ্রাহকের সর্বোচ্চ ৪৫ লাখ টাকা এবং যুগ্মনামে সর্বোচ্চ ৬০ লাখ টাকা কেনার সুযোগ রয়েছে। এছাড়া সঞ্চয়পত্র কেনার ক্ষেত্রে আয়ের উৎস দেখা হয় না। অনলাইন ডেটাবেজ না থাকায় একই ব্যক্তি একাধিক সঞ্চয়পত্র কিনে থাকে। সংশ্লিষ্টরা জানান, যাচাইয়ের সুযোগ না থাকায় ঘুষ-দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত অর্থ দিয়ে সঞ্চয়পত্র কেনা হচ্ছে। যার ফলে সঞ্চয়পত্র বিক্রি বাড়ছে ব্যাপক হারে। আর এর সুদ পরিশোধ বাবদ বাজেট থেকে সরকারকে গুনতে হচ্ছে মোটা অঙ্কের অর্থ। বাজেট ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা আনতে এই উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বাজেটে ঘাটতি মেটাতে প্রতিবছরই সঞ্চয়পত্র বিক্রির মাধ্যমে অর্থসংগ্রহ করে সরকার। তবে সাম্প্রতিক সময়ে বাজেটের লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় বেশি সঞ্চয়পত্র বিক্রি হচ্ছে। চলতি অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র থেকে আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২৬ হাজার ১৯৭ কোটি টাকা। অর্থবছরের আট মাসে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) নিট বিক্রি হয়েছে ৩৫ হাজার ৬০২ কোটি টাকা। অর্থাৎ ৮ মাসেই লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা বেশি হয়েছে। সঞ্চয়পত্র সুদ পরিশোধে সরকারের গতবছর ব্যয় হয়েছে ৫৫ হাজার কোটি টাকার বেশি। সরকারী চাকরিজীবীদের বেতন-ভাতায় বছরে যে পরিমাণ অর্থ খরচ হয় তার থেকেও এ ব্যয় এক হাজার কোটি টাকা বেশি। তাই শীঘ্রই সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগের লাগাম টানতে চায় সরকার। এ জন্য এ খাতে বিনিয়োগে কড়াকড়ি আরোপ করা হচ্ছে। অনলাইনে সঞ্চয়পত্র বিক্রির নির্দেশ দিয়ে বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক সার্কুলারে বলা হয়েছে, সরকারী ব্যয় ব্যবস্থাপনায় শক্তিশালীকরণ কার্যক্রমের অংশ হিসেবে সঞ্চয়পত্র বিক্রি অনলাইনে করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ঢাকা মহানগরীতে এই লাইন চালু হয়েছে। চলতি এপ্রিলে বিভাগীয় শহরে এবং জুনের মধ্যে সারাদেশে অনলাইন সিস্টেম চালু করা হবে। পহেলা জুলাই থেকে এই সিস্টেমের বাইরে সঞ্চয়পত্রে কোন লেনদেন হবে না। সঞ্চয়পত্র কেনার টাকা ও সুদের টাকা ব্যাংকের মাধ্যমে সরকারী এ্যাকাউন্টে ডেবিট ক্রেডিট করতে হবে। গ্রাহকের মুনাফা ও আসল অর্থ এ্যাকাউন্ট ছাড়া দেয়া যাবে না। বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংকের মতিঝিল অফিসে গিয়ে দেখা যায়, নতুন ফরম এবং ‘ম্যানডেট’ ফরম সংগ্রহ করে পূরণ করতে জমা দিতে হবে। সঞ্চয়পত্র কেনার নতুন নিয়ম জারি করা হয়েছে। সঞ্চয়পত্র কেনার জন্য নির্দিষ্ট আয়ের মানুষের জাতীয় পরিচয়পত্রের ই-টিন সনদ জমা দিতে হবে। ১ লাখ টাকা পর্যন্ত নগদ টাকা দিয়ে সঞ্চয়পত্র কেনা যাবে। টাকার পরিমাণ এর বেশি হলে অবশ্যই ব্যাংকের চেকের মাধ্যমে পরিশোধ করতে হবে। এ জন্য সঞ্চয়কারীর ব্যাংক হিসাব নম্বর, মোবাইল নম্বর দিতে হবে। যাদের সঞ্চয়পত্র আছে তারা ম্যানডেট ফরম পূরণ করে অনলাইন ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে মুনাফা গ্রহণ করতে পারবেন।
×