ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

বার্সিলোনা-ভিয়ারিয়াল ম্যাচে ৮ গোলের রোমাঞ্চ

প্রকাশিত: ১২:২০, ৪ এপ্রিল ২০১৯

বার্সিলোনা-ভিয়ারিয়াল ম্যাচে ৮ গোলের রোমাঞ্চ

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ আবারও জাদু দেখিয়েছেন সুপারস্টার লিওনেল মেসি। ফলে আরেকবার হারের লজ্জা থেকে রেহাই পেয়েছে তার ক্লাব বার্সিলোনা। মঙ্গলবার রাতে স্প্যানিশ লা লিগার এ্যাওয়ে ম্যাচে ভিয়ারিয়ালের মাঠে হারতে হারতে ৪-৪ গোলে ড্র করে ফিরেছে সফরকারী বার্সিলোনা। পরতে পরতে উত্তেজনায় ঠাসা ম্যাচের আগাম পূর্বাভাসে কিন্তু কিছুই বোঝা যায়নি। কথায় আছে সকালের সূর্যটা দেখেই বোঝা যায় দিনটা কেমন যাবে। কিন্তু এই ম্যাচের শুরু আর শেষে কোন মিল খুঁজে পাওয়া যায়নি। ম্যাচটাতে শেষ পর্যন্ত কেউ জেতেনি, জিতেছে আসলে ফুটবল। একেই বোধ হয় বলে আকর্ষণীয় ফুটবল যুদ্ধ। লড়াই, উত্তেজনা, আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণ কী ছিল না ম্যাচে! তবে ম্যাচশেষে হিরো ওই একজনই মেসি। বদলি হিসেবে নেমে তার শেষ সময়ের জাদুতেই পরাজয়ের হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে আসরের বর্তমান চ্যাম্পিয়নরা। একই রাতে আরেক ম্যাচে সহজ জয় পেয়েছে এ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ। জিরোনাকে ২-০ গোলে হারিয়েছে দিয়াগো সিমিওনের দল। ড্র করে পয়েন্ট হারালেও ৩০ ম্যাচে ৭০ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষস্থান ঠিকই ধরে রেখেছে বার্সিলোনা। ৬২ পয়েন্ট নিয়ে তাদের ঠিক পরেই আছে এ্যাটলেটিকো। বুধবার রাতের ম্যাচের আগে ২৯ খেলায় ৫৭ পয়েন্ট নিয়ে তৃতীয় স্থানে আছে রিয়াল মাদ্রিদ। রোমাঞ্চকর ম্যাচ হলেও প্রথম ২০ মিনিট দেখার পর যে কেউ হয়তো ভেবে নিয়েছিল, বার্সিলোনায় পিষ্ট হবে ভিয়ারিয়াল। দুর্দান্ত ফুটবলশৈলী প্রদর্শনী করে ম্যাচের প্রথম ১৬ মিনিটেই ২-০ গোলে এগিয়ে যায় কাতালানরা। ম্যাচের ১২ মিনিটে ম্যালকমের পাস থেকে বল পেয়ে প্রথম গোল করেন ফিলিপ কুটিনহো। মিনিট চারেক পর আবার গোল পায় আর্নেস্টো ভালভার্ডের দল। এবার গোলদাতা ম্যালকম নিজে। শুরুর ঝলকে ২-০ গোলে এগিয়ে যায় অতিথিরা। তবে দুই গোলে পিছিয়ে পড়ে দুর্দান্তভাবে লড়াইয়ে ফিরে স্বাগতিক ভিয়ারিয়াল। দ্বিতীয় গোল খাওয়ার সাত মিনিট পর অর্থাৎ ২৩ মিনিটে প্রথমবারের মতো বার্সার জাল খুঁজে পায় তারা। এ সময় বাঁ পায়ের নিখুঁত শটে গোল করে ব্যবধান ২-১ করেন ভিয়ারিয়ালের নাইজিরিয়ার মিডফিল্ডার স্যামুয়েল চুকউজে। বিরতির পর সম্পূর্ণ ভিন্ন এক ভিয়ারিয়ালকে মাঠে পায় দর্শকরা। দারুণ আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলে বার্সার রক্ষণভাগে ত্রাস সৃষ্টি করে দলটি। ফলাফলও তারা পেয়ে যায় হাতেনাতে। ম্যাচের ৫০ মিনিটে স্যামুয়েলের বাড়ানো বলে অসাধারণ এক গোল করে ক্যামেরুনের ফরোয়ার্ড কার্ল টোকো একাম্বি স্বাগতিকদের ২-২ গোলে সমতায় ফেরান। ম্যাচে যে কোন কিছু ঘটতে পারে এমন আশঙ্কায় ৬১ মিনিটে কুটিনহোর বদলি হিসেবে মেসিকে মাঠে নামান কাতালান কোচ ভালভার্ডে। কিন্তু এক মিনিট পর উল্টো আরও এক গোল খেয়ে প্রথমবারের তো পিছিয়ে পড়ে বার্সা। ভিসেন্টে ইবোরা স্কোর করে ৩-২ গোলে এগিয়ে দেন ভিয়ারিয়ালকে। ম্যাচের ৮০ মিনিটে বার্সা সমর্থকদের বুকে কাঁপন ধরিয়ে দেন কার্লোস বাক্কা। সতীর্থের বাড়ানো বলে গোল করে দলকে ৪-২ ব্যবধানে এগিয়ে দেন কলম্বিয়ার এই ফরোয়ার্ড। এমন অবস্থায় অনেকটা অসহায় হয়ে পড়ে বার্সা। অস্থিরতা পেয়ে বসেছিল মেসিরও। মেজাজ হারিয়ে দেখেন হলুদ কার্ড। মেসির পর হলুদ কার্ড দেখেন সার্জিও রবার্তো। হলুদ কার্ডের দেখা পেয়েছেন ভিদাল-সুয়ারেজরাও। এই ম্যাচে বার্সিলোনার ৭ জন খেলোয়াড় হলুদ কার্ড দেখেছেন। অন্যদিকে ৮৬ মিনিটে লালকার্ড দেখে মাঠ ছাড়েন ভিয়ারিয়ালের গনজালেজ। ভিয়ারিয়াল যখন দশজনের দল তখনই বার্সিলোনার ত্রাতা হিসেবে হাজির হন মেসি। আরেকবার দেখান জাদুকরী শৈলী। ম্যাচের ৯০ মিনিটে ডি বক্সের বাইরে থেকে সরাসরি ফ্রিকিকে গোল করে ব্যবধান ৩-৪ করেন আর্জেন্টাইন অধিনায়ক। এর ফলে ইউরোপের সেরা পাঁচ লীগ মিলিয়ে মেসিই একমাত্র খেলোয়াড় যিনি সরাসরি ফ্রিকিক থেকে এক মৌসুমে ৬টির বেশি গোল করার কৃতিত্ব দেখিয়েছেন সেই ২০০৬-২০০৭ মৌসুম থেকে। এরপর যোগ করা সময়ে আরেকবার দলের ত্রাতা হন মেসি। ৯৩ মিনিটে পাঁচবারের ফিফা সেরা তারকার করা কর্নার থেকে গোল করে স্কোরলাইন ৪-৪ করেন সুয়ারেজ। গোলটি করে বার্সার ফুটবলাররা যেন বিজয়ের উল্লাসে মেতে ওঠেন! অন্যদিকে নিশ্চিত জয় হাতছাড়া করে হতাশায় ন্যুয়ে পড়েন ভিয়ারিয়ালের খেলোয়াড়রা।
×