ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

জামালপুরে দশানী নদ থেকে বালু উত্তোলন ॥ হুমকিতে ফসলি জমি

প্রকাশিত: ১২:০১, ৪ এপ্রিল ২০১৯

জামালপুরে দশানী নদ থেকে বালু উত্তোলন ॥ হুমকিতে ফসলি জমি

নিজস্ব সংবাদদাতা, জামালপুর, ৩ এপ্রিল ॥ বকশীগঞ্জ উপজেলার মেরুরচর ইউনিয়নের মাদারেরচর এলাকায় দশানী নদে ড্রেজার মেশিন দিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের মহোৎসব চলছে। সারাবছর ধরেই এখানে চলছে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন। ফলে তীরবর্তী জনবসতি এলাকা এবং হাজার হাজার একর ফসলি জমি হুমকির মুখে পড়েছে। জানা গেছে, উপজেলার এই দশানী নদের তীরবর্তী প্রায় ১০টি গ্রাম রয়েছে। চরাঞ্চলবেষ্টিত নদী তীরবর্তী মাদারের চর, মাইছেনির চর, কলকিহারা, ফকিরপাড়া, টুপকারচর গ্রাম বর্ষাকালে ব্যাপক হুমকির মুখে থাকে। বালু উত্তোলনের ফলে ভাঙ্গন আতঙ্কে রয়েছে চরাঞ্চলবেষ্টিত এসব গ্রাম। মেরুরচর ইউনিয়নের মাদারেরচর বড় সেতুর দুই পাশে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। সেই বালু দিয়ে মাদারেরচর গ্রামের ছোট ছোট নালা, নিচু এলাকা, পুকুর ও ডোবা ভরাট করা হচ্ছে। এছাড়া পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন এলাকায় ভরাট কাজে এ বালু পৌঁছে দেয়া হচ্ছে। প্রতিদিন গড়ে প্রায় লক্ষাধিক টাকার বালু উত্তোলন করা হয়। ফলে তীরবর্তী কৃষকদের ফসলি জমি, নদী শাসন ব্যবস্থা এবং নদীপাড়ের বাসিন্দারা ক্ষতির মুখে পড়ছেন প্রতিনিয়ত। বালু উত্তোলনকারী চক্রটি বিভিন্ন লোককে ম্যানেজ করে দূরবর্তী এলাকার নিচু ও জলাভূমি ভরাট করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে থাকে। স্থানীয় একটি প্রভাবশালী মহলের যোগসাজশে দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে বালু লুটের মহোৎসব চললেও রহস্যজনক কারণে উপজেলা প্রশাসন তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নিতে পারেনি। স্থানীয় লোকজন জানান, প্রতি বছর নদীর পানি কমার পরপরই প্রভাবশালী একটি চক্র অবৈধভাবে বালু উত্তোলন শুরু করে। চলে বর্ষার আগ পর্যন্ত। কখনও কখনও মোটা পাইপ বসিয়ে নদী থেকে ২-৩ কিলোমিটার দূরেও বালু সরবরাহ করা হয়। বিভিন্ন ব্যক্তির সঙ্গে লাখ লাখ টাকা চুক্তিতে তাদের পুকুর, নিচু এলাকা এবং জলাভূমি ভরাট করার কাজে এই বালু ব্যবহৃত হয়। ময়মনসিংহে ভাঙ্গনের শঙ্কা স্টাফ রিপোর্টার ময়মনসিংহ থেকে জানান, ময়মনসিংহে পুরনো ব্রহ্মপুত্র নদের বিভিন্ন পয়েন্টে ড্রেজার ও বুম মেশিন বসিয়ে বালু উত্তোলনে চলছে হরিলুট কারবার। স্থানীয় প্রশাসনের অনুমতি ছাড়া অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলনের কারণে ভয়াবহ পরিবেশ বিপর্যয়সহ ভাঙ্গনের আশঙ্কা করছে পানি উন্নয়নের বোর্ডের প্রকৌশলীসহ পরিবেশ অধিদফতরের কর্মকর্তারা। অভিযোগ রয়েছে স্থানীয় প্রভাবশালী একটি সিন্ডিকেট ব্রহ্মপুত্র নদে ড্রেজার বসিয়ে বালু উত্তোলন করে মোটা অঙ্কের বাণিজ্য করছে। এর ভাগ যাচ্ছে নানা মহলে। এভাবে বালু উত্তোলন ও বিক্রির কারণে সরকার প্রতিবছর মোটা অঙ্কের রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তাদের দাবি ভ্রাম্যমাণ আদালতের একাধিক অভিযানে ড্রেজার জব্দ করার পরও বন্ধ হচ্ছে না বালু উত্তোলন। স্থানীয় সূত্রগুলো জানায়, এলাকাভিত্তিক কয়েকটি প্রভাবশালী সিন্ডিকেট ব্রহ্মপুত্র নদের বালু উত্তোলন ও বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত। পাটগুদাম ব্রহ্মপুত্র ব্রিজ থেকে শুরু করে কালিবাড়ি খেয়াঘাট, থানার ঘাট, কাচারি খেয়াঘাট, পুলিশ লাইন, জেলখানা খেয়াঘাট ও খাকডহরসহ ময়মনসিংহ সদরের অন্তত ১৫টি পয়েন্টে ড্রেজার ও বুম মেশিন বসিয়ে ব্রহ্মপুত্র নদ থেকে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। পরে এসব বালু ব্রহ্মপুত্র নদের পাড়ে স্তূপ করে বিক্রি করা হচ্ছে। এসব পয়েন্ট থেকে বালু উত্তোলনে স্থানীয় প্রশাসন কিংবা পরিবেশ অধিদফতরের কোন অনুমোদন নেই। ফলে প্রভাবশালী সিন্ডিকেট যেভাবে চাইছে সেভাবেই খেয়াল খুশিমতো অপরিকল্পিতভাবে তুলে নিচ্ছে ব্রহ্মপুত্র নদের বালু। কালিবাড়ি খেয়াঘাটে লিটন মিয়া, মাহবুব আলম, ওলিউল্লাহ, সলিমুল্লাহ রসুল, আনু মোড়লের মালিকাধানীন ড্রেজার ও বেকু দিয়ে বালু তোলা হচ্ছে। পুলিশ লাইন ঘাটে তপন ও ভুট্টো, গলগ-া এলাকার ফারুক ও আউটার স্টেডিয়াম এলাকার মাহফুজ ড্রেজার ও বুম মেশিন বসিয়ে বালু উত্তোলন করছে। ব্রহ্মপুত্র নদ থেকে তোলা বালু পুলিশ লাইন উত্তরা আবাসিক এলাকাসহ এর আশপাশে মজুদের পর তা বিক্রি করা হচ্ছে নানা জায়গায়। পুলিশ লাইন এলাকার স্থানীয় জিল্লুর রহমান ও আউটার স্টেডিয়াম এলাকার মাহফুজ পুলিশ লাইন ঘাটের প্রধান নিয়ন্ত্রক বলে জানায় স্থানীয়রা। পুলিশ লাইন ঘাট থেকে প্রতিদিন গড়ে ৫০-৬০ ট্রাক বালু বেচা বিক্রি হচ্ছে। স্থানীয় প্রশাসনের অনুমোদন না থাকায় এই ঘাট থেকে সরকার কোন রাজস্ব পাচ্ছে না। স্থানীয় সূত্রগুলোর দাবি, বিএনপি জামায়াত জোট সরকার মেয়াদে এসব ঘাট ছিল বিএনপি নেতাদের দখলে। সরকার বদল হলে এসব ঘাট এখন নিয়ন্ত্রণ করছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির স্থানীয় নেতৃবৃন্দ। ময়মনসিংহ সদর উপজেলার নির্বাহী অফিসার শেখ হাফিজুর রহমান জানান, ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে কালিবাড়ি খেয়াঘাট ও খাকডহরসহ বেশ কয়েকটি স্পটে ড্রেজার জব্দ করা হয়েছে। বালু উত্তোলন বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত এই অভিযান চলবে বলেও জানান তিনি।
×