ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

ভুটানের সঙ্গে ট্রানজিট চুক্তি হচ্ছে

প্রকাশিত: ১১:৫৮, ৪ এপ্রিল ২০১৯

ভুটানের সঙ্গে ট্রানজিট চুক্তি হচ্ছে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ এবার ট্রানজিট-ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা পেতে যাচ্ছে ভুটান। তবে সমুদ্রবন্দর ব্যবহারে বাংলাদেশের কাছে মাসুলে ছাড় চায় ভুটান। বাংলাদেশ ও ভুটানের মধ্যকার বাণিজ্য চুক্তি এবং সই হতে যাওয়া স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর (এসওপি) আওতায় এ ট্রানজিট-ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা দিতে যাচ্ছে ঢাকা। চুক্তিতে বাংলাদেশের সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে নৌ ও সড়ক পথে সরাসরি পণ্য পরিবহনের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এ বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উর্ধতন এক কর্মকর্তা বলেন, দু’দেশের মধ্যে ট্রানজিট-ট্রান্সশিপমেন্ট নিয়ে অনেকটা অগ্রগতি হয়েছে। বাংলাদেশে পণ্য পরিবহনের রুটগুলো যাচাই করতে গত ২৫ মার্চ ভুটানের একটি প্রতিনিধি দল এসেছে। তারা রুট যাচাই করছে। তিনি জানান, ‘ভুটানের প্রধানমন্ত্রীর সফরেই চুক্তিটি সই হবে- এমনটি আশা করা হচ্ছে। যদিও বন্দর ব্যবহার নিয়ে বাংলাদেশের কাছে মাসুলে ছাড় চেয়েছে দেশটি। বিষয়টি নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়কে জানানো হয়েছে।’ পররাষ্ট্র ও নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানায়, আগামী ১২ এপ্রিল ভুটানের প্রধানমন্ত্রী লোটে শেরিংয়ের ঢাকা সফরে আশার কথা রয়েছে। আর এর প্রস্তুতি হিসেবে সম্প্রতি ঢাকায় বাংলাদেশ ও ভুটানের মধ্যে পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের দ্বিতীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে আসন্ন সফরকে ঘিরে দুই দেশের সম্ভাব্য সমঝোতা ও চুক্তি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে বিদ্যুত, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, শিক্ষা, পর্যটন, মানবসম্পদ উন্নয়ন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, কৃষি, খাদ্য নিরাপত্তা, পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনা, জলবায়ু ও দু’দেশের মধ্যে মানুষে মানুষে সংযোগ এবং আঞ্চলিক সহযোগিতায় ট্রানজিট ও কানেকটিভিটি, বিশেষ করে বিবিআইনের অগ্রগতি এবং জলবিদ্যুত উৎপাদন নিয়ে বাংলাদেশ, ভারত ও ভুটান- এই তিন দেশের সহযোগিতা বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। বৈঠকে বাংলাদেশের সমুদ্রবন্দর ব্যবহার নিয়ে মাসুলে ছাড় চেয়েছে ভুটান। উল্লেখ্য, এর আগে ভারতকেও ট্রানজিট ও ট্রান্সশিপমেন্টের ক্ষেত্রে শুল্ক ছাড় দিয়েছে বাংলাদেশ। নৌ মন্ত্রণালয়ের সূত্রে জানা গেছে, দেশের অন্যতম ব্যস্ত সমুদ্রবন্দর চট্টগ্রাম। চাহিদার সিংহভাগ আমদানি-রফতানি প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয় এ বন্দর দিয়ে। কিন্তু বন্দরটিতে একটি জাহাজ আসলে তার নোঙর থেকে শুরু করে কন্টেইনার আনলোড করে আবারও জাহাজটিতে কন্টেইনার লোড করা পর্যন্ত যে মাসুলগুলো ধরা হয় তার সিংহভাগই ১৯৮৬ সালে নির্ধারিত মাসুল। ২০১৯ সালেও সেই ৩৩ বছরের পুরনো নির্ধারিত মাসুলই আদায় করা হচ্ছে। আর নির্ধারিত কাঠামোই আগে মংলাবন্দর কর্তৃপক্ষ তাদের মাসুল আদায় করে থাকত। তবে ২০১৩ সালে মংলা বন্দর আলাদা গেজেটের মাধ্যমে নিজস্ব মাসুল নির্ধারণ করেছে। ট্রানজিট-ট্রান্সশিপমেন্ট পণ্যের ক্ষেত্রে নির্ধারিত এ মাসুলই নেয়া হবে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলেন, একে তো মাসুল কম। তার ওপর এখানেও ছাড় খুঁজছে থিম্পু। বিশ্বের প্রতিটি বন্দরে নিয়ম করে প্রতি তিন থেকে পাঁচ বছরে সমুদ্র বন্দরের মাসুলগুলো পুনর্বিবেচনা করা হয়। মাসুল নির্ধারণ করে নিজ দেশের ব্যবসায়ীদের জন্য প্রয়োজনে ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ ছাড় দিয়ে থাকে বন্দরগুলো। আর ব্যবসায়ীদের স্বার্থের কথা চিন্তা করে বাংলাদেশের মূল বন্দরের মাসুল বাড়েনি। তবে যেহেতু বিষয়টি এখন আর শুধু নিজ ব্যবহারকারীদের ওপর থাকছে না, এক্ষেত্রে মাসুল পুনর্বিবেচনা করে প্রয়োজনে বাংলাদেশী ব্যবসায়ীদের ছাড় দিতে পারে সমুদ্রবন্দর কর্তৃপক্ষরা। বন্দর ব্যবহারে মাসুল ছাড়ের অনুরোধের বিষয়টি নিশ্চিত করে নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব আবদুস সামাদ বলেন, বন্দর ব্যবহারের মাসুল মূলত দেশীয় হারই প্রযোজ্য। আলোচনার মাধ্যমে এটি নিষ্পত্তি করা হবে। জানা গেছে, চট্টগ্রাম বন্দরে একটি জাহাজ থেকে মোটা দাগে ৫২ ধরনের মাসুল আদায় করা হয়। এর মধ্যে ৩১ ধরনের মাসুল আদায় হয় ১৯৮৬ সালের গেজেট অনুযায়ী। আর ১৪ ধরনের মাসুল আদায় হয় ১৯৯০ সালের গেজেট অনুযায়ী। এছাড়া ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে চট্টগ্রাম বন্দরে ব্যবহারে যোগ হয় গুদামজাতকরণ, কন্টেইনার এবং নন-সিপিএ যন্ত্রপাতি ব্যবহার মাসুল। এর বাইরে ১৯৮৯, ১৯৯১, ২০০৩ এবং ২০০৪ সালে প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে কিছু সেবার মাসুল বাড়ানো হয়। এ মাসুল অর্থমন্ত্রণালয় এবং নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয় আলোচনার করে গেজেট আকারে প্রকাশ করে। চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহারের জন্য ১৯৮৬ সালে প্রথম বিস্তারিত মাসুল কাঠামো নির্ধারণ করা হয়। তবে ১৯৯০ সালে তার কিছু সেবার মাসুল পুনর্র্নিধারণ করা হয়। ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার মাসুল নিয়ে কাজ করলেও খালি একটি সেবা যোগ করে মাসুল নির্ধারণ করে। বাকি পুরো মাসুল কাঠামোই ১৯৮৬ এবং ১৯৯০ সালের নির্ধারিত মাসুলেই থেকে গেছে। বন্দরে জাহাজের মাসুল নিয়ে সর্বশেষ ২০০৩ সালের ২৯ জানুয়ারি গেজেট প্রকাশ হয়েছে। যদিও ১৯৯০ সালের প্রকাশিত গেজেটের দরই সেখানে ধার্য করা হয়েছে। এ বিষয়ে নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের এক উর্ধতন কর্মকর্তা বলেন, ৩৩ বছর পুরনো মাসুলেই আয় করছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। এটা অকল্পনীয়। বন্দরের বেতন থেকে শুরু করে অনুষঙ্গ খরচ সময়ে সঙ্গে তাল মিলিয়ে বেড়েছে। এতদিন মাসুল পুনর্মূল্যায়ন না হলেও এখন এটির মূল্যায়ন করে হালনাগাদ করা জরুরী হয়ে পড়েছে।
×