ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

ব্রেক্সিট নিয়ে অচলাবস্থা কাটাতে সর্বাত্মক চেষ্টা

করবিনের সমর্থন চান মে

প্রকাশিত: ১১:৫৪, ৪ এপ্রিল ২০১৯

করবিনের সমর্থন চান মে

ব্রেক্সিট নিয়ে চলা অচলাবস্থা কাটাতে সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) থেকে বেরিয়ে যেতে তিনি লেবার পার্টির নেতা জেরেমি করবিনের সমর্থন চেয়েছেন। এজন্য লেবার পার্টির নেতা করবিনের সঙ্গে বুধবার তার সাক্ষাত করার কথা রয়েছে। ডাউনিং স্ট্রীটের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে নিশ্চিত করেছেন ১২ এপ্রিলের মধ্যে ব্রেক্সিট বিষয়ে আরও কিছু সময় চাইবে যুক্তরাজ্য। এ সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সমালোচনাকারী টোরি নেতারা। সরকারের লোকজনের বিশ্বাস, ভবিষ্যত কাস্টমস বিষয়ে দুটি বড় দলের অবস্থানে খুব বেশি পার্থক্য নেই। তাই তারা নতুন একটি চুক্তির ভিত্তি তৈরি করতে পারে। খবর বিবিসি ও গার্ডিয়ানের। ১০ নং ডাউনিং স্ট্রীটের সহযোগীরা জানান, গঠনমূলক চিন্তা থেকে প্রধানমন্ত্রী আলোচনায় অগ্রসর হবেন। কিন্তু এর কিছুক্ষণ পরেই অন্য সূত্র জানায়, এই আলোচনা ব্রেক্সিট নিয়ে পার্লামেন্টে আলোচ্যসূচীর নিয়ন্ত্রণ নেয়ার ভিত্তি হবে। এদিকে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনায় রাজি হয়েছেন লেবার নেতা জেরেমি করবিন। এই আলোচনা বুধবারই হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। করবিন বলেন, গত নির্বাচনে জনগণ লেবার পার্টিকে যে সমর্থন দিয়েছেন সেটার প্রতিনিধিত্ব করতে দায়িত্বের স্বীকৃতি দিয়েছেন তিনি। করবিনের সঙ্গে বৈঠক করার ঘোষণার আগে প্রধানমন্ত্রী তার মন্ত্রিসভার সদস্যদের সঙ্গে দীর্ঘ সাত ঘণ্টা বৈঠক করেন। বৈঠকের সময় মন্ত্রিদের মোবাইল ফোন নিয়ে ঢুকতে দেয়া হয়নি, যাতে প্রধানমন্ত্রীর বিবৃতির আগেই সংবাদমাধ্যম গোপন বিষয়গুলো জেনে না যায়। ব্রেক্সিটপন্থী মন্ত্রীরা বলেন, প্রধানমন্ত্রী যদি একক কাস্টম ইউনিয়ন নিয়ে প্রভাবিত করার চেষ্টা করেন, তবে তারা পদত্যাগ করবেন। প্রধানমন্ত্রী মে তার বিবৃতিতে বলেন, ব্রেক্সিট নিয়ে অচলাবস্থা কাটাতে আমি আজ পদক্ষেপ নিচ্ছি। তিনি বলেন, আমি বিরোধীদলীয় নেতার সঙ্গে আলোচনার প্রস্তাব দিচ্ছি এবং একটি পরিকল্পনায় সম্মত হওয়ার চেষ্টা করছি- যেটাতে আমরা উভয়ই যুক্ত থাকব- এটা নিশ্চিত করতে যে আমরা ইউরোপীয় ইউনিয়ন ত্যাগ করছি এবং চুক্তির ক্ষেত্রেও আমরা সেটাই করব। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এমন একটি যৌথ পরিকল্পনায় রাজি হওয়া যাতে তিনি এবং করবিন তাতে সমর্থন করতে পারেন। আর যদি সেটা সম্ভব না হয়, তবে ইইউর সঙ্গে ভবিষ্যত সম্পর্ক নিয়ে হাউস অব কমন্সে ভোটের জন্য কয়েকটি বিকল্প প্রস্তাব পেশ করা হবে। ইনডিপেনডেন্টের ধারণা, করবিনের সঙ্গে যদি প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মের আলোচনা ব্যর্থ হয়, তবে বিকল্প প্রস্তাবগুলোর মধ্যে প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে তার কয়েকবার পরাজিত নিজস্ব পরিকল্পনা ফের কমন্সে পেশ করতে পারেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, কাজের জন্য তিনি কমন্সের সিদ্ধান্ত মেনে নেবেন এবং করবিনকেও সেটা মানতে হবে। জবাবে লেবার নেতা বলেন, আমরা স্বীকার করছি যে, মে একটি প্রস্তাব দিয়েছেন। ইইউ’র সঙ্গে ভবিষ্যত সম্পর্ক নিয়ে সরকারের পরিকল্পনার মধ্যে অন্যতম বহুমুখী কাস্টম ইউনিয়ন, যেখানে করবিনের লক্ষ্য হচ্ছে একক কাস্টম ইউনিয়ন যেখানে ইইউর সঙ্গে বর্তমানের চেয়ে আরও বেশি সুবিধা দেবে ব্রিটেনকে। এদিকে কনজারভেটিভ পার্টির মধ্যে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। কারণ মন্ত্রিসভাকে ‘কাপুরুষ ও স্বার্থপর’ অভিহিত করে সোমবার এক এমপি পদত্যাগ করেছেন। তবে প্রধানমন্ত্রীর প্রস্তাব এবং লেবারের সঙ্গে চুক্তি ব্যাপক ভাঙ্গনের মুখে ফেলতে পারে টোরি এমপিদের। ব্রেক্সিটপন্থী নেতা বরিস জনসন বলেন, এটা খুবই দুঃখজনক যে, ব্রেক্সিটের চূড়ান্ত পরিণতির জন্য জেরেমি করবিন ও লেবার পার্টির ওপর আস্থা রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে মন্ত্রিসভা। তিনি বলেন, এখন মনে হচ্ছে, ব্রিটেনের বাণিজ্য নীতি এবং আইন প্রণয়নকারী মুখ্য শক্তিগুলোকে ব্রাসেলসের কাছে হস্তান্তর করা হবে- ব্রিটেনের পক্ষে কথা বলার কেউ থাকবে না। তিনি বলেন, ব্রেক্সিট আরও বিলম্বের কারণে যদি ইউরোপীয় নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে ব্রিটেন বাধ্য হয়, তবে সেটা হবে খুবই অযৌক্তিক বিষয়। তিনি আরও বলেন, আমি কোন অবস্থাতেই একক কাস্টম ইউনিয়নের পক্ষের চুক্তিতে ভোট দিতে পারি না। কারণ আমি বিশ্বাস করি গণভোটে সেটা নেই। প্রধানমন্ত্রী মে যখন বিবৃতি দেন তখন ব্রেক্সিটের সমর্থন করা ইউরোপিয়ান রিসার্চ গ্রুপের (ইআরজি) সদস্যরা বৈঠকে বসেছিলেন। তারা টেলিভিশনে মেকে দেখেন। এদের একজন বলেন, এটা ঠিক হয়নি। ইআরজির প্রধান জ্যাকব রিস-মগ ‘মার্কসিস্ট হিসেবে পরিচিত’ একজনের সঙ্গে কাজ করার জন্য টেরেসা মেকে আক্রমণাত্মক কথা বলেন।
×