ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বর্ণাঢ্য আয়োজনে চলচ্চিত্র দিবস উদ্যাপন

প্রকাশিত: ১১:৩০, ৪ এপ্রিল ২০১৯

বর্ণাঢ্য আয়োজনে চলচ্চিত্র দিবস উদ্যাপন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বর্ণাঢ্য আয়োজনের মধ্য দিয়ে অষ্টমবারের মতো জাতীয় চলচ্চিত্র দিবস পালিত। দেশের চলচ্চিত্র অঙ্গনের সূতিকাগার বিএফডিসি ও রাজধানীর সেগুনবাগিচায় শিল্পকলা একাডেমি বুধবার দিনব্যাপী ছিল উৎসবমুখর। চলচ্চিত্রপ্রেমীদের পদচারণা ও বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে দিনটিকে উদ্যাপন করা হয়। ‘চলচ্চিত্র বাঁচলে সংস্কৃতি বাঁচবে’ প্রতিপাদ্যে বিএফডিসিতে দুই দিনব্যাপী জাতীয় চলচ্চিত্র দিবসের আয়োজন করেছে যৌথভাবে তথ্য মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন কর্পোরেশন ও জাতীয় চলচ্চিত্র দিবস উদযাপন কমিটি। এদিন সকাল থেকেই চলচ্চিত্রের বেশকিছু শিল্পী, কলাকুশলীতে মুখর হয়ে উঠে এফডিসির আঙ্গিনা। প্রধান গেট থেকে শুরু করে ভেতরের নানা জায়গায় হারানো দিনের ব্যবসা সফল চলচ্চিত্রের নানান পোস্টার এফডিসিজুড়ে ভিন্নরকম রং ছড়ায়। সকালে উৎসবের উদ্বোধন করেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। এফডিসির ঝর্ণা স্পটের সামনে বেলুন ও পায়রা উড়ানোর মধ্য দিয়ে চলচ্চিত্র দিবস উদ্যাপন আয়োজনের পর্দা ওঠে। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন চলচ্চিত্র দিবস উদ্যাপন কমিটির আহ্বায়ক সৈয়দ হাসান ইমাম, জনপ্রিয় অভিনেতা ড. ইনামুল হক, চিত্রনায়ক আলমগীর, ইলিয়াস কাঞ্চন, শিল্পী সমিতির সভাপতি অভিনেতা মিশা সওদাগর, চিত্রনায়িকা অঞ্জনা, রোজিনা, শাহনূর, তথ্যসচিব আবদুল মালেক, এফডিসির ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক লক্ষণ চন্দ্র দেবনাথ, পরিচালক সমিতির সভাপতি মুশফিকুর রহমান গুলজার, শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক জায়েদ খান, অভিনেতা সুব্রত, স¤্রাট, চিত্রনায়িকা আইরিন প্রমুখ। উদ্বোধনের পর এফডিসির প্রশাসনিক ভবনের পাশে মূল মঞ্চে এক আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তথ্যমন্ত্রী বলেন, চলচ্চিত্রের গুরুত্ব উপলব্ধি করে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৫৭ সালের ৩ এপ্রিল শিল্প ও বাণিজ্যমন্ত্রী হিসেবে তৎকালীন প্রাদেশিক পরিষদে বিল উত্থাপনের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠা করেন চলচ্চিত্র উন্নয়ন কর্পোরেশন। তিনি সে সময় যদি এটা প্রতিষ্ঠা না করতেন তাহলে আমাদের দেশের চলচ্চিত্র নির্মাণ শুরু হত না। আমাদের দেশে সেসময় যেভাবে কলকাতার ছবি, হিন্দী ছবি এবং পশ্চিম পাকিস্তানের উর্দু ছবির বাজার তৈরি হয়েছিল সেটির ধারাবাহিকতায় আমাদের দেশে আর চলচ্চিত্র শিল্প গড়ে উঠত না। এজন্য বঙ্গবন্ধুর প্রতি আজকের চলচ্চিত্র দিবসের মতো বিশেষ দিনে আমি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। এফডিসি প্রতিষ্ঠার পর আমাদের দেশে বহু কালজয়ী ছবি নির্মাণ হয়েছে। এমনকি স্বাধীনতার আগে ও স্বাধীনতার পরে অসংখ্য ভাল মানের ছবি নির্মাণ হয়েছিল। যেগুলো পরবর্তীতে দেশ গঠন করার ক্ষেত্রে ভূমিকা পালন করেছে। তিনি আরও বলেন, একটি চলচ্চিত্র সমাজের ক্যানভাস পরিবর্তন করে দিতে পারে। একটি চলচ্চিত্র মানুষকে কাঁদায়, মানুষকে হাসায়। সমগ্র বিশ্বে চলচ্চিত্র শিল্পের কোন বিকল্প নেই। চলচ্চিত্রশিল্পের বিকল্প টেলিভিশন নয়, নেটফ্লিক্সে সিনেমা দেখা নয়, ইউটিউবে কোন সিনেমা দেখা নয়। চলচ্চিত্রের বিকল্প চলচ্চিত্র অন্য কিছু হতে পারে না। এক সময় চলচ্চিত্র শিল্পের স্বর্ণযুগ ছিল। মঞ্চে আজ যারা বসে আছেন তারা সকলে স্বর্ণযুগের শিল্পী। তখন প্রতি সপ্তাহে দুটি করেও ছবি মুক্তি পেত। বছরে ১২০টির বেশি সিনেমা মুক্তি পেত, যা এখন নেই। কেন নেই? সেটির অনেক উত্তর আছে। আমি মনে করি, আমাদের সবার সম্মিলিত দায়বদ্ধতা রয়েছে। সম্মিলিত দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে চলচ্চিত্রকে আবার সেই স্বর্ণযুগে নিয়ে যাবার জন্য, মানুষকে সুস্থ বিনোদন দেয়ার জন্য, মানুষকে হলমুখী করার জন্য সবাইকে প্রচেষ্টা চালাতে হবে। রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী এরই মধ্যে বেশকিছু উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। এই যে এফডিসি চত্বর ১৯৫৭ সালে প্রতিষ্ঠিত। আধুনিক ঢাকা শহরের সঙ্গে এই চত্বরের মিল একটু কম। সেজন্য আমরা এফডিসিকে আধুনিকায়নের পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। ইতোমধ্যে ৫৩ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়েছে। আধুনিক যন্ত্রপাতি ও লেন্স কেনার জন্য যা ইতোমধ্যে করাও হয়েছে। এছাড়া আমরা এফডিসিতে ৩২২ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি নতুন ভবন নির্মাণ করতে যাচ্ছি। যেখানে শুধু এফডিসির অফিসগুলোই থাকবে তা নয়, সেখানে আধুনিক সিনেমা হল থাকবে, সেখানে চলচ্চিত্রসংশ্লিষ্ট নানা অফিস থাকবে। এই ভবনটি নির্মাণ হলে এফডিসি লাভবান হবে এবং এটি বাংলাদেশের চলচ্চিত্রকে বিকাশের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে আমি বিশ্বাস করি। তথ্যমন্ত্রীর সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে চলচ্চিত্রের সর্বজন শ্রদ্ধেয় মানুষ সৈয়দ হাসান ইমামও সকল বিভেদ ভুলে চলচ্চিত্র দিবসকে উৎসব মনে করে এতে যোগ দেয়ার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, বিভেদ করলে কোনদিন শেষ হবে না। নিজের মর্যাদা ও যোগ্যতাকে ভাল কিছুর জন্য কাজে লাগাতে হবে। চলচ্চিত্র দিবসের অনুষ্ঠান অভিনয়শিল্পীদের উপস্থিতি কম দেখে ক্ষোভ প্রকাশ করেন নায়ক আলমগীর। তিনি বলেন, এই চলচ্চিত্র যাদের বড় তারকা বানিয়েছে তারা আজ বেশিরভাগই আসেননি। সকল অভিনয়শিল্পীদের কার্ড দেয়া হয়েছে, উপস্থিত হওয়ার জন্য তাগাদা দেয়া হয়েছে। কিন্তু আসেননি। তারা দূরে থেকে বড় বড় কথা বলেন। নিজের স্বার্থ ছাড়া সম্মিলিত ভাবনা ভাবতে চান না। এটা দুঃখজনক। ইলয়াস কাঞ্চন তার বক্তব্যে বলেন, পশ্চিমবঙ্গের চলচ্চিত্র সেখানকার মুখ্যমন্ত্রীর চেষ্টায় অনেক উন্নত হয়েছে। আমরা চাইলে প্রধানমন্ত্রীর সহযোগিতায় ভাল একটা পর্যায়ে যেতে পারি। কিন্তু আন্তরিকতা আমাদের সবার মধ্যে থাকতে হবে। চলচ্চিত্রের জন্য দরদ থাকতে হবে। এর আগে তথ্যমন্ত্রী বিএফডিসিতে স্থাপিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন এবং এফডিসি চত্বরে এক শোভাযাত্রায় অংশ নেন। বিকেলে দেড় ঘণ্টা ব্যাপ্তির একটি সেমিনার হয় আট নম্বর ফ্লোরে। ‘বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের বর্তমান অবস্থা এবং উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক এ সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন। চলচ্চিত্র ও সঙ্গীতশিল্পীদের অংশগ্রহণে আজ অনুষ্ঠিত হবে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এই অনুষ্ঠানে নাচ ও গানে পারফর্ম করেন শোবিজ তারকারা। পুরো আয়োজনের টাইটেল স্পন্সর করেছে বেক্সিমকো। জাতীয় চলচ্চিত্র দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির উদ্যোগে নাট্যকলা ও চলচ্চিত্র বিভাগের ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিসহ ৬৪ জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে শুরু হয়েছে তিন দিনব্যাপী নানা আয়োজন। এর মধ্যে রয়েছে চলচ্চিত্র প্রদর্শনী, চলচ্চিত্র বিষয়ক আলোচনা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, সেমিনার, শিশু চলচ্চিত্র নির্মাণ কর্মশালা, বিষয় ভিত্তিক প্যানেল বৈঠক, তরুণ চলচ্চিত্র নির্মাতাদের নিয়ে মতবিনিময় সভা, চলচ্চিত্রের আড্ডা ও প্রীতি সম্মিলনী। রাজধানীর সেগুনবাগিচায় শিল্পকলা একাডেমির চিত্রশালা মিলনায়তনে বুধবার সন্ধ্যায় উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম। একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব ড. মোঃ আবু হেনা মোস্তফা কামাল এনডিসি, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব সৈয়দ হাসান ইমাম, চলচ্চিত্র নির্মাতা সৈয়দ সালাহ্উদ্দিন জাকী ও বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির সভাপতি মুশফিকুর রহমান গুলজার। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন একাডেমির নাট্যকলা ও চলচ্চিত্র বিভাগের পরিচালক মোঃ বদরুল আনম ভূঁইয়া। উদ্বোধনী আলোচনা শেষে পরিবেশিত হয় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। জাতীয় নাট্যশালার সেমিনার কক্ষে ফেডারেশন অব ফিল্ম সোসাইটিজ অব বাংলাদেশের বাস্তবায়নে আজ সকাল ১০টায় রয়েছে ‘মুক্ত চলচ্চিত্র, চলচ্চিত্রের মুক্তি’ বিষয়ক সেমিনার, বিকেল ৪টায় জাতীয় চিত্রশালা মিলনায়তনে স্বল্পদৈর্ঘ্য কাহিনী ও প্রামাণ্য চলচ্চিত্র প্রদর্শনী, সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় সাদেক খান পরিচালিত চলচ্চিত্র ‘নদী ও নারী’ এবং সন্ধ্যা ৭টায় চলচ্চিত্রের আড্ডা অনুষ্ঠিত হবে। আগামীকাল সকাল ১০টায় জাতীয় নাট্যশালার সেমিনার কক্ষে চিলড্রেন্স ফিল্ম সোসাইটি বাংলাদেশের বাস্তবায়নে শিশু চলচ্চিত্র নির্মাণ কর্মশালা, বিকেল ৪টায় বিষয়ভিত্তিক প্যানেল বৈঠক, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের টেলিভিশন এন্ড ফিল্ম বিভাগের বাস্তবায়নে ‘বাংলাদেশের চলচ্চিত্র শিক্ষা, বিকেল ৫টায় বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সমালোচক পর্ষদের বাস্তবায়নে ‘সিনেমা হল বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণ ও উত্তরণ, সন্ধ্যা ৬টায় বাংলাদেশ প্রামাণ্যচিত্র পর্ষদের বাস্তবায়নে ‘আগামীর সিনেমা : প্রেক্ষিত বাংলাদেশ’ শীর্ষক প্যানেল বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।
×