ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

পশ্চিমবঙ্গে নির্বাচনী মহারণে মুখোমুখি মোদি-মমতা

প্রকাশিত: ১১:২৮, ৪ এপ্রিল ২০১৯

পশ্চিমবঙ্গে নির্বাচনী মহারণে মুখোমুখি মোদি-মমতা

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ পশ্চিমবঙ্গের মাটিতে লোকসভা নির্বাচনী মহারণে বুধবার মাঠে নামলেন দু’পক্ষের দুই মহারথী। পশ্চিমবঙ্গে একই সময়ে পিঠাপিঠি সভা করলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং বিরোধী জোটের কা-ারি পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী ও তৃণমূল কংগ্রেস সুপ্রিমো মমতা ব্যানার্জী। খবর আনন্দবাজারের। মোদির বক্তব্য ॥ সফরসূচী অনুযায়ী পশ্চিমবঙ্গের প্রথম নির্বাচনী প্রচারে শিলিগুড়িতে চালালেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। আর শুরুতেই আশানুরূপভাবে তার আক্রমণের নিশানায় ছিলেন পশ্চিমবাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী। জনসভার শুরুতেই উপস্থিত কর্মী-সমর্থকদের উদ্দেশে মোদি বলেন, দিদির (মমতা) নৌকা যে ডুবে গেছে শিলিগুড়ির জনসভার বিপুল সংখ্যক মানুষই তার প্রমাণ। বক্তব্য যত গড়িয়েছে তত ঝাঁজ বেড়েছে মোদির বক্তব্যে। তিনি বলেন, ‘দিদি উন্নয়নের স্পিডব্রেকার। গরিবদের কথা ভাবেন না দিদি। সারাদেশে প্রবলগতিতে কাজ হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গে সেই গতিতে উন্নয়নই হয়নি।’ তিনি অভিযোগ করেন, পশ্চিমবঙ্গে গরিবদের নিয়ে রাজনীতি করে তৃণমূল। এ প্রসঙ্গে তিনি মনে করিয়ে দেন পশ্চিমবঙ্গের গরিব মানুষদের অর্থ চিটফান্ড কেলেঙ্কারিতে লোপাট হয়েছে। বুধবার শিলিগুড়ির সমাবেশে প্রথমে বাংলায় বক্তব্য শুরু করেন মোদি। এর আগে তিনি দুপুর ১টায় বাগডোগরা বিমানবন্দরে নামেন। সেখান থেকে রওয়ানা দেন শিলিগুড়ির কাওয়াখালি প্রাঙ্গণের উদ্দেশে। তাকে ঘিরে বিজেপি কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে চরম উন্মাদনা লক্ষ্য করা যায়। শিলিগুড়ির পর কলকাতায় স্থানীয় সময় ৪টায় জনসভা করেন নরেন্দ্র মোদি। মমতা ব্যানার্জীর বক্তব্য ॥ একইদিনে প্রথমে শিলিগুড়ি তারপর কলকাতার ব্রিগেড। পরপর দুটি জনসভায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জীর বিরুদ্ধে একের পর এক তোপ দেগেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এরপর দিনহাটার জনসভায় পাল্টা বক্তব্য রাখেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী। নির্বাচনী নির্ঘণ্ট ঘোষণার পর দুই নেতা-নেত্রীই একই দিনে নির্বাচনী প্রচার শুরু করেন পশ্চিমবঙ্গে। রাজ্যের বিকাশে স্পিডব্রেকার হয়ে বাধার সৃষ্টি করছেন শিলিগুড়ির কাওয়াখালিতে মমতার বিরুদ্ধে এই অভিযোগ করেছেন মোদি। পাশাপাশি বালাকোটে ভারতীয় বায়ুসেনার বিমান অভিযান নিয়েও তৃণমূল নেত্রীর বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ তুলেছেন তিনি। এরপর ব্রিগেডের সভাতেও মমতা ব্যানার্জীর বিরুদ্ধে একের পর তোপ দাগেন নরেন্দ্র মোদি। মোদির এই অভিযোগের জবাব দিতে মমতা বেছে নেন কুচবিহারের দিনহাটার জনসভাকে। দুপুরেই উত্তরবঙ্গের পথে রওনা হওয়ার সময় তিনি জানিয়ে দিয়েছিলেন, সমস্ত অভিযোগের জবাব দেয়ার জন্য তিনি বেছে নেবেন দিনহাটাকেই। সেই মতো শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মোদিই ছিলেন তার আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু। নরেন্দ্র মোদিকে এক্সপায়ার্ড প্রাইম মিনিস্টার বলে কটাক্ষ করেন তিনি। মমতা বলেন, ‘প্রচারে ভারতীয় সেনা নিয়ে কোন কথা বলা যাবে না, জানিয়েছিল নির্বাচন কমিশন। কিন্তু কী করছেন উনি? দেশটাকে জবরদস্তি করে দখল করে নেয়ার চেষ্টা চলছে। আমি বন্দুকের সামনে দাঁড়িয়ে লড়াই করতে প্রস্তুত আছি। বাংলায় এনআরসি চালু করতে দেব না। অসমে ২৩ লাখ মুসলিম বাঙালীদের নাম বাদ দেয়া হয়েছে। হিন্দুদেরও বাদ দেয়া হচ্ছে। কৃষকদের টাকা, শস্যবীমার টাকা, খাজনা মওকুফের টাকা, সব আমরা দিই। পরিবারের লোকের কাছে জমি হস্তান্তর করতে গেলে মিউটেশন ফি তুলে দিয়েছি।’ মমতা অরও বলেন, ক্ষমতা থাকলে টিভি বিতর্কে আসুন। অথবা প্রকাশ্যে আসুন। আমি আপনার সঙ্গে মুখোমুখি বিতর্কে নামব। আমি এখন মোদি বাবুকে এক্সপায়ারি বাবু বলে ডাকব। উনি আর প্রধানমন্ত্রী নন। উনি বলেছেন, আমরা উন্নয়ন করিনি। গরিবদের জন্য কাজ করিনি। কৈফিয়ত দিন। আমি তর্কের চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছি। উনি গায়ের জোরে মিথ্যা বলছেন। উনি এক্সপায়ারি প্রাইম মিনিস্টার। বুধবারের সভাগুলো ভারতের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির নিরিখে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এদিন গোটা ভারতের রাজনৈতিক মহল, মিডিয়া থেকে সাধারণ মানুষের নজর ছিল পশ্চিমবঙ্গের দিকে। উত্তরবঙ্গের শিলিগুড়ি ও কলকাতার ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ডে মাত্র দুই ঘণ্টার ব্যবধানে পরপর দুটি সভা করেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। একই সময়ে শিলিগুড়ির কিছুটা দূরে উত্তরবঙ্গের কুচবিহার জেলার দিনহাটায় সভা করেন মমতা ব্যানার্জী।
×