ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

উত্তরার ভবন উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী

দ্রুত হাতিরঝিলের বিজিএমইএ ভবন ভাঙতে হবে

প্রকাশিত: ১১:২৭, ৪ এপ্রিল ২০১৯

দ্রুত হাতিরঝিলের বিজিএমইএ ভবন ভাঙতে হবে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ বিজিএমইএর নতুন ভবন উদ্বোধন করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন আদালতের রায় বাস্তবায়ন করা এখন একান্ত প্রয়োজন। এ কারণে রায় মেনে যত দ্রুত সম্ভব হাতিরঝিলের ওপর নির্মিত বিজিএমইএ ভবনটি ভেঙ্গে ফেলতে হবে। তিনি বলেন, হাতিরঝিলে তাকাতে গেলে বিজিএমইএ ভবনটিকে একটি বাধার মতো মনে হয়। এ জায়গাটি চমৎকারভাবে উন্নয়ন করেছি। যাতে এটি সুন্দর হয়, পাশাপাশি এই জলাধারকে যেন ধরে রেখে দৃষ্টিনন্দন করা যায়। সেটা করতে গিয়ে অনেক মামলা মোকাবেলা করতে হয়েছে। তিনি বলেন, বিজিএমইএ ভবন নির্মাণের জন্য বিশাল একটা জায়গা দিয়েছি। সেখানে এখন নতুন ভবন হচ্ছে। এই কাজটা যে হচ্ছে তা ইতিবাচক। কিন্তু পোশাক খাত মালিকরা ভবনের জন্য জায়গা কিনতে চাননি। আমরাই দিয়েছি। যেহেতু কোর্টের রায় রয়েছে, সেটা কার্যকর করতে হবে। বুধবার গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে যুক্ত হয়ে উত্তরায় নির্মাণাধীন বিজিএমইএ কমপ্লেক্সে উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। পোশাক খাতের ব্যবসায়ীদের সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, হাতিরঝিলের বিজিএমইএ ভবনের জায়গাটা আমাদের দেয়া। বারবার ওই সময় বলেছিলাম ভবনটা খালের ওপর যেন না যায়। সোনারগাঁও হোটেলের সঙ্গে সমন্বয় করে করতে বলেছিলাম। কিন্তু দুর্ভাগ্য আমরা যখন পরবর্তীতে ক্ষমতায় এলাম তখন দেখলাম খালের ওপর করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, সেখানে ব্রিজ দিয়ে ভবনটিতে যেতে হচ্ছে। আমাদের এমনিতেই জলাধারের সমস্যা। আগুন লাগলে পানির অভাব। সেগুনবাগিচা ও ধোলাইখাল খাল ছিল। পানি নিষ্কাশনে রাজধানীতে পর্যাপ্ত খাল ছিল। কিন্তু এখন বেশিরভাগ ভরাট হয়ে গেছে। এ কারণে হাতিরঝিলের গুরুত্ব অনেক। প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী ভবনটি ভেঙ্গে ফেলতে হবে। শেখ হাসিনা বলেন, বর্তমানের কূটনীতি হচ্ছে কিন্তু অর্থনৈতিক কূটনীতি। এ কারণে নতুন পণ্যের নতুন বাজার খুঁজতে রাষ্ট্রদূতদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। প্রতিটি দূতাবাসকে নির্দেশনা দেয়া আছে। শুধু তাই নয় প্রতিটি রাষ্ট্রদূতকে ঢাকায় ঢেকে দীর্ঘ মিটিং করেছি। কোন দেশে বাংলাদেশের কোন কোন পণ্যের বাজার রয়েছে তা খুঁজে বের করতে বলা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, গত ১০ বছরে পোশাক খাতের শ্রমিকের ন্যূনতম মজুরি ১৬০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৮ হাজার টাকা করেছি। মালিকদের জন্য উৎস করে ছাড় দিয়েছি। বাজেটে কর বসাতে পারি না, কিন্তু কমাতে পারি। শ্রমিকদের বেতন-ভাতা বাড়াতে সাহায্য করায় বিজিএমইএকে এ সময় ধন্যবাদ দেন প্রধানমন্ত্রী। শেখ হাসিনা বলেন, গার্মেন্টস শিল্পে আমাদের আরও নতুন নতুন পণ্যের বাজার খুঁজতে হবে। ফ্যাশন ডিজাইনের ক্ষেত্রে নজর দিতে হবে। পোশাক হতে হবে বিশ্বমানের। ফ্যাশন ডিজাইন ইউনিভার্সিটি, টেক্সটাইল ইউনিভার্সিটি ও ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করে নতুন প্রজন্মকে গার্মেন্টস শিল্পে আগ্রহী করা প্রয়োজন। এক্ষেত্রে সরকার সব ধরনের নীতিগত সহায়তা দিতে প্রস্তুত রয়েছে। নতুন ভবনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিজিএমইএ সভাপতি মোঃ সিদ্দিকুর রহমান বলেন, কোর্টের রায় অনুযায়ী ১২ এপ্রিল আমাদের সময় শেষ হয়ে যাবে। ১২ তারিখ থেকেই আমরা নতুন ভবনে স্থানান্তরিত হবো। অনেকেই অনেক কথা বলছেন। মান-সম্মান বাঁচাতে আমরা এখানে চলে এসেছি। আমাদের আর কেউ কোনদিন কিছু বলতে পারবে না। অনেকেই বলেন আমরা অন্যায়ভাবে ওখানে ছিলাম। কিন্তু আমি বারবারই বলি আমরা অন্যায়ভাবে ওখানে ছিলাম না। তিনি বলেন, ৮৪ শতাংশ বৈদেশিক আয় এ খাত থেকে আসে। এ খাতে প্রত্যেক্ষ ও পরোক্ষভাবে এক কোটি লোক জড়িত। গণভবনে এ সময় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন বেসরকারী শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আতিকুল ইসলাম, বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি ও সংসদ সদস্য আব্দুস সালাম মুর্শেদী, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক আবুল কালাম আজাদ প্রমুখ। এছাড়া উত্তরার নতুন ভবনে এ সময় বিজিএমইএ সভাপতি মোঃ সিদ্দিকুর রহমান, প্রথম সহ-সভাপতি মঈনুদ্দিন আহমেদ মিন্টু, সহ-সভাপতি এম এম মান্নান কচি, সহ-সভাপতি (অর্থ) মোহাম্মদ নাসির, বিইউএফটির ভাইস চ্যান্সেলর মোজাফফর ইউ সিদ্দিকী, মোহাম্মদী গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রুবানা হকসহ সংগঠনটির বিভিন্ন নেতারা উপস্থিত ছিলেন। প্রসঙ্গত, উত্তরায় বিজিএমইএর নতুন ভবনে দুটি টাওয়ার করা হচ্ছে। সেখানে মোট জায়গার (স্পেস) পরিমাণ ৪ লাখ ৬৪ হাজার বর্গফুট। তার মধ্যে ৩ লাখ বর্গফুট নিজেদের ব্যবহারের জন্য রাখছে বিজিএমইএ। বাকি জায়গা ২৩টি প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রি করে দেয়া হয়েছে। তবে এখনও ৫০ হাজার বর্গফুট জায়গা বিক্রির জন্য রয়েছে। ভবনটিতে প্রদর্শনী কেন্দ্র, ৭৫০ জন মানুষ ধারণক্ষমতার আধুনিক মিলনায়তন, দুটি সেমিনার কক্ষ এবং সংগঠনের সদস্যদের জন্য সুইমিংপুলসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এই ভবনের কার্যক্রম সরিয়ে নিতে উত্তরা তৃতীয় পর্বে ১১০ কাঠা জমি রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) কাছ থেকে অর্ধেক মূল্যে কিনে নেয় বিজিএমইএ। প্রসঙ্গত, ২০১১ সালের ৩ এপ্রিল হাইকোর্ট এক রায়ে বিজিএমইএর বর্তমান ভবনটিকে ‘হাতিরঝিল প্রকল্পে একটি ক্যানসারের মতো’ উল্লেখ করে রায় প্রকাশের ৯০ দিনের মধ্যে ভেঙ্গে ফেলতে নির্দেশ দেন। এর বিরুদ্ধে বিজিএমইএ লিভ টু আপীল করে, যা ২০১৬ সালের ২ জুন আপীল বিভাগে খারিজ হয়। রায়ে বলা হয়, ভবনটি নিজ খরচে অবিলম্বে ভাঙতে আবেদনকারীকে (বিজিএমইএ) নির্দেশ দেয়া যাচ্ছে। এতে ব্যর্থ হলে রায়ের কপি হাতে পাওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে রাজউককে ভবনটি ভেঙ্গে ফেলতে নির্দেশ দেয়া হলো। পরে ভবন ছাড়তে উচ্চ আদালতের কাছে সময় চায় বিজিএমইএ। প্রথমে ছয় মাস এবং পরে সাত মাস সময়ও পায় তারা। সর্বশেষ ২০১৮ সালে নতুন করে এক বছর সময় পায় সংগঠনটি। সে সময় তারা মুচলেকা দেয়, ভবিষ্যতে আর সময় চাওয়া হবে না। কাওরান বাজারে বিজিএমইএর বর্তমান ভবনটি দুটি বেসমেন্টসহ ১৬ তলা। বিজিএমইএ ব্যবহার করে চারটি তলা। বাকি জায়গা দুটি ব্যাংকসহ বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রি করা হয়েছে।
×