ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ছায়ানটের বর্ষবরণ প্রস্তুতি

শতকণ্ঠে রবীন্দ্র নজরুল সলিল চৌধুরী মুকুন্দ দাসের গান

প্রকাশিত: ১১:২৬, ৪ এপ্রিল ২০১৯

শতকণ্ঠে রবীন্দ্র নজরুল সলিল চৌধুরী মুকুন্দ দাসের গান

মোরসালিন মিজান ॥ ষাটের দশকে রমনার সবুজ উদ্যানে যে ইতিহাস রচিত হয়েছিল, তার বহমান ধারাটি ছায়ানট। অশ্বত্থের নিচে বসে রবীন্দ্রনাথের গান গেয়েছিলেন একদল প্রতিবাদী। পাকিস্তানীদের এই গানে ভয়। আঁতে ঘা। বাঙালী তবু সংস্কৃতির শক্তি নিয়ে দাঁড়িয়েছিল। একই স্থানে পরে আয়োজন করা হয় বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের। দীর্ঘকাল ধরে চলা অনুষ্ঠানটি এখন ঐতিহ্যের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এটি ছাড়া পহেলা বৈশাখের শুরুটা কল্পনা করা যায় না। বরাবরের মতোই বছরের প্রথম দিন সকালে রাজধানীর সব পথ গিয়ে মিশবে রমনায়। গান কবিতায় বরণ করে নেয়া হবে ১৪২৬ বঙ্গাব্দকে। বড় আয়োজন। বিস্তর পরিকল্পনা। তাই অনেকদিন ধরেই চলছে জোর প্রস্তুতি। বর্ষবরণ উৎসব আয়োজনের উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা করে সন্জীদা খাতুন লিখেছেন, ‘সূর্য অন্ধকারকে বিদূরীত করে। মানুষ আলোর পিয়াসী। আমরা আলোকের ঝর্ণাধারায় অন্তরকে ধুয়ে নিতে চেয়েছি, অন্তরের যে ধুলার আস্তরণ তা মোচন করতে চেয়েছি, একে কোন বিশেষ মতের ধর্মাচরণ বলে জানি না, মানি না। মানবসমাজের অভিসার তো আলোর অভিমুখেই। এর জন্য বিশেষ কারও বন্দনা করার প্রয়োজন দেখি না- আপন আত্মাকেই আমরা বলতে চাই- জাগো- উদ্ভাসিত হও।’ আয়োজকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, উদ্ভাসিত হওয়ার এই লক্ষ্য নিয়ে ভোর সোয়া ৬টায় শুরু হবে বর্ষবরণ অনুষ্ঠান। প্রথমেই রাগসঙ্গীত। অসিত কুমার দে’র রাগালাপে ঘুম ভাংবে রমনার। পরে সম্মেলক ও একক গানের মধ্য দিয়ে এগিয়ে যাবে অনুষ্ঠান। সম্মেলক কণ্ঠে গাওয়া হবে ১২টি গান। একক শিল্পী তারও বেশি, ১৬ জন। এবারের বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে অপেক্ষাকৃত কম গাওয়া গানগুলোকে প্রাধান্য দেয়া হবে। রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলের গান না হলেই নয়। যথারীতি গাওয়া হবে। তবে নিয়মিত শোনা যায়- এমন গান নয়। অনুষ্ঠানে কবিগুরু থেকে বেছে নিয়ে ছোটরা গাইবে: তুমি বাহির থেকে দিলে বিষম তাড়া/তাই ভয়ে ঘোরায় দিক্দকে,/শেষে অন্তরে পাই সাড়া...। বড়রা গাইবেন: সকল কলুষ তামস হর,/জয় হ’ক তব জয়,/অমৃতবারি সিঞ্চন কর/নিখিল ভুবনময়...। একই শিল্পীরা গাইবেন ‘হিংসায় উন্মত্ত পৃথ্বী, নিত্য নিঠুর দ্বন্দ্ব’ গানটি। নজরুলের গানও অভিন্ন চিন্তা থেকে বেছে নেয়া। বহু ঘেটে নির্বাচন করা গানগুলোর একটি: সঙ্ঘ শরণ তীর্থযাত্রা-পথে এসো মোরা যাই/সঙ্ঘ বাঁধিয়া চলিলে অভয় সে পথে মৃত্যু নাই...। অনুষ্ঠানে থাকছে গণসঙ্গীত। সলিল চৌধুরীর লেখা প্রতিবাদী গান গাওয়া হবে। স্বদেশী ও অসহযোগ আন্দোলনের সময় বহু জাগরণী গান লিখেছিলেন চারণ কবি মুকুন্দ দাস। সেইসব গান থেকেও গাইবেন ছায়ানটের শিল্পীরা। বাঙালীর প্রিয় লোঙ্গীতও বাদ যাবে না। এবার সুনামগঞ্জের লোকসাধক বহু জনপ্রিয় গানের গীতিকার সুরকার শাহ আবদুল করিমের গান গাওয়া হতে পারে বলেও জানা গেছে। অনুষ্ঠানে থাকবে পাঠ এবং আবৃত্তি। এ পর্বে অংশ নেবেন জহিরুল হক খান ও ত্রপা মজমুদার। অনুষ্ঠানের শেষপর্বে দেশের বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় রেখে, সময়টিকে মূল্যায়ন করে দিক নির্দেশনামূলক ভাষণ দেবেন বাঙালীর সাংস্কৃতিক আন্দোলন সংগ্রামের পুরোধা ব্যক্তিত্ব ছায়ানট সভাপতি সন্জীদা খাতুন। এর পর সকলে মিলে জাতীয় সঙ্গীত গাইবেন। দেশের প্রতি এই প্রেমের কথা পুনর্ব্যক্ত করে শেষ হবে ১৪২৬ বঙ্গাব্দ বরণের আনুষ্ঠানিকতা। বর্তমানে শিল্পীদের প্রায় সবাই ব্যস্ত রিহার্সালে। সন্ধ্যা হতেই বৈশাখের গান। উৎসবের আগে উৎসবমুখর ছায়ানট ভবন। বুধবার সেখানে গিয়ে দেখা যায়, একসঙ্গে বসে সম্মেলক গানের রিহার্সাল করছেন শিল্পীরা। প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা সামনের সারিতে। পেছনে বসে গাইছিলেন শিক্ষার্থীরা। বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের গান আরও শুদ্ধ সুন্দর করার এই চেষ্টা গত কয়েক মাস ধরে হচ্ছে বলে জানান ছায়ানটের সাধারণ সম্পাদক লাইসা আহমেদ লিসা। তিনি বলেন, প্রায় ১০৫ জন শিল্পী সম্মেলক গান করবেন। নিয়মিত রিহার্সাল করছে তারা। মূল অনুষ্ঠানের আগে রমনায় চূড়ান্ত রিহার্সাল অনুষ্ঠিত হবে। মঞ্চটি কেমন হবে, তারও পরিকল্পনা চলছে। বুধবার অনুষ্ঠানের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে মিটিং হয়েছে বলে জানান তিনি। সব মিলিয়ে কাজ এগিয়ে চলেছে। এবারও সফল একটি অনুষ্ঠানের মাধ্যমে নতুন বছরকে বরণ করে নেয়া যাবে বলে আশা করছে ছায়ানট।
×