ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধির আভাস এডিবির

প্রকাশিত: ১০:৫৪, ৪ এপ্রিল ২০১৯

৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধির আভাস এডিবির

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রফতানি ও সরকারী বিনিয়োগে ইতিবাচক ধারা অব্যাহত থাকায় চলতি অর্থবছর শেষে বাংলাদেশ মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) ৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি পেতে পারে বলে মনে করছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। বাংলাদেশের অর্থনীতির বিষয় নিয়ে প্রকাশিত এডিবির বার্ষিক প্রতিবেদন ‘এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট আউটলুক ২০১৯’ এ প্রবৃদ্ধির এই পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে। একই সময়ে মূল্যস্ফীতির হার ৫ দশমিক ৫ শতাংশ হবে বলেও মনে করছে এডিবি। বুধবার এডিবি ঢাকার কার্যালয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেন এডিবির কান্ট্রি ডিরেক্টর মনমোহন প্রকাশ। এ সময় এডিবি ঢাকা অফিসের সিনিয়র অর্থনীতিবিদ সন চ্যাং হং সংবাদ সম্মেলনে প্রতিবেদনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন। জিডিপি প্রবৃদ্ধি বাড়ার ক্ষেত্রে শিল্পের প্রবৃদ্ধি মূল চালিকা শক্তি হিসেবে কাজ করবে বলেও জানিয়েছে এডিবি। গত ১৯ মার্চ জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) বৈঠক শেষে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জানিয়েছিলেন, চলতি অর্থবছর শেষে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ছাড়াবে ৮ দশমিক ১৩ শতাংশ। অর্থমন্ত্রীর এই প্রত্যাশা ব্যক্ত করার প্রায় দুই সপ্তাহ পর এডিবি তার আউটলুক প্রকাশ করে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৮ শতাংশের কথা জানাল। এডিবি বলছে, মূল্যস্ফীতিও থাকবে নিয়ন্ত্রণে যা সংখ্যাগত হিসাবে ৫ দশমিক ৫ শতাংশ। সংস্থাটি মনে করে, নির্বাচন পরবর্তী স্থিতিশীল রাজনৈতিক অবস্থা সারাবছরই এমন থাকবে। একই সঙ্গে, উচ্চ রফতানি প্রবৃদ্ধির ধারা ও প্রবাসী আয়ের গতিও বেগবান হবে। চলতি অর্থবছরে কৃষি খাতে প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস ধরা হয়েছে ৩ দশমিক ৮ শতাংশ, শিল্প খাতে প্রবৃদ্ধি হবে ১২ দশমিক ৫ ভাগ। তবে যানবাহন, শিক্ষা, আর্থিক খাত ও স্বাস্থ্য খাতের ধীরগতির কারণে সেবা খাতে প্রবৃদ্ধি ততটা এগোবে না। যা থাকতে পারে ৬ দশমিক ৪ শতাংশের আশপাশে। এডিবির মতে, রফতানি খাতে প্রবৃদ্ধি ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বেড়ে দাঁড়াবে ১৪ শতাংশে। মূলত পোশাক খাতে রফতানির ওপর ভর করেই এই প্রবৃদ্ধি সম্ভব হবে। এডিবি মনে করে, মূলত খাদ্যপণ্য ও ভোগ্যপণ্যের চাহিদা কম থাকায় ২০১৯-২০ অর্থবছরে দেশে আমদানির পরিমাণ কমবে। এডিবির মতে, চলতি অর্থবছরে দেশে প্রবাসী আয় বাড়বে ১১ শতাংশ হারে। তবে, এর পরের অর্থবছরে তা একই ধারায় না থেকে নেমে আসবে ১০ শতাংশের ঘরে। আউটলুক প্রকাশ করে মনমোহন প্রকাশ বলেন, এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি সবচেয়ে দ্রুতগামী। স্বাধীনতার পর থেকে সর্বোচ্চ ৭ দশমিক ৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয় ২০১৭-১৮ অর্থবছরে। রেমিটেন্সের প্রভাবে ব্যক্তি খাতে চাহিদা বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি অবকাঠামো খাতে সরকারের বাড়তি বিনিয়োগের কারণেই প্রবৃদ্ধি বাড়ছে। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নতি ধরে রাখতে আগামীতে শিল্পের ভিত্তি বাড়াতে হবে। বৈচিত্র্য আনতে হবে রফতানি পণ্যে। ব্যক্তি খাতের উন্নয়ন নিশ্চিত করতে ব্যবসার পরিবেশ উন্নত করতে হবে। করের ভিত্তি বাড়িয়ে রাজস্ব আদায় নিশ্চিত করতে হবে। ব্যক্তি খাতের চাহিদা মেটাতে মানব সম্পদেও উন্নয়ন করতে হবে। পাশাপাশি ব্যাংকিং খাতের সংস্কারেও গুরুত্ব দিতে হবে। বিভিন্ন সুখবরের পাশাপাশি টেকসই উন্নয়নের এ ধারায় কিছু চ্যালেঞ্জও দেখছে উন্নয়ন সহযোগী এ সংস্থা এডিবি। এডিবি মনে করে বাংলাদেশের অর্থনীতির উন্নয়নে ব্যাংকিং খাতের অব্যবস্থাপনা আগামীতে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াতে পারে। এ বিষয়ে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতে খেলাপী ঋণের হার বেশি। বিনিয়োগের তুলনায় লাভের হার কম। এখানে সুশাসন ব্যবস্থাও দুর্বল। এর ফলে বাড়ছে মূলধন ঘাটতির প্রবণতা। ব্যাংকিং খাতে পরিচালনায় ও আইনী কাঠামোয় বড় ধরনের অদক্ষতা রয়েছে বলেও মনে করে এডিবি। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ব্যাংকিং খাতে দুর্বলতায় নেয়া আগের অনেক উদ্যোগ সফল হয়নি। ব্যাংক আইন সংশোধন, ব্যাংকে বিশেষ নিরীক্ষা ও ঋণের ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা গাইড লাইনে কিছুটা সফলতা এসেছে। উন্নতি ধরে রাখতে আগামীতে বিদ্যমান ব্যাংক আইনের কঠোর প্রয়োগ চেয়েছে এডিবি। তা ছাড়া কর্পোরেট সুশাসন প্রতিষ্ঠা, ঋণের সিদ্ধান্তের যৌক্তিকতা যাচাই করা, সরকারী ব্যাংকে একীভূতকরণের মতো উদ্যোগ বাস্তবায়নের সুপারিশ করেছে এডিবি।
×