ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

কৈলাশ প্রসাদ গুপ্ত

ছাত্র রাজনীতির বিকল্প নেই

প্রকাশিত: ১০:৪৩, ৪ এপ্রিল ২০১৯

ছাত্র রাজনীতির বিকল্প নেই

সাধারণত প্রায় সবাই ছাত্রনেতা থেকে জননেতা হয়েছে। বিচার বিভাগের উর্ধতন কর্মকর্তারাও রাষ্ট্রীয় দায়িত্বে এসেছিলেন কিন্তু সার্থক হয়েছেন কতটুকু? ছাত্র আন্দোলন ছিল বলেই বাংলার মানুষের ন্যায়সঙ্গত দাবি নিয়ে, অধিকার নিয়ে লড়াই সংগ্রামের ফসল আজকের বাংলাদেশ। ২৮ বছরের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন হলো। ডাকসুর নির্বাচনের ফলাফলের সঙ্গে ১৯৯০ সালের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচনের একটি বিষয়ে মিল আছে। সেটি হলো ভিপি শুধু ভিন্ন মতের। ২০১৯ সালের ডাকসুর ভিপি কোটা আন্দোলনের নেতা নির্বাচিত হয়েছেন। ২৯ বছর আগের রাকসুর ভিপি নির্বাচিত হয়েছিলেন ছাত্রদলের নেতা মোঃ রুহুল কবির (রিজভী)। যিনি বর্তমানে বি.এন.পি’র কেন্দ্রীয় কমিটির সিনিয়র যুগ্ন মহাসচিব। আজকের ডাকসুর ভিপি আজ থেকে ৩০ বছর পর বাংলাদেশ বা বিশ্বের কোন অবস্থানে থাকবে তা ভবিষ্যতই বলতে পারবে। কিন্তু কেন ২৮ বছর পর ডাকসু নির্বাচন? শুধু ডাকসু নয়, বাংলাদেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নির্বাচন কেন হয়নি এতদিন? সরকার এদিকে মনোযোগ দেয়ার পূর্বে প্রাথমিক ও মাধ্যমিকে কেন স্টুডেন্ট কেবিনেট নির্বাচনে মনোযোগ দিলেন? এর সুদূরপ্রসারী ফলাফল কি তা ভবিষ্যতই বলতে পারবে। তবে ২৮ বছরে বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় যারা ছিলেন তারা কেন এই নির্বাচনে মনোযোগী হননি তা বিশাল এক গবেষণার বিষয়। তার থেকে বড় কথা সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের (প্রকৌশল-মেডিক্যাল) ছাত্র ছাত্রীরা এই বিষয়ে (নির্বাচন) লড়াই সংগ্রাম করে তাঁদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করেনি বা করতে পারেনি কেন? এটিও একটি গবেষণার বিষয়। তাহলে কি ধরে নিব ৯০% ছাত্র ছাত্রীর মাথা ব্যথা ছিল না? অথচ প্রায় সকল রাজনৈতিক দলের ছাত্র সংগঠনই বহাল তবিয়তে ছিল। তাদের আদর্শ উদ্দেশ্য কি ছিল? সাধারণ ছাত্র ছাত্রীর সঙ্গে ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীরাও কি ছাত্রনাং অধ্যয়নং তপঃ এই উপদেশ মেনে চলছিলেন। অধ্যয়নই ছাত্রদের একমাত্র তপস্যা হওয়া উচিত? শেখার জন্য এসো, সেবার জন্য বেরিয়ে যাও। শিক্ষাই একমাত্র লক্ষ্য। সেই অভীষ্ট লক্ষ্যে পেঁৗঁছার জন্যই কি তারা ওই দিকে মনোযোগী হয়নি? কিংবা প্রত্যাখ্যান করেছে ছাত্র রাজনীতি? মনে মনে ঘৃণা করেছে? ছাত্র রাজনীতি মানেই শিক্ষাঙ্গনে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজির নেতা তৈরি করা, প্রাণনাশের আশঙ্কা, আহত নিহত হওয়া, পঙ্গুত্ব বরণ করা, অনির্দিষ্টকালের জন্য বার বার শিক্ষাঙ্গন বন্ধ, সেশনজট, শিক্ষা জীবন ধ্বংস! যখন শিক্ষা জীবন শেষ তখন সরকারী চাকরির বয়স শেষ! সারা বাংলাদেশে মহাবিদ্যালয়গুলোতে (কলেজে) ছাত্র সংসদ যখন ছিল, শিক্ষার পাশাপাশি রুটিন মাফিক ক্লাস পরীক্ষা বাদে সহ-শিক্ষাক্রম খেলাধুলা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ সৃজনশীল কর্মকা- পরিচালিত হতো। পাশাপাশি প্রত্যেক বিষয়ে দুটি দিক থাকে সুবিধা-অসুবিধা, আলো-অন্ধকার। অন্ধকার দিক হলো দুর্নীতিÑ এই অনুষ্ঠানগুলো করতে গিয়ে ছাত্র সংসদের নেতা ও সহযোগীদের দুর্নীতি। ছাত্র নেতাকর্মীদের পরীক্ষায় বিশেষ সুবিধা দিতে গিয়ে সাধারণ ছেলেমেয়েরা এক পর্যায়ে ঢালাওভাবে নকল সুবিধা লাভ করেছিল। নকল বঞ্চিতরা সরকারী স্কুল-কলেজ-ক্যাডেট কলেজসহ ওই জাতীয় স্কুল-কলেজগুলোয়। মেধাবী ছাত্রে পরিণত হলো। সহজ সুযোগ লাভে পাস করারা মেধাশূন্যে পরিণত হলো। এই মেধাশূন্যরা যে যে অবস্থানে আছে বা গেছে সেখানকার বারোটা বাজিয়েছে। সাধু সাবধান! বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে উদ্দেশ করে যে ভাষায় স্লোগান দেয়া হয়েছে তা কি রাজনৈতিক ভাষা? এ বিষয়ে অনেক বিতর্ক হতে পারে। তবে গঠনমূলক রাজনীতিই কাম্য। এত কিছুর পরেও সবশেষে চড়াই-উতরাই পেরিয়ে প্রকৃত রাজনীতিবিদদের হাতে ক্ষমতা অর্পণ করতে হলে ছাত্র রাজনীতির বিকল্প নেই। ফুলবাড়ী দিনাজপুর থেকে
×