ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

নদী উদ্ধার

প্রকাশিত: ১০:৩৩, ৪ এপ্রিল ২০১৯

নদী উদ্ধার

নদী দখল ও দূষণ প্রতিরোধে সরকার এবার ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি গ্রহণ করেছে। সারাদেশে নদীর নাব্য ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনার জন্য দুই হাজার ৩৬৮ কিলোমিটার নৌপথ উদ্ধারে গ্রহণ করা হয়েছে মহাপরিকল্পনা। ২০১২ সালে একনেক কর্তৃক অনুমোদিত ১১ হাজার ৪০০ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। ৫৩টি নৌরুটের ১২ হাজার নৌপথ খননের প্রথম পর্যায় ২৪টি এবং দ্বিতীয় পর্যায়ে ২৯টি নদী খননের পরিকল্পনা রয়েছে। এই মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে নৌপথ সচলের পাশাপাশি সারা বছর নদীর নাব্য রক্ষাসহ সেচ সুবিধা ও চাষাবাদ অপেক্ষাকৃত সহজ ও সম্প্রসারিত হবে নিঃসন্দেহে। ইলিশসহ মাছের উৎপাদনও বাড়বে। প্রতীয়মান হয় যে, এবার সত্যিই দৃঢ় সংকল্প হয়ে, আটঘাট বেঁধে সরকার নেমেছে নদ-নদীর সুরক্ষায়। তবে বরাদ্দকৃত অর্থের যেন নয়-ছয় না হয়, তাও নিশ্চিত করতে হবে। ঢাকার চার পাশ পরিবেষ্টিত বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, বালু ও শীতলক্ষ্যার দুই তীরে প্রায় প্রতিদিনই চলছে বিআইডব্লিউটিএর উচ্ছেদ অভিযান। এ রকম কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে সারাদেশেই। এর পাশাপাশি নদীর নাব্য রক্ষায় প্রতিবেশী দেশ ভারত, নেপাল, ভুটান এমনকি চীন-মিয়ানমারকেও সংযুক্ত করতে হবে আগামীতে। বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ৮ শতাধিক নদ-নদী এবং ৫৭টি আন্তঃদেশীয় সংযোগ নদী রয়েছে। এগুলোর সঙ্গে প্রতিবেশী দেশ ভারত, নেপাল, ভুটান, সিকিম, এমনকি চীনও জড়িত। সুতরাং আন্তঃদেশীয় পানি ব্যবস্থাপনা ও সুসম বণ্টনের ক্ষেত্রেও এসব দেশের সক্রিয় অংশগ্রহণ অপরিহার্য। পানিসম্পদের সুষ্ঠু ও সমন্বিত ব্যবস্থাপনার জন্য উন্নয়ন সহযোগী ১২টি দেশের সহযোগিতায় ‘বাংলাদেশে ডেল্টা প্ল্যান (বিডিপি) ২১০০’ নামে যুগান্তকারী একটি উদ্যোগ বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। দীর্ঘমেয়াদী সমন্বিত এই পানি ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনায় আগামী এক শ’ বছরে পানির প্রাপ্যতা, এর ব্যবহারসহ প্রতিবেশ ও পরিবেশগত বিষয়সমূহ বিবেচনায় রাখা হয়েছে। আন্তঃদেশীয় সীমান্ত পানি ব্যবস্থাপনা বিষয়ে ‘যৌথ নদী কমিশন জেআরসি’ গঠনের মাধ্যমে ১৯৯৬ সালে ভারতের সঙ্গে ৩০ বছর মেয়াদী পানি চুক্তির মাধ্যমে গঙ্গা নদীর পানি সমস্যার সমাধান হলেও তিস্তা, ফেনী নদীর পানিসহ গঙ্গা ব্যারেজ পরিকল্পনা ঝুলে আছে দীর্ঘদিন থেকে। অথচ দু’দেশের জনসাধারণের অভিন্ন স্বার্থে ভারতের এক্ষেত্রে ইতিবাচক মনোভাব দেখানো বাঞ্ছনীয়। এর পাশাপাশি সুদূরপ্রসারী পানি ব্যবস্থাপনার জন্য স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনায় ভারতসহ নেপাল, ভুটান, সিকিম, চীন ও মিয়ানমারকে অন্তর্ভুক্ত করা বর্তমান সময়ের অন্যতম দাবি। বিশ্বের অনেক দেশেই পানির পরিকল্পিত ব্যবহারসহ পুনঃপ্রক্রিয়াজাতকরণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। সমুদ্রের পানির ব্যবহারও সম্ভব হচ্ছে এর জন্য। অথচ অপরিকল্পিত আহরণ ও যথেচ্ছ ব্যবহারের ফলে দেশের পানিসম্পদের অপচয় হচ্ছে। নদী দখল ও দূষণ তো আছেই। ফলে ভরাট হয়ে যাচ্ছে নদ-নদীগুলো। অতিবৃষ্টি ও পাহাড়ী ঢলে সৃষ্টি হচ্ছে বন্যা। সুন্দরবনে দেখা দিচ্ছে মিষ্টি পানির সঙ্কট। যে কারণে পশুপাখি, জীববৈচিত্র্য ও গাছপালা প্রায় ধ্বংসের সম্মুখীন। বৃষ্টির পানিরও আদৌ কোন পরিকল্পিত ব্যবহার হচ্ছে না। সুষ্ঠু ও সমন্বিত পানি ব্যবহার এবং ব্যবস্থাপনায় এসবই অন্তর্ভুক্ত করতে হবে জরুরী ভিত্তিতে। তদুপরি বাংলাদেশের প্রাণ প্রবাহ বলে বিবেচিত নদ-নদীগুলোতে সারা বছর দখলমুক্তসহ নাব্য রাখার সুবন্দোবস্ত করতে হবে। মনে রাখতে হবে যে, নদী না বাঁচলে বাঁচবে না বাংলাদেশও।
×