ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বৈষম্য কমাতে জার্মান মডেল ব্যবহার করা যেতে পারে ॥ এডিবি

প্রকাশিত: ১৩:৩৬, ৩ এপ্রিল ২০১৯

বৈষম্য কমাতে জার্মান মডেল ব্যবহার করা যেতে পারে ॥ এডিবি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এখন ৮ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে। তবে উন্নয়নের সুফল সমানভাবে ভোগ করতে পারেছে না সারা দেশের মানুষ। এমন পরিস্থিতিতে বিকেন্দ্রীকরণের জার্মান মডেল ব্যবহার করে বৈষম্য কমানোর ক্ষেত্রে বাংলাদেশেরও সফল হওয়ার সুযোগ রয়েছে বলে মনে করছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। বিকেন্দ্রীকরণের মাধ্যমে সারা দেশে ন্যায়সঙ্গত উন্নয়ন ও বিকাশের জন্য জার্মানিকে ‘সম্ভাব্য মডেল’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক। ন্যায়সঙ্গত উন্নয়ন নিয়ে মঙ্গলবার হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে এডিবির এক সেমিনারে বিকেন্দ্রীকরণের জন্য জার্মানিকে মডেল হিসেবে উপস্থাপন করা হয়। সংস্থাটির মতে, যেভাবে জার্মান শিল্পায়ন, উৎপাদন, শিক্ষা, অবকাঠামো উন্নয়ন এবং নাগরিক সুবিধা পল্লী অঞ্চল পর্যন্ত যেভাবে ছড়িয়েছে দিয়েছে, একইভাবে বাংলাদেশ বিকেন্দ্রীকরণের প্রক্রিয়া প্রয়োগ করে সফল হতে পারবে। সেমিনারে শহর থেকে গ্রাম পর্যায়ে সম উন্নয়নের জন্য নানা বিষয় তুলে ধরা হয়। বিশেষ করে অবকাঠামোর উন্নয়ন, দক্ষজনশক্তি, দারিদ্র্যতা দূরীকরণসহ নানা বিষয় আলোকপাত করা হয়। সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন স্থানীয় সরকার মন্ত্রী তাজুল ইসলাম। এডিবি কান্ট্রি ডিরেক্টর মনমোহন প্রকাশ স্বাগত বক্তব্যে বলেন, বাংলাদেশকে একটি উন্নয়ন মডেলের প্রয়োজন যা দেশের ন্যায়সঙ্গত উন্নয়ন বাড়াতে পারে। একটি মডেল যা হবে টেকসই এবং স্থিতিশীল। আমরা গবেষণা করে দেখেছি যে জার্মানি হতে পারে সেই সম্ভাব্য মডেল। অনুষ্ঠানে কিনোট উপস্থাপন করেন জার্মানির হেলবা ব্যাংকের অ-ওইসিডি দেশগুলোর প্রধান কর্মকর্তা ও জার্মান বিশেষজ্ঞ রাফ স্কেচটার। কিনোটে বলা হয়, জার্মানির রাষ্ট্র ও জনসংখ্যা হিসেবে উন্নয়ন একটি মডেল। জার্মানিতে ৪টি বড় শহর পাওয়া যাবে বার্লিন, হামবুর্গ, মিউনিখ এবং কলোনি যেখানে লোকসংখ্যা ১ মিলিয়নের বেশি বসবাস করে। বিশে^ অবকাঠামোতে লিডিং দেশ জার্মানি। জার্মানি সারা দেশে চাকরির সুযোগ সৃষ্টি করে বলেও জানিয়ে তিনি বলেন, জার্মানরা শুধুমাত্র বড় কোম্পানি নয় বরং এসএমইগুলোতেও চাকরি খুঁজে পায়। মূল প্রবন্ধে তিনি জার্মান উন্নয়ন মডেল হিসেবে বিকেন্দ্রীভূত, জনসংখ্য, শিল্প উন্নয়ন, এসএমই অর্থায়ন বৃদ্ধি এবং স্থানীয় এলাকায় শিক্ষা, অবকাঠামো এবং ডিজিটাইজেশনের তথ্য তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ছোট শহরগুলোতেও আপনি ভাল শিক্ষা পাবেন এবং জনগণকে বড় শহরগুলোতে যেতে হবে না। জার্মানির সঙ্গে বাংলাদেশের পার্থক্য দেখিয়ে বলা হয় বাংলাদেশের উন্নয়নের পলিসিতে নির্দেশনা থাকতে হবে। অবকাঠামো উন্নয়নে গুরুত্ব দিতে হবে। উদ্ভাবনী ও দক্ষতা উন্নয়তে গুরুত্ব দিতে হবে। এডিবি কান্ট্রি ডিরেক্টর মনমোহন প্রকাশ বলেন, বাংলাদেশ অনেক উন্নয়নমূলক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে গত এক দশকে বাংলাদেশের অর্থনীতি ব্যাপকভাবে এগিয়েছে। এ ধারাবাহিকতায় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ৮ শতাংশ ছাড়িয়েছে। কিন্তু প্রবৃদ্ধির সুফল সারা দেশের মানুষ সমানভাবে যাচ্ছে না। বাংলাদেশের উন্নয়ন হচ্ছে ঢাকা ও চট্টগ্রামকেন্দ্রিক। এ অবস্থা থেকে নিরসনে জার্মান মডেল বাংলাদেশের জন্য সহায়ক হবে। প্রধান অতিথির বক্তব্যে এলজিআরডি মন্ত্রী তাজুল ইসলাম বলেন, জার্মানির উন্নয়নের বিষয়গুলো দেখলাম আমাদের উৎসহিত ও অনুপ্রাণিত করবে। তবে আমাদের সরকারও কাজ করছে। ন্যায়সঙ্গত উন্নয়ন বাংলাদেশের জন্য চ্যালেঞ্জ। বর্তমান সরকারের নির্বাচনী ইশতেহারে পল্লী এলাকার উন্নয়নকে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। উন্নত দেশ গড়ার লক্ষ্যে ভিশন ২০৪১ বাস্তবায়নে আমাদের প্রধানমন্ত্রী কাজ করছেন। সব ধরনের নাগরিক সুবিধা গ্রামে বসে পাবে মানুষ। বিশেষ অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারী শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান বলেন, বাংলাদেশ উন্নয়নের জন্য ২০০ বছর অপেক্ষা করতে পারে না এবং বাংলাদেশ ইতিমধ্যেই এমন অনেক কিছুই করেছে। আমাদের প্রধানমন্ত্রী বলেছেন প্রত্যেকটি গ্রাম শহর হবে সে হিসেবে কাজ শুরু হয়েছে। আমাদের অবকাঠামো কাজের মধ্যে সড়ক রেলে উন্নয়ন করছি। প্রধানমন্ত্রী নৌ পথেও গুরুত্ব দিয়েছেন। উন্নয়নে অবকাঠামোর উন্নয়ন অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ আমরা সেটি শুরু করেছি। আমাদের ডিজিটাল কানেক্টিভিটি এখন ইউনিয়নে চলে গেছে। তিনি বলেন, প্রক্রিয়া ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে। আমাদের লক্ষ্য ২০৪১ সালের মধ্যে একটি উন্নত দেশ। অনুষ্ঠানে জানানো হয় ক্ষুদ্র মাঝারি শিল্প সম্প্রসারণ দেশব্যাপী কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখবে। সেই সঙ্গে অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও স্থানীয় অর্থনীতি সম্প্রসারণেও ভূমিকা রাখবে। অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন কেএফডব্লিউ বাংলাদেশের পরিচালক অনির্বান কু-ু, মোহাম্মদি গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রুবানা হক প্রমুখ।
×