ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

হামলার প্রতিবাদ জানাতে গিয়ে ছাত্রলীগ কর্মীদের তোপের মুখে ডাকসু ভিপি

প্রকাশিত: ১৩:১২, ৩ এপ্রিল ২০১৯

হামলার প্রতিবাদ জানাতে গিয়ে ছাত্রলীগ কর্মীদের তোপের মুখে ডাকসু ভিপি

বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার ॥ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের আবাসিক ছাত্র ফরিদ হাসানকে হামলার প্রতিবাদ জানাতে গিয়ে হল শাখা ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের তোপের মুখে পড়েছে ডাকসুর ভিপি নুর। অনুমতি ছাড়া হলে প্রবেশ করার অভিযোগে হল প্রাধ্যক্ষের কার্যালয়ে প্রায় দুই ঘণ্টা অবরুদ্ধ থাকার পর প্রশাসনের সহায়তায় ঘটনাস্থল ত্যাগ করতে পেরেছেন বলে জানা যায়। এ সময় তাকে ও তার সমর্থকদের উপর ডিম মারার অভিযোগ করেছেন ভিপি নুরের সমর্থকেরা। গত সোমবার মধ্যরাতে এসএম হলের শিক্ষার্থী ফরিদ হাসানকে মারধর করে হল থেকে বের করে দেয়ার অভিযোগ উঠে হল শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মী ও হল সংসদের ভিপি-জিএসের বিরুদ্ধে। এর প্রতিবাদে মঙ্গলবার বিকেল তিনটায় ভিপি নুরের নেতৃত্বে কিছু শিক্ষার্থী সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যে মানববন্ধন করে। মানববন্ধন শেষে ভিপি নুর উক্ত ঘটনায় প্রতিবাদ জানাতে এলে ছাত্রলীগের কর্মীরা তার প্রতি ডিম ছুড়ে মারে। পরবর্তীতে ভিপি নুরকে লাঞ্ছনার প্রতিবাদে সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা থেকে উপাচার্যের বাড়ির সামনে অবস্থান নিয়েছেন কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতাকর্মীরা। হল সূত্র জানায়, সোমবার রাতে হল সংদের ভিপি প্রার্থী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের উর্দু বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী মোঃ ফরিদ হাসানকে পিটিয়ে হল থেকে বের করে দেয়া হয়। গুরুতর আহত অবস্থায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নেন তিনি। তার কপালের ডান পাশ থেকে ডান কান পর্যন্ত ৩২ সেলাই দেয়া হয়েছে। ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক ফারুক হোসেন বলেন, এসএম হলে ভিপি নুর, সমাজসেবা আখতার হোসেন, উম্মে হাবীবা বেনজীর ও অরণী সেমন্তি খানসহ কয়েকজনের উপর ছাত্রলীগ হামলা করেছি। এর প্রতিবাদে উপাচার্যের বাড়ির সামনে অবস্থান নিয়েছি। এ বিষয়ে ডাকসুর জিএস প্রার্থী ও ছাত্র ফেডারেশন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি উম্মে হাবিবা বেনজীর বলেন, ফরিদের ওপর হামলার প্রতিবাদে আমরাসহ ডাকসুর ভিপি নুরকে সঙ্গে নিয়ে এসএম হলে অভিযোগ দিতে এলে আমাদের ডিম মেরে হামলা করে এসএম হল ছাত্রলীগ। তারা নুরকে প্রায় ঘণ্টা দুয়েক আটকে রাখে। এরপর বের হতে গেলে আবারও আমাদের সবার উপর হামলা করা হয়। মারধরের বিষয়ে ফরিদ বলেন, আমি রাত ১১টার দিকে রুমে ঘুমিয়ে ছিলাম। এ সময় ছাত্রলীগের কয়েকজন লাঠিসোটাসহ গিয়ে তাকে ডেকে মেসের ডাইনিংয়ে নিয়ে যায়। সেখানে হল ছাত্রলীগের সভাপতি তাহসান আহমেদ রাসেল, সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান তাপস, সাবেক নেতা মিজানুর রহমান পিকুলসহ হল কমিটির প্রায় সবাই উপস্থিত ছিলেন। তিনি বলেন, তোর সাহস তো কম নয়, এখনও হলে থাকিস এই বলে আমাকে ব্যাপক মারধর শুরু করে। সেখান থেকে মারতে মারতে হল গেটে নিয়ে গিয়ে বেরিয়ে যেতে বলে। এ সময় তাকে কেউ হাসপাতালে নিয়ে যেতেও সাহস করেনি। পরে তিনি একাই হাসপাতালে যান। হল সংসদ নির্বাচনে জিএস প্রার্থী হয়েছিলেন তিনি। তবে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় ও বিশ্ববিদ্যালয়ের নেতারা তাকে শাসিয়ে ও হুমকি-ধমকি দিয়ে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করতে বলেন। একপর্যায়ে তিনি প্রার্থিতা প্রত্যাহার করতে বাধ্য হন বলে জানান। এ বিষয়ে হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি তাহসান আহমেদ রাসেল বলেন, এই ঘটনার সঙ্গে ছাত্রলীগের সম্পৃক্ততা নেই। তবে তার রুমে মাদক পাওয়া গিয়েছিল বলে শুনেছি এবং হলের প্রায় চার শ’ শিক্ষার্থী তাকে হল থেকে বের করে দেয়ার জন্য হল প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছিল। পরে হল প্রশাসন তার রুমটি সিলগালা করে দেয়। সে এখন হলে থাকে না। কালকে হলে এলে সাধারণ শিক্ষার্থীরা তাকে মারধর করেছে বলে আমরা শুনেছি। এ বিষয়ে এসএম হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক মাহবুবুল আলম জোয়ার্দার বলেন, ফরিদের বিরুদ্ধে আগে কিছু অভিযোগ পাওয়া গিয়েছিল। অভিযোগগুলোর সত্যতা যাচাই করতে হল প্রশাসনের পক্ষ থেকে একটি তদন্ত কমিটি করা হবে। তদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে। ফরিদের ওপর হামলার প্রতিবাদে মানববন্ধন ॥ মঙ্গলবার বিকেল তিনটায় অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে নুর বলেন, এই সন্ত্রাসী হামলার সঙ্গে যারা জড়িত রয়েছে তিন দিনের মধ্যে সিন্ডিকেট মিটিং ডেকে তাদের বহিষ্কার করতে হবে। যদি বহিষ্কার করা না হয় তিনদিন পর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। শিক্ষার্থীরা অনেক নির্যাতিত হয়েছে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে। অনেক লিখিত অভিযোগ দেয়া হয়েছে। কিন্তু একটা অভিযোগের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। এ সময় তিনি রাজনীতি বিবেচনার পরিবর্তে মেধার ভিত্তিতে হলগুলোতে সিট বণ্টনের দাবি জানান। মানববন্ধনে ডাকসুর স্বতন্ত্র ভিপি প্রার্থী অরণী সেমন্তি খান, ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি উম্মে হাবিবা বেনজীর, কোটা সংস্কার আন্দোলনের যুগ্ম আহ্বায়ক রাশেদ খান, সোহরাব হাসান প্রমুখ। ফরিদকে মারার ঘটনায় লিখিত অভিযোগ ॥ ফরিদ হাসানকে ওপর হামলার ঘটনায় প্রক্টর বরাবর লিখিত অভিযোগ দেয়া হয়েছে। মঙ্গলবার দুপুরে অরণি সেমন্তি খানসহ কয়েকজন তার পক্ষে এ অভিযোগ দেন। অভিযোগপত্রে বলা হয়, সোমবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে এসএম হলের ওয়াসিফ হাসান পিয়াসের নেতৃত্বে পাঁচজন হলের মেস ঐতিহ্য ডাইনিং রুমে নিয়ে যায়। সেখানে ছাত্রলীগের হল সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নেতৃত্বে সন্ত্রাসী কায়দায় হামলা চালিয়ে আহত করে হলের বাইরে ফেলে রাখে। বর্তমানে আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিক্যাল সেন্টারে চিকিৎসাধীন। এ ঘটনায় তিনি ‘অপরাধী-সন্ত্রাসীদের’ যথোপযুক্ত শাস্তি দাবি করেছেন। এতে হামলাকারী পাঁচজনের নাম সংযুক্ত করেছেন তিনি। তারা হলেনÑ ইংরেজী বিভাগের ছাত্র ও হল ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি ওয়াসিফ হাসান পিয়াস, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ছাত্র ও হল ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রুবেল হোসেন, ফার্সি বিভাগের মুজাহিদ, সংস্কৃত বিভাগের ছাত্র ও হল ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সানাউল্লাহ সায়েম এবং পরিসংখ্যান বিভাগের সাব্বির। তিনিও সাংগঠনিক সম্পাদক। তারা সবাই ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র।
×