ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ফিলিপিন্সে চার্চ-দুতার্তে সংঘাত বাড়ছে

প্রকাশিত: ১২:২৩, ৩ এপ্রিল ২০১৯

ফিলিপিন্সে চার্চ-দুতার্তে সংঘাত বাড়ছে

ফিলিপিন্সের প্রেসিডেন্ট দুতার্তের মাদকবিরোধী যুদ্ধ গির্জার তরফ থেকে ক্রমবর্ধমান সমালোচনার সম্মুখীন হওয়ায় তার সঙ্গে গির্জার সংঘাত তীব্রতর আকার ধারণ করেছে। প্রায় তিন বছর ধরে প্রেসিডেন্ট এই প্রতিষ্ঠানটিকে আচ্ছামতো ধোলাই দিয়ে চলেছেন। ঈশ্বরকে তিনি আহাম্মক, সাধুপুরুষদের মাতাল, বিশপদের অপদার্থ নির্বোধ আখ্যায়িত করে বলেছেন ওদের মেরে ফেলা উচিত। বস্তুতপক্ষে বেশ ক’জন যাজককে হত্যাও করা হয়েছে। দুতার্তে বলেন, বালক বয়সে তিনি এক যাজকের যৌনলিপ্সার শিকার হয়েছিলেন। ১০ কোটি মানুষের দেশটিতে প্রতি পাঁচজনের চারজন ক্যাথলিক। তথাপি দুতার্তে এর তোয়াক্কা না করে গির্জার বিরুদ্ধে তার বিষোদগার চালিয়ে যাচ্ছেন। ২০১৬ সালে তার নির্বাচনী প্রচারের সময় এটা শুরু করেছিলেন কিন্তু তার পরও লাখ লাখ ক্যাথলিক ভোট লাভ করেছিলেন। তাই বলে অবশ্য মনে করার কারণ নেই যে ফিলিপিনোরা তার এই ভূমিকা সমর্থন করে। এক সমীক্ষায় দেখা গেছে ৮৩ শতাংশ উত্তরদাতা ঈশ্বরের বিরুদ্ধে তাঁর অবমাননাপূর্ণ কথাবার্তাকে অশ্লীল বলে মনে করে। তথাপি তাকে বিরত রাখা যায়নি এবং তার মর্যাদাও খুব একটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। ষোড়শ শতাব্দীতে স্পেনের ফিলিপিন্স দখলের মধ্য দিয়ে সে দেশে ক্যাথলিক মতবাদের আগমন। ঔপনিবেশিক শক্তি ক্যাথলিক মতবাদকে রাষ্ট্রের সঙ্গে অবিচ্ছেদ্যভাবে যুক্ত করে এবং তখন থেকে গির্জা বিপুল সম্পদ, জমি ও মর্যাদার অধিকারী। জনগণকে প্রভাবিত করার শক্তি গির্জা কতখানি রাখে তার প্রমাণ পাওয়া গিয়েছিল ম্যানিলার সাবেক আর্চবিশপ কার্ডিনাল জেইমে সিনের সময়। ১৯৮৬ সালে তার ডাকে ধর্মভীরু ক্যাথলিকরা একনায়ক প্রেসিডেন্ট মার্কোসকে উৎখাত করতে রাজপথে বিশাল বিশাল বিক্ষোভ মিছিল করেছিল। কার্ডিনাল সিন ২০০১ সালে প্রেসিডেন্ট জোসেফ এসট্রাডাকে উৎখাতেও ভূমিকা রেখেছিলেন। গির্জার সেই গৌরবময় দিন গত হয়েছে। ক্যাথলিক চার্চ আজ পপুলিস্ট প্রেসিডেন্ট দুতার্তের বিরাগভাজন হয়েছে এবং হওয়ার কিছু সঙ্গত কারণও আছে। যাজকরা খোলাখুলি স্বীকার করেন যে, দেশে প্রতি পাঁচজনের প্রায় একজন দরিদ্র সেখানে তাদের সাহায্য করার জন্য গির্জার অনেক কিছুই করা উচিত। দুতার্তের গির্জার ওপর ক্ষ্যাপার একটা কারণ হলো গির্জা দারিদ্র্য লাঘবের উদ্যোগ বাধাগ্রস্ত করতে অনেক কিছুই করেছে। বিশেষ করে গর্ভনিরোধ ব্যবস্থার ব্যাপক প্রচার চালিয়ে তারা জনবিস্ফোরণে সাহায্য করেছে। দুতার্তে গির্জার ভ-ামির অনেক দৃষ্টান্ত দেখিয়েছেন। ফিলিপিন্সের বেশিরভাগ এলিট কলেজ ক্যাথলিক হওয়ায় গির্জা বিত্তবানদের সঙ্গেই অধিক সম্পৃক্ত। গরিবরা তাই মনে করে গির্জা বড়লোকদের জন্য, তাদের জন্য নয়। তা ছাড়া বিত্তবানরা উদারহস্তে গির্জার তহবিলে অর্থ যুগিয়ে থাকে। দুতার্তে আরও বেশি খেপেছেন তার মাদকবিরোধী যুদ্ধের বিরুদ্ধে গির্জার দৃঢ় অবস্থান গ্রহণের কারণে। গির্জা মাদকবিরোধী যুদ্ধে যারা মারা গেছে ও যাচ্ছে তাদের কারণে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এবং বলেছে যে জাতির ওপর এক পিশাচ ভর করেছে। এই পিশাচকে তাড়াতে হবে। দুতার্তে বলেন, পাদ্রীর পোশাকধারীরা যদি প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে বিষোদগার করতে পারে তা হলে তাদেরও পাল্টা কিছু শুনতে হবে। দুতার্তে বিশপদের ‘কুত্তার বাচ্চা’ আখ্যা দেন। বলেন, তারা সমকামীÑ অন্তত বেশিরভাগই। তারা অর্থবিত্ত করায়ত্ত করতে অতি ওস্তাদ। তিনি বলেন, ক্যাথলিক চার্চ ৩ হাজার বছর আগের বিশ্বাসকে আঁকড়ে আছে। তখনকার সেই বিশ্বাস আজকের জীবনে চলে? উল্লেখ করা যেতে পারে যে, ২০১৬ সাল থেকে শুরু হওয়া দুতার্তের মাদকবিরোধী অভিযানে এ পর্যন্ত ২০ হাজারেরও বেশি লোক বিচারবহির্ভূত হত্যার শিকার হয়েছে। চলমান ডেস্ক সূত্র : দি ইকোনমিস্ট
×