ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ভারতে নির্বাচনী প্রচারের কদর্য দিক

প্রকাশিত: ১২:২২, ৩ এপ্রিল ২০১৯

ভারতে নির্বাচনী প্রচারের কদর্য দিক

ভারতে লোকসভা নির্বাচন ঘনিয়ে আসছে। নির্বাচনী প্রচারণাও এখন তুঙ্গে। যত দিন যাচ্ছে প্রচারণায় নোংরা কৌশল ও কদর্যতাও বাড়ছে। মারপিট, খুন খারাবি, হামলা মামলা নির্বাচনের সৌন্দর্যকে ম্লান করে দিচ্ছে। তাঁর একটা দৃষ্টান্ত পশ্চিমবঙ্গের টালমাটাল রাজনীতি। ভারতের এই রাজ্যটিতে রাজনৈতিক গু-ামি দীর্ঘদিনের বৈশিষ্ট্য। তবে সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেসের প্রতিষ্ঠাতা ও চালিকাশক্তি মমতা ব্যানার্জি ২০১১ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকে এই রাজনৈতিক গু-ামি বেড়েছে। সব ধরনের রাজনৈতিক গালিগালাজ, অসদাচরণ, ক্ষমতার অপব্যবহারও বেড়ে চলেছে। তৃণমূলের মামলা হামলার শিকার অনেকে উপায়ন্তর হয়ে বিজেপির পক্ষপুটে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছে। মমতার দল হয়ত রাজপথে ভয়াল পেশীশক্তি প্রদর্শনের ক্ষমতা রাখে। তবে দলটি জাতীয় দল নয়Ñ আঞ্চলিক দল এবং সেই হিসাবে অন্যান্য আকর্ষণীয় বৈশিষ্ট্যের অভাব আছে দলটির। সেদিক থেকে বিজেপি অনেক সুবিধাজনক অবস্থায় আছে। অর্থের কথাই ধরা যাক। বিজেপি সদস্য সংখ্যা ১০ কোটিরও বেশি। এদের মধ্যে এমন অনেকে আছে যারা মোদির আনুকূল্য লাভের জন্য লাইন ধরে দাঁড়িয়ে আছে। গত বছর বিজেপির পরবর্তী শক্তিধর পাঁচটি দল একত্রে যত চাঁদা সংগ্রহ করতে পেরেছে তার চারগুণ বেশি চাঁদা বিজেপি একাই আদায় করেছে। এই নির্বাচনে যেখানে মোট ৭০০ থেকে এক হাজার কোটি ডলার অর্থ ব্যয় হবে সেখানে এই পার্থক্যটা এক বিশাল পার্থক্য। ৫৪৫ আসনের লোকসভার প্রতিটি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য প্রত্যেক দলকে সর্বোচ্চ ১ লাখ ডলারের সমপরিমাণ অর্থ ব্যয়ের আনুষ্ঠানিক অনুমতি দেয়া হয়েছে। এই ব্যয়সীমা যদি কঠোরভাবে মেনে চলা হয়ও বা তথাপি বিজেপি সেখানে ৫শ’ কি তারও বেশি প্রার্থীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য নামাচ্ছে সেখানে অন্য আর কোন দল এত বেশি প্রার্থী নামানোর সঙ্গতি রাখে না। নির্বাচন কমিশন এই অর্থব্যয়ের বিষয়টি নজরদারি করার যথাসাধ্য চেষ্টা চালাবে সত্য। তথাপি খুব কম সংখ্যক মানুষই বিশ্বাস করে যে বড় কোন দল এই ব্যয়সীমা মেনে চলবে। অন্যান্য দিক দিয়েও অর্থ শক্তিশালী হাতিয়ার হিসেবে কাজ করে। গত ৭ মার্চ বিজেপি ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস পত্রিকায় পুরো দশ পৃষ্ঠা বিজ্ঞাপন দিয়েছিল। ‘দি হিন্দু’ পত্রিকাকে কোন বিজ্ঞাপন দেয়নি। কারণ আর কিছুই নয়, মোদির অনুমোদিত একটি ব্যয়বহুল প্রতিরক্ষা চুক্তি নিয়ে পত্রিকাটির তথ্যানুসন্ধান। গত ফেব্রুয়ারি মাসে কর্নাটকে একটি রেকর্ডিং বেরোয় যেখানে নাকি বিজেপির এক নেতার কথাবার্তা ছিল। তাতে নাকি সেই নেতা রাজ্য সরকারকে সরিয়ে বিজেপিকে ক্ষমতায় বসানোর লক্ষ্যে রাজ্যবিধানসভা সদস্যদের কিনে নেয়ার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। সেই প্রস্তাব নাকি ছিল বিধানসভার একজন সদস্যের দাম ৩০ লাখ ডলার ও স্পীকারের দাম ৭০ লাখ ডলার। সরকারে থাকার একটা সুবিধাও আছে। মমতার বিরোধীদের অভিযোগ, রাজনৈতিক বিরোধীদের বিরুদ্ধে পশ্চিমবঙ্গের পুলিশের মামলা দায়ের করা একটা সাধারণ ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। অবশ্য তৃণমূল কংগ্রেসের প্রতি আনুগত্য ঘোষণা করলেই মামলা তুলে নেয়া হয়। লোকসভায় পশ্চিমবঙ্গের আসন সংখ্যা ৪২। এই ৪২ আসনে তৃণমূল প্রার্থীদের মধ্যে ৯ জনই অন্য দল থেকে ভেগে আসা। প্রতিপক্ষের কেউ কেউ তো এর চেয়েও গুরুতর অপকর্মের অভিযোগ কর থাকেন্ গত বছর স্থানীয় পরিষদ নির্বাচন ছিল সবিশেষ সহিংসতাপূর্ণ, ভোটারদের হুমকি ধমকি ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করা হয়েছিল। এর বিরুদ্ধে ব্যাপক বিক্ষোভ হয়। রাজ্য পুলিশ তো বশেই আছে। কেন্দ্রীয় রিজার্ভ পুলিশ (সিআরপি) যে হস্তক্ষেপ করবে সেটাও ঠেকিয়ে দেয়া হয়েছিল। কলকাতার নিষিদ্ধ পল্লী সোনাগাছির মেয়েদের বাসভর্তি করে এনে তাদের মনোরঞ্জন করা হয়েছিল। অবাক হবার কিছু নেই দলের এক সিনিয়র নেতা যখন বলেন, মমতা কলাগাছ দাঁড় করিয়ে দিলে সেটাও নির্বাচিত হবে। তৃণমূল কংগ্রেসের দাবি যে তারা অপপ্রচার ও অপকৌশলের শিকার। যেমন তৃণমূলের কিছু নেতা বিজেপিতে যোগ দেয়ার পর সিবিআই ছ’বছর আগে কলকাতায় তোলপাড় সৃষ্টি করা ৪শ’ কোটি ডলারের পিরামিড কেলেঙ্কারিতে তাদের জড়িত থাকার বিষয়ে তদন্ত হঠাৎ করে বন্ধ করে দেয়। এদিকে নির্বাচন ঘনিয়ে আসায় তদন্তকারীরা বরং অন্যান্য নিরূত্তাপ মামলা পুনরুজ্জীবিত করার ব্যাপারেই বরং বেশি উৎসাহী হয়ে উঠেছে। বিজেপির একমাত্র জাতীয় পর্যায়ের প্রতিদ্বন্দ্বী কংগ্রেসকে পাঁচ প্রজন্ম ধরে নেতৃত্বদানকারী গান্ধী পরিবারের বিরুদ্ধে হোয়ারি দুর্নীতি কেলেঙ্কারি মামলা হঠাৎ করে আবার চালু করা হয়েছে। অতীতের বেশ কিছু লেনদেনের ব্যাপারে প্রিয়াঙ্কার স্বামী রবার্ট ভদ্রকে সম্প্রতি বারবার সারাদিন ধরে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করা হয়। কংগ্রেসের অন্য অর্ধডজন নেতার বিরুদ্ধে মামলা বছরের পর বছর ধরে নিশ্চুপ থাকার পর সম্প্রতি সহসা আবার প্রাণ ফিরে পেয়েছে। কংগ্রেস নেতারাও যে ধোঁয়া তুলসী পাতা তাও না। রাহুল গান্ধী তো অহরহই মোদিকে চোর আখ্যায়িত করে থাকেন। বিজেপি নেতারাও তাকে ছেড়ে কথা বলেন না। বলেন, রাহুল একজন ডাহা মিথ্যাবাদী। এমনিভাবে নির্বাচনী প্রচারে ভারতের রাজনৈতিক দলগুলোর পরস্পরের বিরুদ্ধে কাঁদা ছোড়াছুড়ি চলছেই। চলমান ডেস্ক সূত্র : দি ইকোনমিস্ট
×