ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

আরব বিশ্বে আবারও বসন্তের হাওয়া!

প্রকাশিত: ১২:২২, ৩ এপ্রিল ২০১৯

আরব বিশ্বে আবারও বসন্তের হাওয়া!

আরব বিশ্বে আবারও বিক্ষোভে প্রতিবাদের জোয়ার উঠেছে। ‘জনগণ সরকারের পরিবর্তন চায়।’ আলজিরিয়ায় হাজারো বিক্ষোভকারীর কণ্ঠে এমন দাবি উঠেছে। তারা আবদুল আজিজ বুতেফ্লিকার ২০ বছরের শাসনের অবসান চায়। তাদের দাবি প্রতিধ্বনিত হচ্ছে সুদানে। যেখানে তিন মাস ধরে চলমান বিক্ষোভ আন্দোলনে ওমর আল বশিরের তিন দশকের শাসনের ভিত কেঁপে উঠেছে। বিক্ষোভ হচ্ছে ইরাক, জর্দান, লেবানন, মরক্কো, তিউনিসিয়া ও ফিলিস্তিনী ভূখ-ে। বিক্ষোভকারীরা উন্নততর শাসন ব্যবস্থা চায়, স্বৈরাচারের অবসান চায়। এ অঞ্চলের কর্তৃত্ববাদী সরকারগুলো শক্তির আশ্রয় নিয়ে সেই বিক্ষোভ স্তব্ধ করে দেয়ার পাঁচ বছর পর আরব রাজপথ আবার তার কণ্ঠ ফিরে পাচ্ছে। এ থেকেই আরব বসন্তের আরেক ধারাবাহিক রূপে কথা আবার শোনা যাচ্ছে। ২০১১ সালের বিক্ষোভগুলো ছিল স্বতঃস্ফূর্ত, জনগণের ব্যাপক অংশগ্রহণ ছিল এবং তাতে নেতৃত্ব ছিল না। সেই একই অভাব অভিযোগ আজকের অসন্তোষের ইন্ধন হিসেবে কাজ করছে। তবে সেই সময় ও এই সময়কার প্রেক্ষাপট ভিন্ন। আরব বসন্তের পর যে যুদ্ধবিগ্রহ ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়েছিল তাতে সংগঠক, কর্মী, সমর্থক ও তাদের আঞ্চলিক পৃষ্ঠপোষকদের উদ্দীপনায় ভাটা পড়ে যায়। ওদিকে স্বৈরাচারী শাসকরা স্বদেশে বিক্ষোভ দমন ও অন্যত্র বিক্ষোভের বিস্তার রোধে নির্যাতন নিপীড়নের হাতিয়ার শাণিত করেছে। তুরস্ক, ইরান ও কাতার ২০১১ সালের আরব গণঅভ্যুত্থান ছড়াতে সাহায্য করেছিল। কিন্তু আঞ্চলিক উচ্চাভিলাষের কারণে তারা তাদের নিজস্ব নিরাপত্তা উদ্বেগ থেকে পিছনের আসনে সরে আসে। প্রেসিডেন্ট এরদোগান ২০১৬ সালে স্বদেশে বিক্ষোভের পর নিজের নিয়ন্ত্রণ কঠোরতর করে তোলেন। তাঁর ইসলাম রক্ষা গণতন্ত্রের মডেল স্বৈরাচারের আরেক রূপ। ইরান আরব বসন্তের আগুন ছড়াতে উৎসাহিত হয়ে উঠেছিল। কিন্তু সেই আগুনে সিরিয়ায় তার নিজের মিত্ররা পুড়ে যেতে উদ্যত হয়। ইরানের নিজের ঘরও আজ বিক্ষোভে কেঁপে উঠছে। কাতার আরব বসন্তে ইন্ধন দিলেও আজ নিজেই প্রতিবেশীদের দ্বারা কঠিনভাবে এমন অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছে যে আলজিরিয়ার গোলযোগে তারা চুপ মেরে গেছে। আট বছর আগে কাতারী স্যাটেলাইট টিভি নেটওয়ার্ক ছিল আরব বসন্তের সবচেয়ে জোরালো বাহন। ঘটনাবলীর বস্তুনিষ্ঠ ও বিশদ অনুসন্ধানী বিবরণ গোটা অঞ্চলের জনগণের ওপর প্রভাব ফেলে। সেই আল জাজিরা নানা ধরনের চাপে আজ বেশ খানিকটা নিষ্প্রভ। তাই আরব বিশ্বের দ্বিতীয় ও তৃতীয় সর্বাধিক জনবহুল দেশ যথাক্রমে আলজিরিয়া ও সুদানের বর্তমান গণআন্দোলনকে যেভাবে পরিবেশন করছে তা যৎসামান্য। কেউ কেউ এটাকে আরব বিশ্বের প্রান্তভাগে নিক্ষিপ্ত ঘটনা হিসেবে মনে করছে। ওদিকে ক্ষমতাসীন স্বৈরাচারীরা স্বাধীন মিডিয়ার ওপর চড়াও হয়েছে। তথ্য দফতরগুলো সংবাদ শিরোনাম ঠিক করে দিচ্ছে। বিদেশী সাংবাদিক আগমন নিষিদ্ধ করছে। স্থানীয় যেসব সাংবাদিক সহযোগিতা করছে না তাদের হয়রানি করছে। অনুসন্ধানী রিপোর্টাররা যারা সরকারের সমালোচক তাদের প্রায়শই রাষ্ট্রীয় মিডিয়ায় সন্ত্রাসবাদী ও বিশ্বাসঘাতক আখ্যা দেয়া হয়েছে। কাউকে কাউকে নির্যাতনও করা হচ্ছে। জামাল খাশোগীর মতো ব্যক্তিরা যারা পালিয়ে গিয়েছে তাদের ধরার জন্য সৌদি আরব একটি বিশেষ গ্রুপ গঠন করেছে। আরব বসন্তের চালিকাশক্তি সোশ্যাল মিডিয়া এখনও রাজপথে লোক নামাতে পারছে। এ অঞ্চলের মধ্যে আলজিরিয়ায় সর্বাধিক ফেসবুক ব্যবহার করা হয়। তবে স্বৈরাচারী শাসকরা এখন সোশ্যাল মিডিয়াকে নিজেদেরও স্বার্থে কাজে লাগাচ্ছে। সৌদি আরব ও অন্যান্য উপসাগরীয় দেশ শত শত ভুয়া সোশ্যাল মিডিয়া এ্যাকাউন্ট ও বই খুলে জনগণকে বিভ্রান্ত করার মতো তথ্য পরিবেশন করছে। স্পাইওয়্যারের মাধ্যমে হুমকি ধমকি দেয়া, গালিগালাজ করা এবং সরাসরি গ্রেফতারের মাধ্যমে বিরোধীদের বার্তা প্রচারে বাধাগ্রস্ত করা হচ্ছে। তাছাড়া তারা পুরনো ধারার নির্যাতনও বেছে নিয়েছে। আলজিরিয়ার বিক্ষোভের প্রেক্ষাপটে মিসরের প্রেসিডেন্ট হুঁশিয়ার করে দিয়েছেন যে সেই বিক্ষোভের অনুকরণে স্বদেশে যেন কিছুই করা না হয়। সুদানের নেতা বাশিরকে পদত্যাগের আহ্বান জানানোর জন্য সম্প্রতি বাহরাইনে এক রাজনীতিককে ছয় মাসের কারাদ- দেয়া হয়েছে। সূত্র : দি ইকোনমিস্ট
×