ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

অন্তরালের তারকা বেঞ্জামা...

প্রকাশিত: ১২:১২, ৩ এপ্রিল ২০১৯

অন্তরালের তারকা বেঞ্জামা...

এমন অনেক খেলোয়াড় আছেন যারা নীরবে দেশ কিংবা ক্লাবকে সেবা দিয়ে যান। তারকাদের আড়ালে তাদের নিয়ে আলোচনা হয় কম। বর্তমান ফুটবল বিশ্বে এমনই একজন ফুটবলারের নাম করিম বেঞ্জামা। ফরাসী এই ফরোয়ার্ড রিয়াল মাদ্রিদে ধারাবাহিকভাবে দ্যুতি ছড়ালেও তাকে নিয়ে হৈহল্লুড় খুব একটা হয় না। তবে চলমান মৌসুমে ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো দলছুট হওয়ার পর কিছুটা হলেও লাইলাইটে আছেন বেঞ্জামা। ফরাসী এই ফরোয়ার্ড ধারাবাহিকভাবে দ্যুতি ছড়িয়ে চলেছেন। রবিবার রাতে স্প্যানিশ লা লীগায় রিয়াল মাদ্রিদকে পাইয়ে দিয়েছেন অসাধারণ জয়। ঘরের মাঠ সান্টিয়াগো বার্নাব্যুতে ড্র হতে যাওয়া ম্যাচের শেষ মুহূর্তে গোল করে নবাগত হুয়েস্কার বিরুদ্ধে ৩-২ গোলের জয় উপহার দিয়েছেন রিয়ালকে। সেই সঙ্গে গৌরবময় রেকর্ডেরও মালিক হয়েছেন। প্রথমবারের মতো লা লীগায় উঠে আসা হুয়েস্কার মাঠে গত ডিসেম্বরে প্রথম লেগের ম্যাচে গ্যারেথ বেলের একমাত্র ওগালে জিতেছিল রিয়াল। এবার নিজেদের মাঠে পয়েন্ট খোয়ানোর শঙ্কা সৃষ্টি হলেও বেঞ্জামার নৈপুণ্যে পূর্ণ তিন পয়েন্ট নিয়ে মাঠ ছেড়েছে গ্যালাক্টিকোরা। ঘরের মাঠে শুরুতেই বড় ধাক্কা খায় জিদানের দল। পয়েন্ট তালিকার তলানিতে থাকা হুয়েস্কা তৃতীয় মিনিটেই গোল করে এগিয়ে যায়। ডান দিক দিয়ে আক্রমণে ওঠা আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ড এসেকিয়েল আভিলা একজনকে কাটিয়ে ডি বক্সে বল বাড়ান। এরপর দারুণ শটে রিয়াল গোলরক্ষক লুকা জিদানকে পরাস্ত করেন কলম্বিয়ার ফরোয়ার্ড জুয়ান কামিলা হার্নান্দেজ। ম্যাচের ২৫ মিনিটে গোছানো আক্রমণে সমতায় ফেরে রিয়াল। করিম বেঞ্জামার শট গোলরক্ষক ঝাঁপিয়ে রুখলেও বিপদমুক্ত করতে ব্যর্থ হন। ফাকায় পেয়ে গোলমুখে বল পাঠান তরুণ ফরোয়ার্ড ব্রাহিম ডিয়াস। এরপর অনায়াসেই বল জালে পাঠান মিডফিল্ডার ইস্কো। প্রথমার্ধ শেষ হয় ১-১ গোলে সমতাবস্থায়। বিরতির পর সংঘবদ্ধ আক্রমণে ৬২ মিনিটে এগিয়ে যায় রিয়াল। গ্যারেথ বেলের ক্রসে হেডে গোলমুখে বল বাড়ান বেঞ্জামা। এরপর আলতো টোকায় বল জালে পাঠান দানি সেবাইয়োস। এগিয়ে যাওয়ার আনন্দ বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি রিয়ালের। ম্যাচের ৭৪ মিনিটে বাঁ দিক থেকে স্বদেশি মিডফিল্ডার মোই গোমেসের ক্রসে লাফিয়ে হেডে চোখ ধাঁধানো গোল করে হুয়েস্কাকে সমতায় ফেরান স্প্যানিশ ডিফেন্ডার জ্যাভিয়ের ইটেল্টা। এর ফলে পয়েন্ট খোয়ানোর শঙ্কায় পড়ে যায় স্বাগতিকরা। কিন্তু ম্যাচ শেষের এক মিনিট আগে দারুণ গোল করে রিয়ালকে মূল্যবান তিন পয়েন্ট পাইয়ে দেন বেঞ্জামা। মার্সেলোর পাস ডি বক্সে পেয়ে দারুণ শটে লক্ষ্যভেদ করেন বিশ্বকাপে ফ্রান্সের হয়ে খেলার সুযোগ না পাওয়া এই ফরোয়ার্ড। গোলটি করে লা লীগায় সব প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে গোল করার দারুণ এক কীর্তি গড়েছেন বেঞ্জামা। ফ্রান্সের ক্লাব লিওঁ থেকে ২০০৯ সালে রিয়ালে যোগ দেওয়ার পর স্পেনের শীর্ষ লীগে এ পর্যন্ত ৩৪টি দলের বিপক্ষে খেলেছেন বেঞ্জামা। সবগুলো দলের বিপক্ষেই গোল করার অনন্য রেকর্ড এখন তার। এমন রেকর্ড নেই লা লীগার সর্বকালের সেরা গোলদাতা বার্সিলোনার অধিনায়ক লিওনেল মেসি বা সব প্রতিযোগিতা মিলে রিয়ালের সর্বকালের সেরা গোলদাতা ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোরও। ২০০৪ সালের অক্টোবরে এস্পানিওলের বিপক্ষে অভিষেকের পর থেকে এ পর্যন্ত লা লীগায় ৪০টি দলের মুখোমুখি হয়েছেন ৩১ বছর বয়সী মেসি। এর মধ্যে কাডিস, মুরসিয়া ও হুয়েস্কার বিপক্ষে গোল করতে পারেননি পাঁচবারের বর্ষসেরা ফুটবলার। অন্যদিকে গত বছর রিয়াল ছেড়ে জুভেন্টাসে পাড়ি জমানো রোনাল্ডো ৩৩টি প্রতিপক্ষের বিপক্ষে খেলে ৩২ দলের বিরুদ্ধে গোল করেছেন। গোল করতে পারেননি একমাত্র লেগানেসের জালে। লা লীগায় মুখোমুখি হওয়া সব দলের বিপক্ষে গোলের কীর্তি আছে মেক্সিকোর সাবেক ফরোয়ার্ড হুগো সানচেজেরও। তবে মাদ্রিদের দুই ক্লাব রিয়াল ও এ্যাটলেটিকোতে দীর্ঘদিন খেলা এই ফুটবলার প্রতিপক্ষ হিসেবে পেয়েছেন ৩৩টি দলকে। মোট প্রতিপক্ষের সংখ্যা বিবেচনায় তাই হুগোকেও ছাড়িয়ে গেছেন বেঞ্জামা। ২০১৮ বিশ্বকাপের আগে বড় মঞ্চে বলার মতো সাফল্য ছিল না ফ্রান্সের। ২০০৩ সালে ফিফা কনফেডারেশন্স কাপ জয়ের পর বড় আসরে আর সাফল্য পায়নি দেশটি। এবার ব্রাজিল বিশ্বকাপেও তেমন বড় লক্ষ্য ছিল না ফরাসীদের! তবে প্রথম পর্ব ও শেষ ষোলোর পারফরমেন্স দেশটির স্বপ্নের পরিধি বাড়িয়ে দিয়েছিল। এ কারণেই কোয়ার্টর ফাইনালে জার্মানিকে হারিয়ে সেমিফাইনালে খেলার স্বপ্ন দেখেছিল ১৯৯৮ বিশ্বকাপের চ্যাম্পিয়নরা। কিন্তু স্বপ্নটা স্বপ্নই রয়ে যায়। এই ব্যর্থতার অন্যতম কারণ দলের সেরা ফুটবলাররা নিজেদের মেলে ধরতে না পারা। বিশেষ করে সেরা তারকা করিম বেঞ্জামা অনেক সহজ সুযোগ নষ্ট করে দলকে ডুবিয়েছেন। মিডফিল্ডার পল গোপবাও খেলতে পারেননি প্রত্যাশা মতো। প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ খেলতে এসে তাই খালি হাতেই ফিরতে হয় বেঞ্জামা-পোগবাকে। অথচ এদের পায়ের জাদুতে ভর করেই বড় স্বপ্ন বুনতে শুরু করেছিল ফরীসরা। ব্যর্থ হলেও রিয়াল মাদ্রিদ তারকা বেঞ্জামার চোখ ছিল ২০১৮ বিশ্বকাপে। কিন্তু তাকে দলেই নেননি ফরাসী কোচ দিদিয়ের দেশম। তবে ঠিকই দলে থেকে মাঠ মাতান পোগবা। শেষ পর্যন্ত গত বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়নও হয় ফ্রান্স। যৌন কেলেঙ্কারির কারণে ২০১০ দক্ষিণ আফ্রিকা বিশ্বকাপ খেলতে পারেননি বেঞ্জামা। ওই বিশ্বকাপের ৩০ সদস্যের ফরাসী দলে থাকলেও শেষ পর্যন্ত চূড়ান্ত দলে সুযোগ পাননি। যে কারণে চারটি বছর বেঞ্জামার গেছে অসহনীয় মানসিক যন্ত্রণার মধ্যে। রিয়াল মাদ্রিদে অসাধারণ মৌসুম কাটানোর পর আসেন পেলের দেশে। এখানেও গ্রুপ পর্বে দুর্দান্ত পারফরমেন্স প্রদর্শন করে স্বপ্নের পরিধিটা আরও বাড়িয়ে নেন। কিন্তু চেনা প্রতিপক্ষ জার্মানদের কাছে হেরে পথচলা শেষ হয় বেঞ্জামাদের। চার বছর পর রাশিয়ায় ফ্রান্স চ্যাম্পিয়ন হলেও সুযোগ হয়নি বেঞ্জামার। যে কারণে ক্যারিয়ারে বড় একটা অতৃপ্তি রয়ে গেছে তার।
×