ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

এত অভিযানের পরও সাড়ে ৮ লাখ পিস ইয়াবা উদ্ধার

প্রকাশিত: ১১:৪০, ৩ এপ্রিল ২০১৯

এত অভিযানের পরও সাড়ে ৮ লাখ পিস ইয়াবা উদ্ধার

গাফফার খান চৌধুরী ॥ র‌্যাবের অভিযানে প্রায় সাড়ে আট লাখ পিস ইয়াবাসহ তিন মাদক ব্যবসায়ী গ্রেফতারের ঘটনায় রীতিমতো তোলপাড় শুরু হয়েছে। বিপুল এই ইয়াবা কেনার টাকা বিদেশ থেকে এসেছে। টানা এক বছর ধরে চলমান সাঁড়াশি অভিযানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে গোলাগুলিতে দুই শতাধিক ইয়াবা ব্যবসায়ীর মৃত্যু হয়। গ্রেফতার হয় প্রায় পঁচিশ হাজার ইয়াবা ব্যবসায়ী। এর পরেও এত বড় ইয়াবার চালান ধরা পড়ার ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর মধ্যে রীতিমতো হৈ চৈ পড়ে গেছে। এ ধরনের আরও চালান দেশে প্রবেশ করে থাকতে পারে বলে ধারণা করছে তারা। আসন্ন বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে ইয়াবার ব্যাপক চাহিদার কথা চিন্তা করে বরিশাল থেকে নদী পথে লঞ্চে করে চালানটি ঢাকায় আনা হচ্ছিল। সাঁড়াশি অভিযানের কারণে রাস্তা পরিবর্তন করেছে ইয়াবা কারবারিরা। সড়কের পরিবর্তে নদী পথকে বেছে নিয়েছে তারা। প্রায় দশ বছর ধরে ইয়াবা ব্যবসায়ীরা কক্সবাজার থেকে বরিশাল, পটুয়াখালী ও বরগুনার নদী পথে ইয়াবার চালান আনছে। ইয়াবা ব্যবসায়ীদের বিশাল একটি দল আত্মসর্মপণ করলেও ইয়াবা ব্যবসা থেমে নেই। নতুন নতুন ব্যক্তি নতুন করে ইয়াবা ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ছে। মঙ্গলবার কাওরান বাজারে র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে এক আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে এমনটাই জানালেন বাহিনীটির লিগ্যাল এ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান। তিনি বলছেন, গতবছরের ৩ মে থেকে সারাদেশে মাদকবিরোধী সাঁড়াশি অভিযান চলছে। অভিযানে এ পর্যন্ত মাদকের সঙ্গে জড়িত প্রায় ২০ হাজার জন গ্রেফতার হয়েছে। উদ্ধার হয়েছে ৭৫ লাখেরও বেশি ইয়াবাসহ অন্যান্য মাদক। উদ্ধারকৃত মাদকের মূল্য প্রায় সাড়ে চার শ’ কোটি টাকা। এছাড়াও র‌্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত মাদকবিরোধী প্রায় আড়াই হাজার অভিযান চালিয়েছে। অভিযানে সাড়ে ৮ হাজারের বেশি জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদ- দেয়া হয়েছে। অর্থদ- করা হয়েছে ১২ কোটি টাকা। অভিযান এখনও চলমান আছে। তারই ধারাবাহিকতায় র‌্যাব-১ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল সারওয়ার-বিন-কাশেমের সার্বিক তদারকিতে একদল র‌্যাব সদস্য মঙ্গলবার ভোর প্রায় ছয়টার দিকে রাজধানীর সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে সপ্তবর্ণা লঞ্চে অভিযান চালায়। অভিযানে তুহিন হোসেন (২৫), গ্রাম- বলিয়াতলী, পোস্ট- ছবিপুর, থানা- মুলাদী, জেলা- বরিশাল ও একই গ্রামের বাসিন্দা সবুজকে (২৬) গ্রেফতার করা হয়। তাদের কাছ থেকে বিশেষভাবে লাগেজে প্যাকিং করা ৫ লাখ ৫ হাজার পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়। এদের দেয়া তথ্য মোতাবেক মঙ্গলবার দুপুর একটার দিকে উত্তরার আব্দুল্লাহপুর থেকে গ্রেফতার করা হয় তাদের সহযোগী আরেক ইয়াবা ব্যবসায়ী একই গ্রামের বাসিন্দা শাহজাহানকে (৩৫)। তার কাছ থেকে উদ্ধার হয় ৩ লাখ ৪০ হাজার পিস ইয়াবা। গ্রেফতারকৃতদের বরাত দিয়ে র‌্যাব কর্মকর্তা মুফতি মাহমুদ খান জানান, ইয়াবাগুলো মিয়ানমারের একটি সংঘবদ্ধ মাদক চোরাচালান চক্রের। চক্রের সদস্যরা মিয়ানমার সীমান্তের মাঝ নদীতে দুটি ইঞ্জিনচালিত ট্রলারযোগে এসে ইয়াবাগুলো হস্তান্তর করে। দীর্ঘদিন ধরে সাঁড়াশি অভিযানের কারণে ইয়াবা ব্যবসায়ীরা সড়ক পথে ইয়াবা স্থানান্তর কমিয়ে দিয়েছে। ছোট ছোট চালান সড়কপথে পাঠায়। আর বড় বড় চালান স্থানান্তরের জন্য তারা বেছে নিয়েছে নদী পথকে। গত দেড় বছর ধরে তারা এভাবেই নদীপথে ইয়াবা স্থানান্তর করছে। বড় চালান হওয়ার কারণে তারা ইঞ্জিনচালিত নৌকা দুইটি বিভিন্ন নদীপথ দিয়ে ঘুরিয়ে চাঁদপুর হয়ে পটুয়াখালীর উপকূলীয় এলাকায় নিয়ে আসে। সেখান থেকে তারা সুবিধামতো নদী পথে পাঁচ লাখ ৫ হাজার পিস ইয়াবা নিয়ে লঞ্চটিতে করে ঢাকায় আসছিল। অপরজন তিন লাখ ৪০ হাজার পিস ইয়াবা নিয়ে স্থল পথে করে ঢাকায় আসছিল। তাদের টার্গেট ছিল যাতে একটি চালান ধরা পড়লেও, আরেকটি চালান ধরা না পড়ে। এতে করে একটি চালান বেঁচে গেলে তা বিক্রি করে পুরো টাকা ওঠে যাবে। এমন পরিকল্পনা থেকেই থেকে তারা দুইভাবে ইয়াবাগুলো ঢাকায় আনছিল। সামনে পহেলা বৈশাখ। ইয়াবা চাহিদা থাকবে। এমন ধারণা থেকেই পহেলা বৈশাখকে সামনে রেখে বড় এই চালানটি আনছিল। গ্রেফতারকৃতদের বরাত দিয়ে র‌্যাব কর্মকর্তা মাহমুদ খান বলছেন, গ্রেফতারকৃতদের চক্রটির সদস্য দশজন। চক্রটি দেড় বছর ধরে এভাবেই ইয়াবার ব্যবসা করে আসছিল। ইয়াবাগুলো ঢাকার একটি অভিজাত এলাকার এক বাড়িতে জমা করার কথা ছিল। সেখান থেকে চাহিদা মোতাবেক সরবরাহের পরিকল্পনা ছিল। অভিজাত এলাকার ওই ব্যক্তির বাড়ির ঠিকানা এবং জড়িত ব্যক্তির নাম পাওয়া গেছে। তাকে যেকোন সময় গ্রেফতার করা হতে পারে। এমনকি সুবিধাজনক সময়ে তাকে গণমাধ্যমের সামনে হাজিরও করা হতে পারে। জব্দ হওয়া মাদকের চালানটির পেছনে ব্যয় হওয়া পুরো টাকা বিদেশ থেকে এসেছে বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। চক্রটি এখন পর্যন্ত ৬টি বড় বড় চালান ঢাকায় এনেছে।
×