ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বিএফআরআই উদ্ভাবিত চারটি মেরি কালচার প্রযুক্তি মাঠপর্যায়ে বাস্তবায়নের উদ্যোগ

বঙ্গোপসাগরে ৪৩০ প্রজাতির মাছ শনাক্ত

প্রকাশিত: ১১:৩৬, ৩ এপ্রিল ২০১৯

বঙ্গোপসাগরে ৪৩০ প্রজাতির মাছ শনাক্ত

এইচএম এরশাদ, কক্সবাজার ॥ সামুদ্রিক মৎস্য সম্পদের সঠিক ব্যবস্থাপনা কৌশল জানা না থাকায় কাক্সিক্ষত উৎপাদন থেকে বঞ্চিত হচ্ছে বলে মনে করছেন সামুদ্রিক মৎস্য বিজ্ঞানীরা। তবে সেই ব্যবস্থাপনা কৌশল রপ্ত করার জন্য গত ৩ বছর ধরে বিজ্ঞানীরা নিবিড় গবেষণা চালাচ্ছেন। ইতোমধ্যে বিজ্ঞানীদের অনুসন্ধানে বঙ্গোপসাগরে ৪৩০ প্রজাতির মাছ শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে প্রায় সাড়ে ৩শ’ মাছের ক্যাটালগিং করা হয়েছে। বাকিগুলোর ক্যাটালগিং এর পাশাপাশি আরও নতুন প্রজাতির মাছের সন্ধানে বঙ্গোপসাগরে বিজ্ঞানীদের অনুসন্ধান অব্যাহত রয়েছে। বাংলাদেশের সমুদ্র সীমা দেশের মূল ভূ-খ-ের প্রায় সমান। অথচ দেশের মোট মৎস্য উৎপাদনের মাত্র ১৫.৪২% ভাগ অবদান সামুদ্রিক মাছের। বঙ্গোপসাগরের এ বিশাল জলরাশি থেকে এ উৎপাদন খুবই অপ্রতুল। সূত্র জানায়, বিএফআরআই উদ্ভাবিত চারটি মেরি কালচার প্রযুক্তি মাঠপর্যায়ের বিজ্ঞানীদের কাছে হস্তান্তর কর্মশালায় মৎস্য বিজ্ঞানীরা এ তথ্য তুলে ধরেন। কক্সবাজারে অনুষ্ঠিত উক্ত প্রশিক্ষণ কর্মশালায় আরও বলা হয়, আমাদের সমুদ্রের আয়তন ১ লাখ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গকিলোমিটার হলেও মৎস্য উৎপাদনে সামুদ্রিক মাছের অবদান খুবই অপ্রতুল। এ কারণে বর্তমান সরকার সামুদ্রিক মৎস্য উৎপাদন বাড়াতে ব্লু-ইকোনমি জোরদারের যে পরিকল্পনা নিয়েছে তারই লক্ষ্যে এখন নতুন নতুন প্রযুক্তি বিষয়ে জোর গবেষণা চলছে। আর গবেষণার মাধ্যমে অর্জিত দেশের মৎস্য বিজ্ঞানীদের সেসব সফল প্রযুক্তি মাঠপর্যায়ে বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। এরই অংশ হিসেবে বুধবার দেশের উপকূলীয় ৬ জেলার ৩০ মৎস্য কর্মকর্তাকে কক্সবাজারে দিনব্যাপী প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিএফআরআই) কক্সবাজারের সামুদ্রিক মৎস্য ও প্রযুক্তি কেন্দ্র মিলনায়তনে কেন্দ্রের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মোঃ জুলফিকার আলীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত কর্মশালায় প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের পরিচালক (প্রযুক্তি হস্তান্তর ও মনিটরিং ইউনিট) ড. ফৌজিয়া ইয়াসমিন। কর্মশালায় বিএফআরআই উদ্ভাবিত চারটি মেরি কালচার প্রযুক্তি মাঠপর্যায়ের বিজ্ঞানীদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। প্রযুক্তিসমূহ হলো- মেকানিক্যাল ফিশ ড্রায়ার ব্যবহারের মাধ্যমে স্বাস্থ্যসম্মত ও গুণগত মানের শুঁটকি তৈরি কৌশল, কাঁকড়া প্রজনন ও চাষ ব্যবস্থাপনা, উপকূলে সামুদ্রিক শৈবাল চাষ ও ব্যবস্থাপনা কৌশল এবং সামুদ্রিক মাছের পোনা উৎপাদনে লাইভ ফিড চাষ ইত্যাদি। কর্মশালায় বিএফআরআই উদ্ভাবিত এসব প্রযুক্তি নিয়ে আলোচনা করেন বিএফআরআই, কক্সবাজারের উপ-পরিচালক ড. আবদুর রাজ্জাক, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের (বিএআরসি) উর্ধতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. যাকীয়াহ রহমান মনি, কক্সবাজারের সামুদ্রিক মৎস্য ও প্রযুক্তি কেন্দ্রের উর্ধতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. শফিকুর রহমান, বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মহিদুল ইসলাম ও জাকিয়া হাসান প্রমুখ। আলোচকরা উল্লেখ করেন যে, উদ্ভাবিত প্রযুক্তিগুলো মাঠপর্যায়ে বাস্তবায়নের জন্য হস্তান্তর করা হলেও এসব প্রযুক্তির আরও উন্নয়ন ঘটানোর জন্য গবেষণা চলমান থাকবে। বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মহিদুল ইসলাম বলেন, হ্যাচারিতে কাঁকড়ার পোনা উৎপাদনে আমরা সফল হলেও আমাদের অর্জিত প্রযুক্তি এখনও অনেক দুর্বল। কাঁকড়া পোনা শতকরা মাত্র এক থেকে দেড় ভাগ বাঁচে। আমাদের লক্ষ্য এ হার শতকরা দশভাগে উন্নীত করা। তবে সী-উইড বা সামুদ্রিক শৈবাল চাষে আমাদের উন্নত বিশ্বের কাতারে ওঠতে বেশি দিন সময় লাগবে না বলে আশা করেন তিনি। প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের পরিচালক ড. ফৌজিয়া ইয়াসমিন বলেন, বর্তমান সরকার ২০২১ সালের মধ্যে দেশকে মধ্যম আয়ের দেশে এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে উন্নীত করার জন্য যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে, তা অর্জনে ব্লু-ইকোনমি তথা সমুদ্র সম্পদের উন্নয়নের উপর জোর দিয়েছে। ২০১২ ও ২০১৪ সালে সমুদ্র সীমা নিয়ে মিয়ানমার ও ভারতের সঙ্গে বিরোধের নিষ্পত্তি হওয়ার পর আমাদের সমুদ্র সম্পদের উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে বহুমুখী গবেষণা শুরু হয়েছে। বিশ্বের কাতারে যেতে হলে প্রযুক্তিগত উন্নয়ন ঘটাতে হবে।
×