ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

এক মিনিটের ঝড়ে-

প্রকাশিত: ১১:০১, ৩ এপ্রিল ২০১৯

এক মিনিটের ঝড়ে-

কালবৈশাখীর এক মিনিটের আঘাতে রবিবার রাজধানীর অনেকটাই লণ্ডভণ্ড হয়ে পড়ার ঘটনায় বোঝা গেল প্রকৃতির কাছে মানুষ কতটা সামান্য। ঘণ্টায় ৭৪ কিলোমিটার বেগে আসা কালবৈশাখী ঝড়ের আগে ঘণ্টাখানেক ধরে ঝড়োহাওয়া বয়ে যায়। প্রথম ছোবলেই সারাদেশে প্রাণ গেল দশজনের। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের নিয়ন্ত্রণ কক্ষের হিসাব অনুযায়ী রাজধানীর মোট ২৫টি স্থানে গাছ ভেঙ্গে পড়ার ঘটনা ঘটেছে। শাহবাগসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় সড়কের পাশের বিলবোর্ড উড়ে গেছে। এতে বেশ কয়েকজন আহতও হয়েছেন। কালবৈশাখীর সময় বজ্রপাত একটি নিয়মিত বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এটা বেশি করে হচ্ছে। তাই জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে যে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এমনটা হচ্ছে কিনা। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রচ- বেগে কালবৈশাখীর ঝড় বয়ে গেছে গত মৌসুমে বেশ কিছুদিন ধরে। কালবৈশাখীর সময় ধূলিঝড়, বজ্রপাত এবং মুষলধারে বৃষ্টিপাত স্বাভাবিক বিষয়। স্মরণযোগ্য, গত বৈশাখে রাজধানীতে সকাল বেলায় নেমে এসেছিল রাতের অন্ধকার। ঝড়ে বিভিন্ন এলাকায় গাছপালা উপড়ে পড়ে। কোন কোন এলাকা বিদ্যুতবিহীন হওয়ায় ভুতুড়ে নগরীতে পরিণত হওয়ার বিষয়টিও স্মরণযোগ্য। প্রতিবছর বিশ্বে বজ্রপাতের কারণে গড়ে ২৪ হাজার লোক মৃত্যুবরণ করে এবং আহত ব্যক্তির সংখ্যা প্রায় ২ লাখ ৪০ হাজার। ঊনবিংশ শতাব্দী পর্যন্ত উন্নত বিশ্বে (যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া) বজ্রপাত ছিল একটি ভয়াবহ দুর্যোগ। কিন্তু বিংশ শতাব্দী থেকে বজ্রপাতে প্রাণহানির সংখ্যা হ্রাস পেতে থাকে মূলত নগর জনসংখ্যা বৃদ্ধি এবং কৃষিজ জনসংখ্যার হ্রাসের কারণে। বিশ্বে মোট বজ্রপাতের ৭৮ শতাংশ সংঘটিত হয় ক্রান্তীয় অঞ্চলে। দক্ষিণ এশিয়া, তথা বাংলাদেশ যেহেতু ক্রান্তীয় অঞ্চলের খুব কাছাকাছি অবস্থিত, প্রাক্-মৌসুম (মার্চ-জুন) থেকে শুরু করে মৌসুমি (জুলাই-অক্টোবর) সময় পর্যন্ত বজ্রপাতসহ বজ্রঝড় একটা নিয়মিত বিষয়। যদিও প্রতিবছর বজ্রঝড়, কালবৈশাখী, টর্নেডোতে প্রাণহানিসহ ফসলাদির ক্ষতি কিছু না কিছু হয়েই থাকে। বজ্রপাতে নিহত বা আহত ব্যক্তিদের কোন পরিসংখ্যান বা ক্ষয়ক্ষতির বিবরণ এখন পর্যন্ত বিশদ সংরক্ষিত হয়নি। বজ্রপাতের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা করার পরিকল্পনা অবশ্যই নিতে হবে। বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে আগে তালগাছ বা খেজুর গাছ বজ্রপাত থেকে মানুষকে রক্ষা করত। এখন গাছের সংখ্যা কমে যাওয়ায় এবং শহরাঞ্চলে গাছের ডালপালা ছেটে ফেলায় বজ্রপাতে ক্ষতির ঝুঁকি বেড়ে গেছে। তাই মোবাইল ফোনের টাওয়ার ছাড়াও যেসব টাওয়ার বেশ উঁচু সেগুলোতে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করে আর্থিংয়ের মাধ্যমে বজ্রপাত থেকে মানুষ রক্ষা পেতে পারে। মাত্র এক মিনিট স্থায়ী মৌসুমের প্রথম কালবৈশাখী রাজধানীবাসীর জন্য সতর্কবার্তা রেখে গেল। প্রকৃতির ওপর মানুষের হাত নেই। বৈশাখ আসার আগে এবং পুরো বৈশাখজুড়ে মাঝে-মধ্যে কালবৈশাখী ঝড় হওয়া প্রকৃতিসম্মত স্বাভাবিক বিষয়। তবে মানুষ সচেতন ও সতর্ক হলে ঝড়ের কবলে পড়েও বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি থেকে রক্ষা পেতে পারে। ঢাকার যেসব বড় গাছের গোড়া নরম হয়ে গেছে সেগুলো চিহ্নিত করে কেটে ফেলাই মঙ্গল। আর বিলবোর্ড স্থাপনের ক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে সেটি মজবুত কিনা। ঝড়ে উড়ে যাওয়ার মতো পলকা হলে তা সমূহ বিপদ ঘটাবে। প্রচ- ঝড়ের সময় যানবাহন বন্ধ রাখার কথাও বলে থাকেন বিশেষজ্ঞরা। ঝড়ের সময় খোলা আকাশের নিচে অবস্থান না করাই শ্রেয়। সচেতনতা ও সতর্কতাই পারে কালবৈশাখীর তা-ব থেকে মানুষকে রক্ষা করতে।
×