ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

রিমাণ্ডে জিজ্ঞাসাবাদ

তাসভির ও ফারুক পরস্পরের ওপর দায় চাপাচ্ছেন

প্রকাশিত: ১০:৫৯, ৩ এপ্রিল ২০১৯

তাসভির ও ফারুক পরস্পরের ওপর দায় চাপাচ্ছেন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বনানীর এফ আর টাওয়ারে এখনও ভুতুড়ে পরিবেশ। প্রয়োজন থাকা সত্ত্বেও অনেকেই ভয়ে সেখানে প্রবেশ করতে সাহস পাচ্ছেন না। বিশেষ করে ফায়ার সার্ভিসের কিছু সংবিধিবদ্ধ সতর্কীকরণের দরুন গুটি কয়েক শ্রমিককে মঙ্গলবার ভয়ে ভয়ে কাজ করতে দেখা যায়। ফায়ার সার্ভিস নোটিস দিয়েছে- এফ আর টাওয়ার কমপক্ষে তিন মাস ব্যবহার করা যাবে না। নোটিসের পর অনেকেই অন্য স্থানে অফিস সরিয়ে নিচ্ছেন। এদিকে চাঞ্চল্যকর এই মামলার দুই প্রভাবশালী আসামিকে রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে তেমন কোন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য আদায় করতে পারেনি তদন্তকারীরা। রিমান্ডের তৃতীয়দিনেও আসামি তাসভির উল ইসলাম ও প্রকৌশলী এসএমএইচআই ফারুক হোসেন পরস্পরের ওপর দায় চাপাচ্ছেন। ৭ দিন রিমান্ডের ৩ দিন শেষ হয়েছে মঙ্গলবার। জিজ্ঞাসাবাদে তারা ভবন নির্মাণ ও ফ্লোর ক্রয়ের ক্ষেত্রে নানা ব্যত্যয়ের কথা জানিয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন। তবে এতে ভবন নির্মাণ প্রতিষ্ঠান ও রাজউকের ওপর দায় চাপিয়ে তারা কৌশলে নিজেদের নির্দোষ প্রমাণের চেষ্টা করছেন। ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার আব্দুল বাতেন জানান, এফ আর টাওয়ারে আগুন লাগার ঘটনায় মামলার দুই আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তদন্তে রাজউক, মালিকপক্ষ এবং ডেভেলপার কোম্পানির মধ্যে কার কি ভূমিকা ছিল তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। গাফিলতি ও অপরাধ চিহ্নিত করে যার যার বিরুদ্ধে অপরাধের প্রমাণ মিলবে, সবার বিরুদ্ধেই অভিযোগপত্র দেয়া হবে। কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। এছাড়া আরও ক’জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হতে পারে। উল্লেখ্য, তাসভির ভবনটির বর্ধিত অংশের মালিক ও ভবনের জমির মালিক প্রকৌশলী এসএমএইচআই ফারুক হোসেন। মামলার অন্যতম আসামি ভবন নির্মাণ প্রতিষ্ঠান রূপায়ণ গ্রুপের চেয়ারম্যান লিয়াকত আলী খান মুকুলকে পুলিশ ৩ দিনেও গ্রেফতার করতে পারেনি। দুর্ঘটনার পর গত ২৯ মার্চ দুপুরে রূপায়ণের মালিক মুকুল দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন। এদিকে মঙ্গলবার দুপুরে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, অগ্নিকা-ের ক্ষতিগ্রস্ত এফ আর টাওয়ারের কাঁচ ও পোড়া এসির ভগ্নাংশ ভবনটির সামনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। এতে নতুন কোন দুর্ঘটনা এড়াতে পুলিশ ওই রাস্তায় সবধরনের গাড়ি চলাচল শুধু বন্ধ রেখেছে। এছাড়া ভবনটির সামনে সাধারণ মানুষদের কাউকেই দাঁড়াতে দিচ্ছে না। সকাল থেকেই সিটি কর্পোরেশনের কর্মীরা দড়ি দিয়ে ভবনটির সামনে ও পেছনের দু’পাশ আটকে রাখে। অবশ্য ভবনের আরেক পাশের সড়ক দিয়ে যান চলাচল স্বাভাবিক রাখা হয়। পথচারী ও গাড়ি চলাচলে ভবনটির সামনে ও পেছনের ফুটপাথ এবং রাস্তায় পুলিশের উদ্যোগে লোহার দ- ও টিন দিয়ে ছাউনি তৈরির কাজে ব্যস্ত ছিলেন শ্রমিকরা। তবে ভবনের ভেতর থেকে আসবাবপত্র সরিয়ে নেয়ার কাজ করতে দেখা গেছে শ্রমিকদের। অগ্নিকা-ের পর আতঙ্কিত হয়ে এফ আর টাওয়ারের বিভিন্ন ফ্লোরের অফিস সরিয়ে নিচ্ছেন অনেকে। মঙ্গলবারও ভবন থেকে মালামাল সরিয়ে নিতে দেখা গেছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের। একটি সূত্র জানিয়েছে- ডিবিতে সাতদিনের রিমান্ডে থাকা দুই আসামিকে প্রশ্ন করা হয়- ১৮ তলার অনুমোদন নিয়ে কিভাবে ২২ তলা করা হলো। উত্তরে আসামি তাসভীর ও ফারুক অবৈধভাবে টাওয়ার গড়ে তোলার জন্য পরস্পরকে দায়ী করেন। এজন্য নির্মাতা প্রতিষ্ঠান রূপায়ণ হাউসিং এস্টেট লিমিটেডের সঙ্গেও প্রত্যেকের মনোমালিন্য চলছিল। উলেখ্য, গত বৃহস্পতিবার এফ আর টাওয়ারে অগ্নিকা-ে ২৬ জনের প্রাণহাণি ঘটে। এর মধ্যে টাওয়ার থেকে ১৩০ জনকে উদ্ধার করা হয়। তাদের রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আহত ১২ জনের মধ্যে দু’জনের অবস্থা সঙ্কটাপন্ন। সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে সোহেল রানা এবং ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রেজওয়ান আহমেদ আইসিইউতে চিকিৎসাধীন। তারা এখনও আশঙ্কামুক্ত নন।
×