ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

কালবৈশাখী শিলাবৃষ্টি বজ্রপাত ॥ ফসল ও বাড়িঘরের ব্যাপক ক্ষতি

প্রকাশিত: ১০:৫৭, ৩ এপ্রিল ২০১৯

কালবৈশাখী শিলাবৃষ্টি বজ্রপাত ॥ ফসল ও বাড়িঘরের ব্যাপক ক্ষতি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ গত কয়েকদিন ধরেই দেশের বিভিন্ন স্থানের ওপর কালবৈশাখী ঝড় অব্যাহত রয়েছে। মঙ্গলবারও কালবৈশাখী ঝড়, শিলাবৃষ্টি এবং বজ্রসহ বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এতে ফসল ও বাড়িঘরের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে এপ্রিল মাসের শুরু থেকে তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় ঘন ঘন কালবৈশাখী শুরু হয়েছে। এর সঙ্গে শিলাবৃষ্টিও দেখা যাচ্ছে। আর শিলাবৃষ্টির কারণে আমসহ বিভিন্ন ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। আবহাওয়া অফিস থেকে প্রায় প্রতিদিন দুপুরের পর থেকে কালবৈশাখীর সতর্কতা জারি করছে। এদিকে রবিবারের পর রাজধানী ঢাকায় দ্বিতীয় দফায় কালবৈশাখী না হলেও বৃষ্টিপাত অব্যাহত রয়েছে। মঙ্গলবার দুপুরের পর মাঝারি থেকে ভারি বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। তারা জানায়, দুপুরে রাজধানীতে ১৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এছাড়া নিকলিতে সবচেয়ে বেশি ৫৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এদিকে অব্যাহত কালবৈশাখী ঝড় এবং বৃষ্টিপাতের কারণে জয়পুরহাটের পাঁচবিবিতে কয়েকশ’ বাড়িঘর ল-ভ- হয়েছে। ঝড়ের আঘাতে আহত অনেককে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। নীলফামরীর সৈয়দপুরে এক ঘণ্টার শিলাবৃষ্টির কারণে পাড়ামহল্লা জলমগ্ন হয়ে পড়ে। দিনাজপুরের চার উপজেলায় শিলাবৃষ্টির কারণে ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। মঙ্গলবার আবহাওয়া অফিসের এক সতর্র্কবার্তায় উল্লেখ করা হয় দুপুর ১:৩০ টা থেকে পরবর্তী ১২ ঘণ্টার মধ্যে রাজশাহী, রংপুর, বগুড়া, টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ, ফরিদপুর, মাদারীপুর, ঢাকা, যশোর, কুষ্টিয়া, খুলনা, বরিশাল, পটুয়াখালী, নোয়াখালী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম ও সিলেট অঞ্চলসমূহের উপর দিয়ে অস্থায়ীভাবে পশ্চিম/উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় ৬০-৮০ কি.মি. বা কোথাও কোথাও আরও অধিক বেগে কালবৈশাখী ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি/বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। আবহাওয়ার পূর্বাভাসে উল্লেখ করা হয়েছে পশ্চিমা লঘুচাপের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন এলাকা পর্যন্ত বিস্তৃত। মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে। এর প্রভাবে ময়মনসিংহ, সিলেট ও চট্টগ্রাম বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় এবং রাজশাহী, রংপুর, ঢাকা, খুলনা ও বরিশাল বিভাগের দু-এক জায়গায় অস্থায়ী দমকা/ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রবৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্তভাবে শিলাবৃষ্টি হতে পারে। সারাদেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। রাজধানী ঢাকায়ও পশ্চিম/দক্ষিণ-পশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় ৮ থেকে ১২ কিলোমিটার যা অস্থায়ীভাবে দমকায় ঘণ্টায় ৩০ থেকে ৪০ কিলোমিটার বেগে প্রবাহিত হতে পারে। আগামী ৭২ ঘণ্টা বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি অব্যাহত থাকতে পারে উল্লেখ করা হয়েছে। জয়পুরহাট ॥ মঙ্গলবার প্রবল ঝড়, বর্ষণ ও শিলাবৃষ্টিতে পাঁচবিবি পৌরসভার দানেজপুর, উপজেলার ধরঞ্জী ইউনিয়নের বাগুয়ান গ্রাম, বালিঘাটা ইউনিয়নের নওদা গ্রামের কয়েকশ’ বাড়ি ঝড়ের তা-বে ল-ভ- হয়ে গেছে। ঝড়ে পাকা ও মাটির বাড়ির দেয়াল পড়ে যায়। টিনের চাল উড়ে যায় এবং সহস্রাধিক গাছ ভেঙ্গে পড়ে। ঝড়ে দেয়াল ও গাছ চাপা পড়ে বাগুয়ান ও নওদা গ্রামের প্রায় ৩০ জনের মতো আহত হয়। আহতদের ২১জনকে জয়পুরহাট জেলা আধুনিক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এদের অনেকেরই পা হাত ভেঙ্গে গেছে। আহত আরও ১০জনকে পাঁচবিবি মহিপুর হাসপাতালে ও স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। পাঁচবিবি-হিলি সড়কের নওদা স্কুলের সামনে ঝড়ে গাছ ভেঙ্গে পড়ে যোগাযোগ প্রায় ঘণ্টাখানেক বন্ধ থাকে। এ সময় ওই এলাকায় বিদ্যুত সঞ্চালনও বন্ধ হয়ে যায়। ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্তরা আশপাশের বিভিন্ন বাড়িতে আশ্রয় নিতে দেখা যায়। দিনাজপুর ॥ চার উপজেলায় ব্যাপক শিলাবৃষ্টি হয়েছে। ফলে ইরি-বোরোসহ ভুট্টার ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। মঙ্গলবার দুপুর পৌনে ২টা থেকে বিকেল সোয়া ৩টা পর্যন্ত জেলার বিরামপুর, নবাবগঞ্জ, ঘোড়াঘাট ও হাকিমপুর উপজেলায় এই শিলাবৃষ্টি হয়। শিলাবৃষ্টির ফলে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়েছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে ইরি-বোরো ধানের। এছাড়াও ৪টি উপজেলার কিছু কিছু স্থানে মানুষের বাড়ির ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সৈয়দপুর ॥ মঙ্গলাবার দুপুর আড়াইটায় রোদের সঙ্গে টানা শিলাবৃষ্টিতে শহরের রাস্তাঘাট ও অলিগলি জলাবদ্ধ হয়ে পড়ে। সৈয়দপুর বিমানবন্দর আবহাওয়া অফিসের ইনচার্জ লোকমান হেকিম জানান, দুপুর আড়াইটায় বজ্রসহ বৃষ্টিপাত আরম্ভ হয়। রৌদ্রোজ্জ্বল বৃষ্টিপাতের সঙ্গে হাফ ইঞ্চি শিলাও পতিত হয়। রোদ আর শিলায় ৩.৭ মিলি মিটার বৃষ্টিপাত হয়। এতে শহরের মিস্ত্রিপাড়া, বাঁশবাড়ি, নয়াটোলা, কুন্দল, নতুন বাবু পাড়া, সুড়কি মহল্লা, নয়া বাজারসহ প্রায় ২২ অবাঙালী ক্যাম্প এলাকার সঙ্কীর্ণ ড্রেন আর রাস্তাঘাট জলাবদ্ধ হয়ে পড়ে। এতে ড্রেনের নোংরা পানি আর বৃষ্টির পানি মিশে একাকার হয়ে যায় ওই সকল এলাকা। ময়লা পানি ডিঙ্গিয়ে যাতায়াত করতে হয় এলাকাবাসীকে। এছাড়াও শিলাবৃষ্টিতে আমের মুকুল ঝরে পড়েছে। ভুট্টা ও ধানের চারার পাতায় আঘাত হানলেও ইরি চাষাবাদে তেমন প্রভাব পড়বে না বলে কৃষি অফিস জানিয়েছে। ফরিদপুর ॥ রাজবাড়ীর সদর ও গোয়ালন্দ উপজেলার পদ্মা নদীতে রবিবার ঝড়ের কবলে পড়া নৌকাডুবির দুই দিন পর তিন ব্যক্তির লাশ উদ্ধার করেছে ফায়ার সার্ভিস ও স্থানীয়রা। উদ্ধারকৃত নিহত ব্যক্তিরা হলে মোঃ আবদুর রশিদ শেখ (৩০), বাবলু সরদার (৩৪) ও জীবন সরদার (১৪)। আবদুর রশিদ সদর উপজেলার মিজানপুর ইউনিয়নের মোচন শেখের ছেলে। অন্য দুইজন গোয়ালন্দ উপজেলার হাতেম সরদারের ছেলে। মঙ্গলবার সকাল থেকে দুপুর দেড়টা পর্যন্ত পদ্মা নদীর বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে ফায়ার সার্ভিস ও স্থানীয়রা নিহতের মরদেহ উদ্ধার করে। নিহতের স্বজনরা জানান, ৩১ মার্চ বিকেলে নিহতরা পদ্মা নদীতে নৌকায় মাছ ধরতে গেলে হঠাৎ ঝড় উঠে আসে। ঝড়ের কবলে পরে তারা তিনজনই নিঁখোজ হন।
×