ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ঘুরে দাঁড়ানোর এখনই সময় ॥ আতিক

নগরীর নিরাপত্তা নিয়ে কোন ছাড় নয় ॥ আতিক

প্রকাশিত: ১০:৫২, ৩ এপ্রিল ২০১৯

নগরীর নিরাপত্তা নিয়ে কোন ছাড় নয় ॥ আতিক

স্টাফ রিপোর্টার ॥ গার্মেন্টস সেক্টরের মতোই নগরীর সকল ভবন ব্যবহার উপযোগী ও নিরাপদ (কমপ্লায়েন্স) করে ছাড়ব। আমরা সবাই মিলে যেখানে গার্মেন্টস গড়তে পেরেছি, ঠিক তেমনি সিটি কর্পোরেশনকেও গড়তে পারব। এজন্য আগামী শনিবার থেকেই ডিএনসিসির পক্ষ থেকে প্রতিটি ভবনের অগ্নি নিরাপত্তা পরীক্ষা করতে বিভিন্ন সংস্থার সমন্বয়ে ১০ টিম মাঠে নামবে বলে জানিয়েছেন ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মোঃ আতিকুল ইসলাম। একইসঙ্গে নগরবাসীর অগ্নি নিরাপত্তাসহ সকল প্রকার নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট অভিযোগ শোনার জন্য প্রতিটি জোন অফিসের সামনে অভিযোগ বক্স খোলার ও নির্দিষ্ট নম্বর চালুর ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর গুলশান ক্লাবে ঢাকা ইউটিলিটি রিপোর্টার্স এ্যাসোসিয়েশন (ডুরা) আয়োজিত ‘অগ্নিঝুঁকিতে রাজধানী : সিটি কর্পোরেশনের ভূমিকা ও নাগরিকদের করণীয়’ শীর্ষক এক মিট দ্য প্রেস অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন মেয়র। সংগঠনটির সভাপতি মশিউর রহমান খানের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল হোসেন রুবেলের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে সহ সভাপতি শফিকুল ইসলাম শামীম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক লাইজুল ইসলাম, ডিএনসিসির জনসংযোগ কর্মকর্তা এ এস এম মামুন, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী তারিক বিন ইউসুফ ও সংগঠনের সকল সদস্য সহ প্রায় দেড় শতাধিক সাংবাদিক উপস্থিত ছিলেন। বক্তব্য শেষে মেয়র সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন। অনুষ্ঠানে মেয়র প্রত্যয় ব্যক্ত করেন, গার্মেন্টস সেক্টরের মতো রাজধানীর ভবনগুলোকে কমপ্ল্যায়েন্স করে ছাড়ব। নগরীর নিরাপত্তা নিয়ে আর কোন প্রকার ছাড় দেয়া হবে না। বর্তমান অবস্থার উত্তরণে আমাদেরকে অনেক কিছু করতে হবে। এখনই সময় ঘুরে দাঁড়ানোর। এবং আশা করি আমরা পারব ও এ নগর ও প্রতিটি বাড়ি, প্রতিটি রাস্তাকে নিরাপদ করেই ছাড়ব। গার্মেন্টস ম্যানুফেকচারিং মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সাবেক সফল সভাপতি আতিকুল ইসলাম বলেন, যে কোন দুর্ঘটনায় আপনার-আমার ভাইবোনই মারা যায়। তাই সবার স্বার্থে আমরা প্রথমেই নগরীর প্রতিটি ভবনের অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা আছে কি না তা পরীক্ষা করে দেখব। এজন্য আগামী শনিবার থেকেই আমরা একযোগে অভিযানে নামব। সম্প্রতি ঘটে যাওয়া অগ্নিকা-গুলোর বিষয়ে মেয়র বলেন, আমরা একটা নাজুক সময় পার করছি। আমরা যে দৃশ্য দেখলাম তা খুবই নাজুক। সেই দৃশ্য কতটা অসহায় তা সবাই দেখেছে। আমরা অনেককে বাঁচাতে পারিনি। এর চেয়ে দুঃখজনক আর কি হতে পরে। মেয়র আরও বলেন, আমাদের করণীয় কি তা নির্ধারণ করতে আমি বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি ও নগর পরিকল্পনাবিদসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে ডেকেছি। সবাই আমাকে বলেছেন আপনি আমাদেরকে ডেকেছেন, কিন্তু সিটি কর্পোরেশনের কি সেই ক্ষমতা আছে? যেকোন দুর্যোগ মোকাবেলার জন্য সিটি করপোরেশন আর্টিকেল-২০ এ সে দায়িত্ব আমাদেরকে দেয়া আছে। সেই দায়িত্ব থেকেই আমরা কাজ করছি। মেয়র আতিক বলেন, আমরা জানতে পেরেছি অনেক বহুতল ভবনের সিঁড়িগুলোকে রান্নাঘর ও স্টোররুম করে রাখা হয়েছে। ইমার্জেন্সি ডোরে চিহ্ন আছে কিনা সেটা নিশ্চিত করতে হবে। ভবনে আগুন লাগলে মানুষ কোনদিক দিয়ে বের হবে সেটা নিশ্চিত করতে হবে। আটকে রাখা সিঁড়িগুলোকে শীঘ্রই খালি করে দিতে হবে। আপনাদের ব্যবসার জন্য আমাদের কোন মানুষ যেন মারা না যায়। এটা কোনভাবেই বরদাশত করা হবে না। এর দায়িত্বে যারা যারা আছে তারা ফায়ারের ড্রেস পরে ডিউটি করতে হবে। তাদের প্রশিক্ষণ দিতে হবে। তিনি বলেন, আমরা একটা ভয়াবহ জায়গার মধ্যে আছি। আমাদের বিশ্বাস সবাই মিলে কাজ করলে সবাই মিলে সবার ঢাকা গড়তে পারব। ভবন মালিকদের তিনি বলেন, আপনি আপনার বিল্ডিংয়ের দায়িত্ব নিন। আপনার গাফিলতির জন্য একটি জীবন ও পরিবার নিশ্চিহ্ন হতে পারে না। আপনার গাফিলতির জন্য আমাদের দেশের ইমেজ নষ্ট হতে যাচ্ছে। আপনাদের লিফটগুলোকে চেকিংয়ের মাধ্যমে নিয়ে আসুন। লিফটে মানুষ আটকে যাচ্ছে। সবার সহযোগিতায় আমি প্রতিটি ভবনে কমপ্ল্যায়েন্স করেই ছাড়ব। এজন্য আপনারাও (সাংবাদিকরা) আমাদেরকে সহযোগিতা করুন। ডিএনসিসি মেয়র বলেন, রাজউকের চেয়ারম্যান জনগণের ভোটে আসেনি। রাজউক চেয়ারম্যানকে কেউ চিনেও না। সিটি কর্পোরেশনের মেয়র জনগণের ভোটে। দায় দায়িত্ব সবারই আছে। তাই বলব সবাইকে জবাবদিহির আওতায় আসতে হবে। মেয়র বলেন, কোন ভবনে অগ্নি নিরাপত্তা ব্যবস্থা না থাকলে সে বিষয়ে অভিযোগ জানানোর জন্য ‘অভিযোগ বক্স’ চালু করব। পাশাপাশি ফোন ও হোয়াটস এ্যাপ নম্বরও থাকবে। এসব মাধ্যমে যারা ভবনের সমস্যা সম্পর্কে অভিযোগ জানাবেন তাদের পরিচয় গোপন রাখা হবে। আমরা একটি নগর এ্যাপ চালু করার জন্যও কাজ করছি। আপনাদের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে আমরা কাজ করে সবাইকে নিয়ে নিরাপদ ঢাকা গড়ে তুলব। মেয়র বলেন, আমাদের শুধু ভবন নয় বরং হাসপাতাল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়সহ প্রায় সবধরনের অবকাঠামো ঝুঁকিপূর্ণ। ভবন নিরাপত্তা, অগ্নি নিরাপত্তা, ইলেক্ট্রিক নিরাপত্তা না থাকলে এসব ভবনে কেউ যাবেন না। অফিস নিরাপদ না হলে সেখানে কাজ করবেন না। অগ্নিকা-ের মতো ঘটনা মোকাবেলায় আগে থেকেই প্রস্তুতি রাখতে হবে উল্লেখ করে আতিকুল ইসলাম বলেন, ভবনগুলোতে অবশ্যই ফায়ার ড্রিল করতে হবে। প্রয়োজনে সিটি কর্পোরেশন ট্রেনিং দেবে। ভবনের সিকিউরিটি গার্ডদের প্রশিক্ষণ দিতে হবে, ফায়ার পোশাক পরাতে হবে। আমরা সবাই মিলে, সবাই বাঁচতে চাই। অগ্নিঝুঁকি থেকে বাঁচতে সিটি কর্পোরেশনের উদ্যোগ বাস্তবায়নে তিনি সকলের সহযোগিতা কামনা করেন।
×