ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বাংলার মাটির নির্যাসে নির্মিত হবে বঙ্গবন্ধুর বায়োপিক ॥ শ্যাম বেনেগাল

প্রকাশিত: ১০:৪১, ৩ এপ্রিল ২০১৯

বাংলার মাটির নির্যাসে নির্মিত হবে বঙ্গবন্ধুর বায়োপিক ॥ শ্যাম বেনেগাল

মনোয়ার হোসেন ॥ নির্মিত হচ্ছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনীনির্ভর বায়োপিক। এই ছবির সূত্র ধরে উঠে আসবে বাংলাদেশের অভ্যুদয় থেকে পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধু হত্যাকা-ের নির্মম ট্র্যাজেডি। এই দুই ঘটনাপ্রবাহকে কেন্দ্র করে এগিয়ে যাবে সিনেমার কাহিনী। গত শতকের চল্লিশের দশক থেকে পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট পর্যন্ত সময়কে ধরা হবে ফ্রেমে। ফলে তারুণ্য থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা এবং পরবর্তী সময়ের মুজিবের দেখা মিলবে ছবিতে। চলচ্চিত্রটি নির্মাণ করবেন দাদাসাহেব ফালকে এ্যাওয়ার্ডসহ বিভিন্ন সম্মাননায় ভূষিত প্রখ্যাত নির্মাতা শ্যাম বেনেগাল। ছবি নির্মাণের প্রাথমিক প্রস্তুতি এগিয়ে নিতে এই নির্মাতা এখন অবস্থান করছেন ঢাকায়। মঙ্গলবার সকালে চলচ্চিত্রটি নির্মাণসংক্রান্ত বিষয় নিয়ে বৈঠক করেন এদেশের চলচ্চিত্রসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে। বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন কর্পোরেশনে (বিএফডিসি) অনুষ্ঠিত সে বৈঠক শেষে শ্যাম বেনেগালের সঙ্গে কথা হয় জনকণ্ঠের এই প্রতিনিধির। আলাপচারিতায় এই নির্মাতা জাতির জনকের জীবনীনির্ভর চলচ্চিত্রটির বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলেন। এ বিষয়ে আরও কথা হয় বৈঠকে অংশ নেয়া চলচ্চিত্র নির্মাতা মোরশেদুল ইসলাম ও নাট্যজন মামুনুর রশীদের সঙ্গে। বঙ্গবন্ধুর বায়োপিকটি কেমন হবেÑ এ প্রশ্নের জবাবে শ্যাম বেনেগাল বলেন, বাংলাদেশের জল-হাওয়ায় শেখ মুজিবের জন্ম ও বেড়ে ওঠা। তাই বাংলার মাটির নির্যাসে নির্মিত হবে বঙ্গবন্ধুর বায়োপিকটি। আর এ কারণেই ছবিটি নির্মিত হবে বাংলা ভাষায়। চলচ্চিত্রটির নির্মাণসংক্রান্ত বিষয়ে শ্যাম বেনেগাল বলেন, চলচ্চিত্রটি নির্মিত হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ও ভারতের যৌথ প্রযোজনায়। চলচ্চিত্রটির উপজীব্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। এই চলচ্চিত্রটির অধিকাংশ কাজই হবে বাংলাদেশকে নির্ভর করে। সেই সুবাদে বাংলাদেশের প্রতিভাবান অভিনেতা-অভিনেত্রীরাই এ চলচ্চিত্রে অভিনয় করবেন। বেশিরভাগ শুটিংও হবে বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে। কারিগরি সহায়তাসহ কলাকুশলীরাও থাকবেন এ দেশেরই। যে কারণে এখান থেকে কী ধরনের সহযোগিতা পাওয়া যাবে, সেটাই আলোচনায় উঠে এসেছে। যৌথ প্রযোজনার ছবি হলেও ছবির প্রাথমিকসহ বেশিরভাগ কাজ হবে বাংলাদেশে। এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এটি খুবই ফলপ্রসূ হয়েছে। সুনির্দিষ্ট বিষয় নিয়েই আমরা আলোচনা করেছি। প্রসঙ্গক্রমে শ্যাম বেনেগাল বলেন, আজ (মঙ্গলবার) দুপুরে আমি ছবির দৃশ্যায়নসহ কতটা কারিগরি সুবিধা পাওয়া যাবে তা দেখতে যাবো সাভারের কবিরপুরের বঙ্গবন্ধু ফিল্ম সিটিতে। বুধবার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের আগ পর্যন্ত কয়েকটি দলে ভাগ হয়ে এসব বিষয় পর্যবেক্ষণ করা হবে। বর্তমানে ছবির কাজ একেবারেই প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। আমি ছাড়াও যৌথ প্রযোজনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট লেখক, গবেষক এবং অভিনেতা-অভিনেত্রী নির্বাচনে কাস্টিং ডিরেক্টর সম্পৃক্ত হবেন ছবির সঙ্গে। চলচ্চিত্রটির চিত্রনাট্য প্রসঙ্গে এই নির্মাতা বলেন, এটি এখনও তৈরি হয়নি। চিত্রনাট্য তৈরির ক্ষেত্রে ইতিহাসবিদ ও গবেষকদের সহায়তা নেয়া হবে। বঙ্গবন্ধুর সময়কাল থেকে বাংলাদেশের জন্মকালÑ এ সময়গুলোকে যারা অবলোকন করেছেন, তাদের সহযোগিতা নেব আমরা। সত্যি কথা বলতে, এখনও অনেক কাজ বাকি। এখন চলছে প্রাথমিক প্রস্তুতি পর্বের কাজ। চলচ্চিত্রটিতে বাংলাদেশ থেকে কোন সহ-পরিচালক নেয়া হবে কিনা জানতে চইলে তিনি বলেন, এমনিতেই একটি চলচ্চিত্র অনেক মানুষের চিন্তা ও সৃষ্টির ফসল। তবে একটি প্রাণীর দুটি মাথা থাকতে পারে না। সেই বিবেচনায় সহকারী পরিচালক গুরুত্বপূর্ণ নয়। আর একটি ছবি নির্মাণের ক্ষেত্রে দুটি মাথা একসঙ্গে কাজ করলে, সেটা ভাল কিছু হবে না বলে আমি মনে করি। বিএফডিসির জহির রায়হান ল্যাবরেরির সভাকক্ষে শ্যাম বেনেগালের সঙ্গে অনুষ্ঠিত বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বিএফডিসির ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক লক্ষণ চন্দ্র দেবনাথ, বিটিভির মহাপরিচালক হারুন-অর-রশিদ, তথ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব আজাহারুল হক, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব সৈয়দ হাসান ইমাম, নাট্যজন মামুনুর রশীদ, চলচ্চিত্র নির্মাতা মোরশেদুল ইসলাম প্রমুখ। বঙ্গবন্ধুর বায়োপিকটি কেমন হবেÑ সে প্রসঙ্গে মামুনুর রশীদ বলেন, শ্যাম বেনেগাল গুণী নির্মাতা। সাড়া জাগানো অনেক ছবি নির্মাণ করেছেন তিনি। বায়োপিক ধারার ছবি নির্মাণেও তাঁর রয়েছে বিস্তর অভিজ্ঞতা। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে তিনি যে ছবিটি তৈরি করবেন, আশা করি সেটিও উচ্চমানের হবে। এছাড়া ছবিটির প্রযোজনায় রয়েছে বাংলাদেশ ও ভারত। তাই ছবিটির বাজেটও বড় হবে। প্রাথমিকভাবে ছবিটির চিত্রনাট্য নিয়ে গবেষণা শুরু হবে। সেই প্রেক্ষাপটে বলতে পারি ছবিটির নির্মাণ করতে সময় লাগবে। এ চলচ্চিত্রে গত শতকের চল্লিশের দশক থেকে শুরু করে পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধু হত্যাকা- পর্যন্ত নানা ঘটনা উঠে আসবে। যুক্ত হবে দেশভাগ, দাঙ্গা, ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধসহ নানা ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট। এসব ঘটনাপ্রবাহকে একসঙ্গে যুক্ত করে চিত্রনাট্য তৈরি করাটাও জটিল কাজ। ছবির অধিকাংশ শূটিং বাংলাদেশেই হবে। তবে ছবির প্রয়োজনে ভারত ও পাকিস্তানেও দৃশ্যায়ন হবে। মোরশেদুল ইসলাম, প্রাথমিকভাবে শ্যাম বেনেগাল ছবিটি চেয়েছিলেন ইংরেজী ভাষায় নির্মাণ করতে। তবে আজকের (মঙ্গলবার) বৈঠকে আমরা তাকে চলচ্চিত্রটি বাংলা ভাষায় নির্মাণের প্রস্তাব দিই। তিনিও এই সিদ্ধান্তের প্রতি সম্মতি জানিয়েছেন। বঙ্গবন্ধুর চরিত্রে কে অভিনয় করবেন জানতে চাইলে মোরশেদুল ইসলাম বলেন, ছবির অভিনেতা-অভিনেত্রী এখনও ঠিক হয়নি। এমনকি চিত্রনাট্যও তৈরি হয়নি। তিনি চিত্রনাট্য রচনার ক্ষেত্রে ইতিহাসবিদ ও গবেষকদের সহায়তা নেবেন। এছাড়াও যেহেতু বাংলাভাষায় নির্মিত হবে, সেহেতু তিনি ভাষাবিদদেরও সহায়তা নেবেন। ক্যামেরার সামনের মুখগুলোয় বাংলাদেশের মানুষকেই বেশি দেখা যাবে। আন্তর্জাতিক মানের হওয়ায় ছবিটির চিত্রগ্রাহক দেশের বাইরের কেউ হতে পারেন। কথা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ছবিটির বাজেট নিয়ে এখনও দুই দেশের সরকারের মধ্যে সিদ্ধান্ত হয়নি। এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। প্রাথমিকভাবে ছবিটির বিষয় নিয়ে আজ বুধবার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করবেন শ্যাম বেনেগাল। ছবিটির নির্মাণ ও কবে নাগাদ মুক্তি পেতে পারে জানতে চাইলে মোরশেদুল ইসলাম বলেন, ছবিটি হয়তো আগামী বছর বঙ্গবন্ধুর জন্মশত বর্ষে তৈরি হবে। কিন্তু সে সময় ছবির নির্মাণকাজ সম্পন্ন হলেও ছবিটি প্রদর্শন উপযোগী করতে সময় লাগবে। সে ক্ষেত্রে ২০২১ সালের মার্চ মাসে ছবি মুক্তি পেতে পারে বলে মনে করছেন শ্যাম বেনেগাল। বাংলায় ছবিটি নির্মাণ প্রসঙ্গে মোরশেদুল ইসলাম বলেন, তিনি বাংলা ভাষা তেমন বোঝেন না। তাই ভাষার ক্ষেত্রে আমাদের সহযোগিতা প্রত্যাশা করেছেন। আমরা তাকে সব ধরনের সহযোগিতা করতে প্রস্তুত আছি। ছবিটির শূটিং কবে শুরু হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে ছবি নির্মাণ করতে হলে সেই সময়ের ঢাকাকে ফুটিয়ে তুলতে হবে। এ জন্য আলাদা করে সেট তৈরি করতে হবে। এসব কারণেই ছবিটির নির্মাণ খুব চ্যালেঞ্জিং ব্যাপার। এ বিষয়ে এখনও কোন সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা হয়নি।
×