ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ভবনের ত্রুটি খোঁজা হচ্ছে

রাজউকের ২৪ টিমের অভিযান শুরু

প্রকাশিত: ১০:৫৯, ২ এপ্রিল ২০১৯

রাজউকের ২৪ টিমের অভিযান শুরু

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রাজধানীতে নিয়ম ভঙ্গ করে তৈরি করা সকল বহুতল ভবন চিহ্নিত করতে জোরেশোরেই মাঠে নেমেছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। এসব বহুতল ভবনে অগ্নি নিরাপত্তা ব্যবস্থাসহ ইমারত বিধিমালা অনুযায়ী নির্মিত হয়েছে কিনা তা পরীক্ষা করে দেখছে সংস্থাটি। এসব ভবনের কোন প্রকার ত্রুটি রয়েছে কিনা তা খুঁজে বের করতে সোমবার সকাল থেকে রাজউকের ৮ জোনের অধীনে মোট ২৪ টিম এ অভিযান শুরু করে। আগামী ১৫ দিন পর্যন্ত এই অভিযান পরিচালনা করা হবে বলে জানা গেছে। অভিযানে প্রতিটি বহুতল ভবনের অনুমোদিত নক্সা অনুযায়ী ভবন নির্মাণ করা হয়েছে কিনা, কত তলা ভবন নির্মাণের অনুমতি নিয়েছে এবং এ পর্যন্ত কত তলা ভবন নির্মাণ করা হয়েছে, নিয়মানুযায়ী ভবনের চারপাশে ফাঁকা স্থান রাখা হয়েছে কিনা তা দেখছে। এছাড়া সকল ভবনের নক্সার ফটোকপি ভবন মালিক বা প্রতিষ্ঠান মালিকদের কাছ থেকে সংগ্রহ করছে রাজউকের টিম। এসব নক্সা সঠিক নিয়মে অনুমোদন হয়েছে কিনা, হলে নির্মাণের পর কোন অংশ বর্ধিত করা হয়েছে কিনা তা সহ সকল প্রকার ত্রুটি খুঁজে দেখা হবে। কোন ভবনে নির্মাণের নিয়মের ব্যত্যয় করলে তার বিরুদ্ধে রাজউক কর্তৃপক্ষ ভবন মালিকগণ কর্তৃক দেয়া সকল তথ্য যাচাই-বাছাই শেষে ভবন ভাঙ্গা, সিলগালা করা, বর্ধিত অংশ ভেঙ্গে ফেলা, বা কোন কোন ভবনের অগ্নি নির্বাপক ব্যবস্থা গড়ে তুলতে নির্দেশনা দেয়া হবে। এর পরও আইন অমান্যকারী কোন ভবনের মালিক রাজউকের নির্দেশনা না মানলে তার বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে রাজউক টিম সূত্রে জানা গেছে। রাজউক সূত্র জানায়, রাজধানীর বড় বড় এলাকা বা জোনে ৪ জন করে ও ঢাকার আশপাশের সাভার বা নারায়ণগঞ্জ এলাকায় কোন কোন টিমে ২ কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে নিয়ে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করছে সংস্থাটি। সোমবার সকাল থেকেই রাজউকের কর্মকর্তারা ত্রুটিপূর্ণ ভবন চিহ্নিত করতে গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিমের দেয়া নির্দেশনা অতি গুরুত্বের সঙ্গে বাস্তবায়ন করতে দেখা গেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, রাজউকের বিভিন্ন জোনের অথরাইজড অফিসার, সহকারী অথরাইজড অফিসার, প্রধান ইমারত পরিদর্শক, ইমারত পরিদর্শকের সমন্বয়ে এ অভিযান পরিচালিত হচ্ছে। অভিযানে ১০ তলা ভবনের উপরের সকল বহুতল ভবনের বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। সরেজমিনে দেখা গেছে, অভিযানের শুরুতে রাজউকের পরিচালক প্রশাসন ও জোন-৬ (মতিঝিল, ভুলতা) এর অথরাইজড অফিসার খন্দকার অলিউর রহমানের নেতৃত্বে দৈনিক বাংলা এলাকায় তথ্য সংগ্রহ শুরু হয়। বেলা ১২টা পর্যন্ত আল আরাফা টাওয়ার ও আইএফআইসি ব্যাংক টাওয়ার পরিদর্শন করে তথ্য সংগ্রহ করা হয়। এসব ভবনের সকল তথ্য লিপিবদ্ধ করা হয়। একই সঙ্গে এসব ভবনের নক্সা সংগ্রহ করে কমিটি। জানা গেছে, প্রাথমিকভাবে এই ভবন দু’টিতে কোন সমস্যা পাওয়া যায়নি। তবে তা যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। অভিযান টিমের প্রধান খন্দকার অলিউর রহমান জনকণ্ঠকে বলেন, আমরা সকাল থেকে অভিযান শুরু করেছি। সন্ধ্যা পর্যন্ত আমরা প্রায় ৩০টি বহুতল ভবনের সকল কাগজ ও বাস্তবে পরীক্ষা করেছি। ভবনগুলোতে কোন ধরনের ত্রুটি আছে কিনা, ফায়ার নিরাপত্তা আছে কিনা এসব পরীক্ষা করা হচ্ছে। নক্সা অনুযায়ী ভবন নির্মাণ করা হয়েছে কিনা, কোন নিয়ম মানা হয়নি তা পরীক্ষা করে দেখছি। তবে এখনই বলা যাচ্ছে না যে, কোন্ ভবনটি ত্রুটিমুক্ত আর কোন্ ভবনটি ত্রুটিযুক্ত। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, আমরা সরেজমিন দেখে এসব বহুতল ভবনের মালিকের কাছ থেকে রাজউকের অনুমোদিত নক্সা সংগ্রহ করেছি। এসব নক্সা পরীক্ষা করে কোন প্রকার ত্রুটি রয়েছে কিনা পরীক্ষা তা যাচাই-বাছাই করতে আনুমানিক সাতদিন পর বলা যাবে কোন কোন ভবন ত্রুটিমুক্ত। তবে এ অভিযান একটানা পনেরোদিন পর্যন্ত চলবে। মতিঝিল শুধু নয় ঢাকার সকল বহুতল ভবনেরই কাগজপত্র ও সরেজমিনে পরীক্ষা করা হবে। অভিযুক্ত বা ত্রুটিপূর্ণ ভবনের বিরুদ্ধে রাজউক আইন অনুযায়ী শাস্তিমূলক সকল ব্যবস্থা নেবে। রাজউক সূত্র জানায়, এছাড়া জোন-১ এর পরিচালক মোঃ আবদুল মতিন ও অথরাইজড অফিসার সরদার মুহাম্মদ মাহবুবুর রহমানের নেতৃত্বে আশুলিয়া ও ধামসোনা, জোন-২ এর অথরাইজড অফিসার মোঃ আশরাফুল ইসলামের নেতৃত্বে উত্তরা, টঙ্গী ও গাজীপুর এলাকা, জোন-৩ এর পরিচালক, মু. খায়রুজ্জামান ও অথরাইজড অফিসার মোঃ মোবারক হোসেনের নেতৃত্বে সাভার ও মিরপুর, জোন-৪ এর পরিচালক মোহাম্মদ মামুন মিয়া ও অথরাইজড অফিসার সেগুফতা শারমীনের নেতৃত্বে গুলশান, বনানী, মহাখালী ও পূর্বাচল, জোন-৫ এর পরিচালক মোঃ শাহ আলম চৌধুরী ও অথরাইজড অফিসার মোঃ নুরুজ্জামান জাহিরের নেতৃত্বে ধানম-ি ও লালবাগ, জোন-৭ এর পরিচালক আনন্দ কুমার বিশ্বাস ও অথরাইজড অফিসার নূর আলমের নেতৃত্বে কেরানীগঞ্জ, জুরাইন, সূত্রাপুর ও ওয়ারী এবং জোন-৮ এর অথরাইজড অফিসার মোঃ মাকিদ এহসানের নেতৃত্বে ডেমরা, নারায়ণগঞ্জ ও সোনারগাঁও এলাকায় অভিযান পরিচালিত হচ্ছে। জানা গেছে, প্রতিটি টিম প্রায় ৩০ থেকে ৩৫টি ভবন পরীক্ষা করেছে। তবে সকল তথ্য যাচাই-বাছাই করে আইন ভঙ্গ করে তৈরি করা এসব ত্রুটিপূর্ণ ভবনের সংখ্যা ও ভবন মালিকদের নামসহ তালিকা প্রস্তুত করে গণমাধ্যমে প্রকাশ করা হবে। একই সঙ্গে ইমারত বিধিমালা অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন অভিযানের টিম সদস্যগণ।
×