ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

আজ কেরানীগঞ্জ গণহত্যা দিবস

প্রকাশিত: ০৯:২৩, ২ এপ্রিল ২০১৯

আজ কেরানীগঞ্জ গণহত্যা দিবস

সালাহ্উদ্দিন মিয়া, কেরানীগঞ্জ ॥ আজ ২ এপ্রিল। কেরানীগঞ্জবাসীর জন্য স্মৃতিবিজড়িত একটি দিন। একাত্তরের এদিনে কেরানীগঞ্জে পাঁচ সহস্রাধিক নিরস্ত্র মানুষকে হত্যা করেছিল পাক হানাদার বাহিনী। তারা ভম্মীভূত করেছিল হাজার হাজার বাড়ি-ঘর। হানাদারদের সেই ভয়াবহ তা-বের কথা বললেন মুক্তিযোদ্ধা সংগঠক মোস্তফা মহসিন মন্টু । সেই থেকে প্রতি বছর এ দিনটিকে শহীদদের স্মৃতির উদ্দেশে কেরানীগঞ্জের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল,অঙ্গ সংগঠন, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, সাংস্কৃতিক ব্যক্তি, বুদ্ধিজীবী, গণমাধ্যমসহ বিভিন্ন পেশাজীবী মানুষ গণহত্যা দিবস হিসেবে নানান কর্মসূচী পালন করেন। কেরানীগঞ্জের বিভিন্ন স্থানে কালো পতাকা উত্তোলন ও জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রেখে মানুষ সশ্রদ্ধচিত্তে দিনটি পালন করে। কেরানীগঞ্জ একাত্তরে মুুক্তিযোদ্ধাদের গুরুত্বপূর্ণ আশ্রয়স্থল ছিল। এর সঙ্গে সড়ক কিংবা নদীপথে মাওয়া, সিরাজদিখান, মুন্সীগঞ্জ, দোহার-নবাবগঞ্জ ও মানিকগঞ্জসহ বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষের যোগাযোগ ব্যবস্থা ভাল ছিল। ফলে কেরানীগঞ্জে পাকিস্তানী সেনাদের বিরুদ্ধে আক্রমণ পরিচলনা করা, মুক্তিযোদ্ধাদের অস্ত্র, যুবকদের প্রশিক্ষণসহ যুদ্ধের বিভিন্ন কর্মকা- পরিচালনা করা হতো । জানা যায়, মুক্তিযুদ্ধ শুরুর সময় ২৫ মার্চ কালরাতে ঢাকা শহরে কার্ফু জারি করে ‘অপারেশন সার্চলাইট’ চালিয়ে পূর্বপরিকল্পিতভাবে গণহত্যা চালায় পাকবাহিনী। ২৭ মার্চ ২ ঘণ্টার জন্য কার্ফু শিথিল করলে ঢাকা শহরের বেঁচে যাওয়া মানুষজন পালানোর স্থান ও প্রথম নিরাপদ আশ্রয়স্থল হিসেবে বুড়িগঙ্গা পাড়ি দিয়ে কেরানীগঞ্জে যাত্রা করে। সাধারণ মানুষের সঙ্গে কেরানীগঞ্জে সেদিন আশ্রয় নেন অনেক জাতীয় নেতৃবৃন্দ। ঢাকা শহরে গণহত্যা ও জাতীয় নেতৃবৃন্দের কেরানীগঞ্জে আশ্রয়ের খবর বিবিসি রেডিওতে প্রচার হলে পাকবাহিনী কেরানীগঞ্জে হামলার পরিকল্পনা নেয়। ১ এপ্রিল মধ্যরাত থেকে জিনজিরায় সৈন্য সমাবেশ করতে থাকে এবং ২ এপ্রিল ভোর ৫টা থেকে কেরানীগঞ্জে গণহত্যা শুরু করে দুপুর আড়াইটায় হত্যাযজ্ঞ শেষ করে হানাদার বাহিনী। একটানা ৯ ঘণ্টার বর্বর অপারেশনের মাধ্যমে পাঁচ সহ¯্রাধিক মানুষকে নির্বিচারে গুলি করে হত্যা করা হয়। গানপাউডার ছিটিয়ে পুড়িয়ে দেয় কয়েক হাজার বাড়িঘর। হানাদার বাহিনীর সেই বর্বর কর্মকা-ের কথা স্মরণ করে কেরানীগঞ্জবাসী আজও শিউরে ওঠে। ওইদিন যারা শহীদ হয়েছিলেন তাদের স্মরণে ২০০৫ সালের ২ এপ্রিল কেরানীগঞ্জের মনুবেপারীরঢাল এলাকায় তৎকালীন শ্রম বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী আমান উল্লাহ আমানের উদ্যোগে নির্মিত হয় ‘শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ’।
×