ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বরেন্দ্রের কৃষিতেও প্রযুক্তির ছোঁয়া ॥ এক যন্ত্রেই কাটা-মাড়াই

প্রকাশিত: ০৯:২০, ২ এপ্রিল ২০১৯

বরেন্দ্রের কৃষিতেও প্রযুক্তির ছোঁয়া ॥ এক যন্ত্রেই কাটা-মাড়াই

মামুন-অর-রশিদ, রাজশাহী ॥ কৃষিকাজে এখন প্রযুক্তির ছোঁয়া লেগেছে রাজশাহীর বরেন্দ্র অঞ্চলেও। ফসলের জমি চাষাবাদে কলের লাঙ্গল এসেছে অনেক আগেই। এখন নিত্য যোগ হচ্ছে নতুন নতুন প্রযুক্তি। কয়েক বছর আগেও কৃষকরা হাতে কাটা, মাড়াই করলেও এখন সবকিছু হচ্ছে মেশিনেই। যন্ত্রের সাহায্যে অল্প সময়ের মধ্যেই চলছে সবকিছু। একই যন্ত্রে ক্ষেতে বসেই কাটা, মাড়াই ও ঝাড়াই করে বস্তাজাতও হচ্ছে ফসল। রাজশাহীর মাঠে মাঠে এখন পুরোদমে শুরু হয়েছে গম কাটা-মাড়াই। শ্রমিক সঙ্কটের হাত থেকে রেহাই পেতে এখন এক যন্ত্রেই চলছে কাটা-মাড়াই-ঝাড়াই। অনুকূল আবহাওয়া থাকায় এবার রাজশাহী জেলায় গমের আবাদ ভাল হয়েছে। সঠিক সময়ে গম বপন করায় আবাদ ভাল হয়েছে বলে জানিয়েছে চাষি ও কৃষি সংশ্লিষ্টরা। গতবারের চেয়ে এবারে গমের আবাদ কিছু বেশি হয়েছে। জেলার মাঠে মাঠে এখন শোভা পাচ্ছে সোনালি-হলদে গমের ক্ষেত। কোথাও শ্রমিক দিয়ে আবার যন্ত্র দিয়ে চলছে কাটা-মাড়াই ও ঝাড়াইয়ের কাজ। সোমবার সরেজমিন পবা উপজেলার দুয়ারীবিলে দেখা যায়, কম্বাইন্ড হারভেস্টার দিয়ে পুরোদমে চলছে গম কাটা-মাড়াই ও ঝাড়াইয়ের কাজ। এই যন্ত্রের মালিক কাম-চালক আতাউর রহমান বলেন, দিনে প্রায় ২০/২৫ বিঘা জমির গম কাটা-মাড়াই ও ঝাড়াই করা যায়। প্রতিবিঘা জমির ফসল কাটা-মাড়াই ও ঝাড়াই করতে ২৫/৩০ মিনিট সময় লাগে। তিনি আরও বলেন, কিছুদিন আগে প্রতিবিঘা জমির গম কাটা-মাড়াই ও ঝাড়াই করতে নিয়েছেন ১২শ’ টাকা। এখন নিচ্ছেন ১৮শ’ থেকে ২ হাজার টাকা। এই মেশিনে ধান, গম ও সরিষা কাটা-মাড়াই ও ঝাড়াই করা যাবে। বস্তায় ভরেও দেয়া হয় ফসল। তিনি জানান, নতুন এই মেশিনের দাম পড়েছে ১৮ লাখ টাকা। যার মধ্যে সরকার ৫ লাখ টাকা ভর্তুকি দিয়েছে। ক্ষেতের মালিক জাফরুল্লাহ মিঠু বলেন, যন্ত্রে গম কাটা-মাড়াই ও ঝাড়াইয়ে অনেক সুবিধা আছে। শ্রমিক সঙ্কটে ভাল কাজ দিচ্ছে এসব যন্ত্র। আবার বাড়ি-ঘর ধুলাবালিতে নোংরার হাত থেকে বাঁচা যাচ্ছে। সময় কম লাগায় প্রাকৃতিক দুর্যোগ এড়ানো সম্ভব। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক সামশুল হক জানান, এবার জেলায় গমের আবাদ লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কিছু বেশি হয়েছে। আবহাওয়া ভাল থাকায় আবাদ ভাল হওয়ায় উৎপাদন আশানুরূপ হবে। বর্তমান সরকার কৃষি যান্ত্রিকীকরণে যুতসই বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছেন। যার মধ্যে কম্বাইন্ড হারভেস্টার একটি। রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর জানায়, চলতি মৌসুমে রাজশাহীতে গম চাষের লক্ষমাত্রা ধরা হয়েছিল প্রায় ২৭ হাজার হেক্টর। জেলার বিভিন্ন উপজেলায় আবাদ হয়েছে প্রায় সাড়ে ২৭ হাজার হেক্টর। গমচাষি ও কৃষিবিদরা বলেন, চলতি রবিমৌসুমের শুরু থেকে অনুকূল আবহাওয়া থাকায় চাষিরা ভালভাবেই গমবীজ বপন করেছেন। ভাল উৎপাদনের আশা করছেন তারা। এছাড়া পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় কম সেচে গমের আবাদ বাড়ছে। আবার এরই মধ্যে গম গবেষণা কেন্দ্রের বিজ্ঞানীরা ব্লাস্ট রোগ প্রতিরোধী একাধিক জাত উদ্ভাবন করে সারাদেশে চাষাবাদের জন্য অবমুক্ত করেছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় চাষিরা এবার উৎপাদন ভাল হবার আশা করছেন।
×