ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সেনসেক্স নিফটি উভয়ই উর্ধমুখী ॥ অনিশ্চয়তা আছে সামনে

প্রকাশিত: ০৯:১৫, ২ এপ্রিল ২০১৯

সেনসেক্স নিফটি উভয়ই উর্ধমুখী ॥ অনিশ্চয়তা আছে সামনে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ আর্থিক বছরের শুরুর দিনই চাঙ্গা শেয়ার বাজার। শুধু তেজি নয়, সেনসেক্স উঠে গেল নতুন উচ্চতায় ৩৯০০০ এর ঘরে। তাল মিলিয়ে উর্ধমুখী নিফটিও। ২০১৮ সালের সেপ্টেম্ব^রের পর নিফটিও উঠল ১১,৭০০-তে। ব্যাংকিং, অটো, মেটাল, আইটি থেকে সব ধরনের শেয়ারই ওপরের দিকে। সবচেয়ে বেশি দাম বাড়ার তালিকায় আইসিআইসিআই ব্যাংক, ইনফোসিস, লার্সেন এ্যান্ড টুব্রো, এইচডিএফসি ব্যাংক, টিসিএস, রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজের মতো শেয়ার। সোমবার সকালে প্রায় ১৮৬ পয়েন্ট ওপরে উঠে খোলে সেনসেক্স। মাঝে কিছু সময়ের জন্য পতন হলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আরও বাড়তে থাকে। আর সবচেয়ে বেশি উঠেছে ৩৫৬ পয়েন্ট। নিফটি খুলেছিল শুক্রবারের চেয়ে প্রায় ৫৮ পয়েন্ট ওপরে উঠে। তারপর থেকে নিফটিও উর্ধমুখী। সব মিলিয়ে বাজারে তেজি ভাব বজায় রয়েছে। বাজার বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, নতুন আর্থিক বছরের শুরুতে লগ্নিকারীরা নতুন উদ্যম নিয়ে বিনিয়োগ করতে শুরু করেছেন। তাছাড়া প্রায় মার্চ মাসের শেষ সপ্তাহেও বাজার ভাল ছিল। প্রায় সপ্তাহজুড়েই বেড়েছে সেনসেক্স এবং নিফটি। তাতে বিদেশী বিনিয়োগকারীদেরও কিছুটা আস্থা ফিরেছে। সেই সবের যোগফলেই এই ‘বুল রান’। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, আগামী কয়েকদিন বাজারের এই উর্ধগতি বজায় থাকবে। বিশ্লেষকরা বলছেন, ছোট-মাঝারি শেয়ারগুলোতে একটু হলেও প্রাণ ফিরেছে। উন্নতি হয়েছে চুপসে যাওয়া ইকুইটি (শেয়ার ভিত্তিক) ফান্ডের ন্যাভে। মূল্যবৃদ্ধি মাথা তুললেও, নিয়ন্ত্রণে। তবু বলা যাবে না, নতুন বছরে অনিশ্চয়তার মেঘ সরেছে সাড়ে ৩৮ হাজার পেরিয়ে যাওয়া বাজারের ওপর থেকে। বরং লগ্নিকারীদের আরও বেশি সতর্ক হয়ে পা ফেলতে হবে। সামনে অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা অপেক্ষা করে আছে। ভাল-মন্দ যাই হোক, সে সবের জের পড়বে সূচকে। এগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো, সুদের হার। ৪ এপ্রিল যা জানাবে রিজার্ভ ব্যাংক। রেপো রেট কমলে, সুদ কমবে ঋণে। শিল্পের দাবি, বৃদ্ধিতে গতি আনতে এটা জরুরী। এছাড়া সামনে লোকসভা ভোটের যজ্ঞ এবং দেশজুড়ে বর্ষার গতিপ্রকৃতি শুরু হচ্ছে। অর্থনীতির স্বাস্থ্য যে এখন পোক্ত, তা বলা যাবে না। বাজার মূলত উঠছে বিদেশী লগ্নিকারী সংস্থাগুলোর পুঁজির জোরে। যা চিন্তা বাড়াচ্ছে। তাই পায়ের তলার জমি মজবুত করতে লগ্নিকারীরা এখন ভাল খবর শুনতে চান। যেমন সুদ কমা, কেন্দ্রে স্থিতিশীল সরকার আসা, বৃষ্টি ভাল হওয়া, সংস্থাগুলোর তাক লাগানো ফল, চীন-মার্কিন শুল্ক সন্ধি ইত্যাদি। কিন্তু পুরোটাই আপাতত সময়ের হাতে। আশঙ্কা বাড়িয়েছে বিশ্ব বাজারে বাড়তে থাকা তেলের দর। যা অব্যাহত থাকলে, ধাক্কা খেতে পারে বিশ্ব অর্থনীতি। বিশেষত ডিসেম্বরে যেহেতু চলতি খাতে বিদেশী মুদ্রা লেনদেন ঘাটতি বেড়ে পৌঁছেছে ১৬,৯০০ কোটি ডলারে। বাণিজ্য ঘাটতি বেড়ে ৪,৯৫০ কোটি। আছে রাজকোষ ঘাটতিও। তবে সুখের কথা হলো, রিজার্ভ ব্যাংক দু’দফায় সুদ কমালেও জমায় সুদ এখনও তেমন কমেনি। এই অর্থবর্ষের প্রথম তিন মাসে সুদ কমানো হয়নি স্বল্প সঞ্চয়ে। ৮.৭ শতাংশ পর্যন্ত সুদ মিলছে সেখানে। বিভিন্ন ব্যাংক জমায় সুদ দিচ্ছে ৬.৭৫-৮ শতাংশ। ভারত সরকারের বন্ডে সুদ ৭.৭৫ শতাংশ। এক সময় বন্ডের ইল্ড বা প্রকৃত আয় কমলেও, এখন তা ৭.৪০ শতাংশের আশপাশে। তবে গত অর্থবর্ষ ভাল কাটেনি নতুন ইস্যুর। পাবলিক ইস্যু মারফত সংগ্রহ এক-তৃতীয়াংশে নেমেছে। প্রথম শেয়ার ইস্যু (আইপিও) মারফত সংগ্রহ নেমেছে ১৬,২৯৪ কোটিতে। যা ইঙ্গিত দেয়, গতবছরে নতুন প্রকল্প ও তাতে লগ্নি ভাল রকম কমেছে। কেন্দ্র অবশ্য বিলগ্নিকরণের লক্ষ্য পূরণ করেছে।
×