ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

পদোন্নতির পর এবার গাড়ি কেনার ঋণ নিয়ে ডিএসইতে অসন্তোষ

প্রকাশিত: ০৯:১৩, ২ এপ্রিল ২০১৯

পদোন্নতির পর এবার গাড়ি কেনার ঋণ নিয়ে ডিএসইতে অসন্তোষ

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পদোন্নতির ক্ষেত্রে অনিয়মের অভিযোগ ওঠায় সম্প্রতি পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) প্রতিষ্ঠানটির চাকরির বিধিমালা করে দেয়ার উদ্যোগ নিয়েছে। তবে এই বিধিমালা প্রণয়নের আগেই ফের অর্ধশত কর্মকর্তার পদোন্নতি দিয়েছে ডিএসই। তবে মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের পদোন্নতি বঞ্চিত হওয়ায় চাপা ক্ষোভ রয়ে গেছে। এর মাঝেই এজিএম পর্যায়ের কর্মকর্তাদের গাড়ি কেনার ঋণ দেয়ার সিদ্ধান্তের পর নিচের স্তরের কর্মকর্তাদের ক্ষোভ আরও বেড়েছে। এই নিয়ে চরম অসন্তোষও দেখা গেছে তাদের মধ্যে। ডিএসইর একাধিক কর্মকর্তা বলেছেন, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পদোন্নতির ক্ষেত্রে দীর্ঘদিন ধরে অনিয়ম করা হচ্ছে। চাকরির বিধিমালায় ২-৪ বছরের মধ্যে অফিসার এবং নন-অফিসার পদে পদোন্নতির কথা উল্লেখ থাকলেও অনেক কর্মকর্তাকে ১০ বছরের অধিক সময় ধরে কোন পদোন্নতি দেয়া হয়নি। পদোন্নতির ক্ষেত্রে বরাবরই যোগ্য কর্মকর্তাদের বঞ্চিত করে তোষামোদকারীদের বেছে নেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে ডিএসইর সাবেক এক কর্মকর্তা (বর্তমানে একটি বেসরকারী বাণিজ্যিক ব্যাংকে কর্মরত) বলেন, ডিএসইতে পদোন্নতির ক্ষেত্রে অনেক অনিয়ম হয়। যোগ্যতাকে মূল্যায়ন না করে যারা লেজুড়বৃত্তি করতে পারেন তাদের পদোন্নতি দেয়া হয়। তিনি বলেন, ২০১০ সালে আমরা ৩০-৩৫ জন ডিএসইতে এক্সকিটিভ হিসেবে যোগ দিয়েছিলাম। কিন্তু পদোন্নতির অনিয়মের কারণে আমার ব্যাচের প্রায় সবাই ডিএসইর চাকরি ছেড়ে দিয়েছেন। এখন মাত্র ৫-৭ জনের মতো আছেন। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জনা গেছে, ডিএসইর বর্তমান প্রধান অর্থ কর্মকর্তা (সিএফও) আব্দুল মতিন পাটোয়ারী প্রতিষ্ঠানটিতে যোগদানের পর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পদোন্নতির ক্ষেত্রে কেপিআইভিত্তিক (কি পারফরম্যান্স ইন্ডিকেটর) মূল্যায়ন পদ্ধতি চালু করেন। এতে দীর্ঘদিন ধরে ডিএসইতে কাজ করা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পদোন্নতি এবং বেতন বৃদ্ধির ক্ষেত্রে এক ধরনের জটিলতা তৈরি হয় এবং কর্মকার্তাদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দেয়। এরপরও বর্তমানে ডিএসইতে পদোন্নতির ক্ষেত্রে কেপিআইভিত্তিক মূল্যায়ন পদ্ধতিই বহাল রয়েছে। এই মূল্যায়ন পদ্ধতির ওপর ভিত্তি করে ২০১৭-১৮ বছরের জন্য সম্প্রতি ডিএসইর প্রায় অর্ধশত কর্মকর্তা-কর্মচারীকে পদোন্নতি দেয়া হয়েছে। তবে এক্ষেত্রেও যোগ্যদের বঞ্চিত হওয়ার রীতি অব্যাহত রয়েছে। কেপিআইভিত্তিক মূল্যায়ন পদ্ধতিতে সর্বোচ্চ নম্বর পেয়েও পদোন্নতি থেকে বঞ্চিত হয়েছেন অনেকে। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের এভাবে বঞ্চিত করা হলেও ডিএসইর শীর্ষ কর্মকর্তারা তাদের সুবিধা বাড়িয়ে নিচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। সম্প্রতি ডিএসইর পর্ষদ সদস্যদের সম্মানী ৫ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ১০ হাজার টাকা করা হয়েছে। এর আগে সিএফও এবং প্রধান প্রযুক্তি কর্মকর্তার (সিটিও) চাকরি চুক্তিভিত্তিক হলেও তারা তা স্থায়ী করে নেন। এমন অনিয়ম চলার মধ্যেই চলতি বছরের শুরুর দিকে ডিএসইর চাকরি বিধিমালা ঠিক করার উদ্যোগ নেয় বিএসইসি। ডেপুটি ডিরেক্টর আবুল কালাম আজাদের নেতৃত্বে একটি কমিটিও গঠন করা হয়। এরপর জানুয়ারি মাসের মাঝামাঝি সময়ে বিএসইসির দু’জন প্রতিনিধি (আবুল কালাম আজাদ ও নজরুল) ডিএসইর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে একাধিক বৈঠক করেন। বৈঠকে ডিএসইর কর্মকর্তারা বিএসইর উদ্যোগকে স্বাগত জানান এবং প্রধান অর্থ কর্মকর্তা ও প্রধান প্রযুক্তি কর্মকর্তার পদ দুটি চুক্তিভিক্তিক করার দাবি জানান। অপরদিকে, বিএসইসির প্রতিনিধিদের পক্ষ থেকে ডিএসইর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বলা হয়, যদি কোন অভিযোগ অথবা মতামত আপনারা এখানে (বৈঠকে) উল্লেখ করতে ভয় পান তাহলে আমাদের ই-মেইল করেও জানাতে পারেন। এ সময় বিএসইসির দুই কর্মকর্তা তাদের ই-মেইল ঠিকানা ডিএসইর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দিয়ে আসেন। এরপর ডিএসইর একাধিক কর্মকর্তা তাদের কাছে ই-মেইলে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন। তবে সেই বিষয়ে এখনও চূড়ান্ত কোন সিদ্ধান্ত আসেনি। অন্যদিকে এই পদোন্নতির পর সেখানে কর্মকর্তাদের মধ্যে গাড়ি কেনার ঋণ নিয়ে অসন্তোষ বেড়েছে। সম্প্রতি ডিএসইর এইচআর (হিউম্যান রিসোর্স) বিভাগ থেকে ‘রিভাইজড কার স্কিম’ সংক্রান্ত সার্কুলার প্রকাশের পর এই অসন্তোষ দেখা দেয়। রিভাইজড কার স্কিমটি ডিএসইর ৯২০তম বোর্ড সভায় পাস হয়। ডিএসইর কর্মকর্তারা জানান, আগে ডিএসইর কার স্কিম শুধু উপ-মহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) লেভেল পর্যন্ত ছিল। এবার তা সহকারী মহাব্যবস্থাপক (এজিএম) লেভেল পর্যন্ত করা হয়েছে। তবে এ জন্য কিছু শর্ত জুড়ে দেয়া হয়েছে। ফলে ডিএসইর ব্যবস্থাপনা পর্ষদ ও প্রভাবশালী সদস্যদের আস্থাভাজনরাই এই সুবিধা পাবেন। পক্ষান্তরে ভাল কাজ করার পরও অনেকে বঞ্চিত হবেন। এমন আশঙ্কা করছেন ডিএসইর অনেক কর্মকর্তা। বিশেষ করে এজিএম পদের কর্মকর্তারা। ডিএসইর একাধিক এজিএম জানান, সম্প্রতি প্রায় অর্ধশত কর্মকর্তা-কর্মচারীকে পদোন্নতি দেয়া হলেও কোন এজিএমকে পদোন্নতি দেয়া হয়নি। পদোন্নতি দেয়ার আগে ডিএসইর ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) কে এ এম মাজেদুর রহমান এজিএমদের ডেকে দীর্ঘ সময় বৈঠক করেন। বৈঠকে তিনি এজিএমদের পদোন্নতি না দিতে পারার অপারগতা প্রকাশ করেন এবং সকলকে গাড়ি দেয়া হবে বলে প্রতিশ্রুতি দেন। এ বিষয়ে একজন এজিএম নাম প্রকশ না করার শর্তে বলেন, নতুন কার স্কিমে যে শর্ত রাখা হয়েছে তাতে আগের স্কিম অনুযায়ী পাঁচ বছরে ঋণ পরিশোধ হওয়ার পর সকল ডিজিএম পুনরায় দ্বিতীয় গাড়ির জন্য আবেদন করতে পারবেন। আগেরবার গাড়ি পাওয়া সকল ডিজিএমের পাঁচ বছরের মেয়াদ পূর্ণ হয়েছে। অর্থাৎ এখন যে পলিসি (নীতিমালা) পাস হলো তাতে পুরাতন ডিজিএমরা আবারও গাড়ি পাচ্ছেন। ফলে দেখা যাবে ডিজিএমদের ঋণ দিতেই বাজেট শেষ হয়ে যাবে।
×