ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

নগর আতঙ্ক দূর হোক

প্রকাশিত: ০৮:৫৯, ২ এপ্রিল ২০১৯

নগর আতঙ্ক দূর হোক

সম্প্রতি রাজধানীতে যে হারে অগ্নিকাণ্ড ও সড়ক দুর্ঘটনা বেড়েছে, তাতে এ দুটো বিষয় শুধু নগরবাসীর নয়, বরং সারাদেশের মানুষের আতঙ্ক ও দুশ্চিন্তার খোরাকে পরিণত হয়েছে। এই দুঃসংবাদ ছড়িয়েছে বহির্বিশ্বেও। প্রথমত অগ্নিকাণ্ডের কথাই ধরা যাক। চুড়িহাট্টার ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ক্ষত শুকাতে না শুকাতেই ঘটল বনানীর এফ আর টাওয়ারের অগ্নিকা-ের ঘটনা। পরদিনই গুলশান কাঁচাবাজারে আগুন। এসব অগ্নিকাণ্ড ঘটনায় বিপুল পরিমাণ আর্থিক ক্ষয়ক্ষতির খবর যেমন আছে, তেমনি রয়েছে বেশ কিছু মানুষের অসহায় মৃত্যু সংবাদ। আগুনে পুড়ে যাদের মৃত্যু ঘটছে তা যেমন হৃদয় বিদারক তেমনি দুঃসহ বেদনা উদ্রেককারী। অথচ এসব মৃত্যুর জন্য তারা দায়ী নয় কোনভাবেই। বরং বলা যায় এক শ্রেণীর মানুষের, মানুষ না বলে অমানুষ অথবা দুর্বৃত্ত বলাই বোধকরি শ্রেয়, নিতান্তই লোভের আগুনে পুড়ে অসহায় ও নিরুপায় মৃত্যুর কাছে আত্মসমর্পণ করেছে অগ্নিকা-কবলিত এসব মানুষ। এর দায়ভার নেবে কে বা কারা? এখন আমরা শুনতে পাচ্ছি যে রাজধানীর অধিকাংশ বহুতল ভবনে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা নেই। গুটিকতক ভবনে তা থাকলেও তা অপ্রতুল, অপর্যাপ্ত অথবা জরুরী পরিস্থিতি মোকাবেলায় আদৌ কাজ করে না। প্রাথমিকভাবে আগুন নেভানোর জন্য পানির ব্যবস্থা পর্যন্ত নেই শতকরা ৯৩ ভাগ ভবনে। ঢাকা শহরে পানি সমস্যা ও সঙ্কটের বিষয়টি এমনিতেই সুবিদিত। সেক্ষেত্রে অতিরিক্ত পানি ভূগর্ভের ট্যাঙ্কে অথবা ছাদে সংরক্ষণ করার বিষয়টি প্রায় অবান্তর। আরও যা দুঃখজনক তা হলো, ফায়ার সার্ভিসের পর্যাপ্ত পানি বা পানির আধার নেই। যে কারণে তারা নিমতলী, চুড়িহাট্টা অথবা বনানীতে ত্বরিত ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হয়েছে। সর্বোপরি রাজধানীর অপরিকল্পিত রাস্তাঘাট, গলিঘুঁজিতে যানজট, জনজট ঠেলে যথাসময়ে ফায়ার সার্ভিসের যানবাহন পৌঁছানোও দুুরূহ ও সময়সাপেক্ষ। অন্যদিকে ফায়ার সার্ভিসের সক্ষমতা আছে সর্বোচ্চ ১৮ তলা পর্যন্ত পৌঁছানো মইয়ের সাহায্যে উদ্ধার অভিযান পরিচালনা ও পানি ছিটানোর। বনানীর ঘটনাটি ছিল ২২ তলা বিশিষ্ট, যা অবৈধ ও অননুমোদিত। ঢাকাসহ দেশের অধিকাংশ নতুন ভবন ও সুপার মার্কেট-সুপার মলের ক্ষেত্রেই কথাটি প্রযোজ্য। প্রশ্ন হলো, বিল্ডিং কোড ও অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা না রেখে এ রকম বহুতল ভবন নির্মাণের প্রতিযোগিতা আর কত দিন? আমরা কি কোন দিন সভ্য হব না, বিশেষ করে দেশ যখন মধ্যম আয়ের দেশ হওয়ার প্রতিযোগিতায় এগিয়ে যাচ্ছে! আরও একটি বিষয় হলো জরুরী পরিস্থিতি মেকাবেলায় রাজধানীর কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ‘ফায়ার হাইড্রেন্ট’ পর্যন্ত নেই, যা থেকে পানি পাওয়া সহজ হতে পারে আগুন নেভানোর জন্য। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সম্প্রতি বলেছেন, ফায়ার সার্ভিসকে অধিক কার্যকর করার জন্য চারটি ভাগে ভাগ করা হবে, যাতে দুর্ঘটনাস্থলে পৌঁছাতে সময় কম লাগে। এ সময়ে ফায়ার হাইড্রেন্ট বা জরুরী জলাশয়ের বিষয়টিও মাথায় রাখতে হবে। সর্বোপরি প্রতিটি বহুতল ভবনে যেন জরুরী বহির্গমনসহ অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়। এর পাশাপাশি বিভিন্ন বিল্ডিংয়ে কর্মরতদের নিয়মিত প্রশিক্ষণও প্রত্যাশিত বৈকি। সত্যি বলতে কি, সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধের ক্ষেত্রেও আমাদের প্রায় একই রকম প্রস্তুতি ও প্রশিক্ষণ অনিবার্য। প্রথমত কথা হলো রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশ থেকে ফিটনেসবিহীন যানবাহন জরুরী ভিত্তিতে অপসারণ করতে হবে। এক পরিসংখ্যানে দেখতে পাচ্ছি যে, সারা দেশে তালিকাভুক্ত যানবাহনের তিন ভাগের এক ভাগ চলছে ঢাকায়। মোট যানবাহনের মধ্যে ৭১ হাজারই চলাচলের অযোগ্য। অথচ এসবই অবলীলায় চলছে ঢাকাসহ দেশের সর্বত্র। বসুন্ধরার জেব্রা ক্রসিংয়ে রাস্তা পার হওয়ার সময় আবরারকে যে বাসটি চাপা দিল, সুপ্রভাত পরিবহনের সেই বাসটির ফিটনেস তো দূরের কথা, রাজধানীতে চলাচলের রুট পারমিটই ছিল না। এই অরাজকতা ও নৈরাজ্য বন্ধ করতে হবে যে কোন মূল্যে। ঢাকার পুলিশ কমিশনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনবেন। আমরা আস্থা রাখতে চাই তার অঙ্গীকারে। বলা ভাল যে, ব্যতিব্যস্ত নাগরিক জীবনে দুর্ঘটনা একেবারে এড়ানো যাবে না- তা সে সড়ক দুর্ঘটনা অথবা অগ্নিকাণ্ড যাই হোক না কেন। তবে যার যার অবস্থান থেকে যথাসম্ভব সতর্ক ও সাবধান হলে এবং যথাযথ প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করলে অন্তত দুর্ঘটনার হারসহ জীবনহানি ও সম্পদহানি কমিয়ে আনা সম্ভব। আমরা সবাই মিলে বরং সেই চেষ্টাই করি না কেন! এটা কিন্তু নাগরিক সচেতনতা ও দায়-দায়িত্বেরই অপরিহার্য অংশ।
×