ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ছোট্ট নাইম এখন রীতিমতো তারকা

প্রকাশিত: ১০:৩৬, ১ এপ্রিল ২০১৯

 ছোট্ট নাইম  এখন  রীতিমতো তারকা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বনানীর এফআর টাওয়ারে অগ্নিকা-ের ভয়াবহতা সামলে মানুষের জীবন রক্ষায় যখন ফায়ার সার্ভিসকর্মীসহ সংশ্লিষ্টদের সামর্থ প্রশ্নবিদ্ধ তখন রীতিমতো ‘সুপারম্যান’ ছোট্ট শিশু নাইম ইসলাম। ছোট্ট সুপারম্যান নাইম এখন রীতিমতো তারকা। আগুন লাগার পরে বহু মানুষের সঙ্গে সেও ঝাঁপিয়ে পড়েছিল লড়াইয়ে। নিজ তাড়নাতেই হাত বাড়ায় শিশু নাঈম। দমকলের পাইপের একটি লিক বন্ধ করতে বৃহস্পতিবার কয়েক ঘণ্টা দাঁতে দাঁত চেপে বসেছিল সে। যখন দাউ দাউ করে জ্বলছে এফআর টাওয়ার, আগুন নেভাতে প্রাণপণ চেষ্টা করে যাচ্ছেন ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা। ভয়াবহ ওই পরিস্থিতিতে কয়েক হাজার উৎসুক জনতা যখন হা করে তাকিয়ে ছিলেন জ্বলন্ত ভবনের দিকে, কেউ কেউ যখন মোবাইলে ছবি তোলায় ব্যস্ত ছিলেন, ঠিক তখন ফায়ার সার্ভিসের ফাটা পাইপে পলিথিন জড়িয়ে পানি আটকানোর চেষ্টা করতে দেখা যায় এক শিশুকে। কড়াইল বস্তির পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্র নাইমের সেই ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়ার পরে তার অনুকরণে সুপারম্যানের কার্টুনও জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। গরিব নাইমের রোজ খাবার জোটে না। তবু সে স্থানীয় আনন্দ স্কুলে পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছে, কারণ মানুষের পাশে দাঁড়াতে পুলিশ অফিসার হওয়া তার জীবনের লক্ষ্য। নাইম ইসলাম নামের ওই বালকের ছবি ছড়িয়ে পড়েছে ফেসবুকে। অনেকেই শিশুটিকে প্রশংসায় ভাসিয়ে সেই ছবি শেয়ার করেন। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ‘হিরো’ হয়ে ওঠা নাইম শুক্রবারও বনানীর সেই পোড়া ভবনের সামনে এলে অনেকেই তাকে ধন্যবাদ জানান। বুদ্ধিদীপ্ত কাজের জন্য তাকে বুকে জড়িয়ে ধরেন কেউ কেউ। পঞ্চম শ্রেণী পড়ুয়া নাইম সাংবাদিকদের বলে, আমি দুপুর বেলা এসে দেখি এখানে আগুন লেগেছে, ফায়ার সার্ভিস অনেক কষ্ট করে আগুনটা নেভাতে চাইছে। আমি দেখি পাইপটা ফাটা, সেজন্য আমি পাইপটা চাপ দিয়ে ধরে রাখলাম, যেন পানিটা ভালমতো কাজে লাগে, আগুন নিভে যায়। পলিথিন কোথায় পেয়েছ- সেই প্রশ্নে নাইম জানায়, একজন এসে পলিথিন দিয়ে গেলে সেটা দিয়েই ফাটা পাইপ চাপ দিয়ে ধরে রাখি আমি। সবাই যখন ঘুরছিল, এই শিশু কেন ফাটা পাইপের পানি বন্ধের চেষ্টা করতে গেল? নাইমের উত্তর, আমার মনে হচ্ছিল শতশত লোক মারা যাবে। আমি যদি পাইপটা ধরে রাখতে পারি তবে ফায়ার সার্ভিস পানিটা আগুন নেভানোর কাজে লাগিয়ে মানুষকে বাঁচাতে পারবে। রাজধানীর কড়াইল বৌ বাজারে বাবা-মায়ের সঙ্গে থাকে নাইম। বাবা ডাব বিক্রি করেন। আর তার মা মেসে রান্নার কাজ করেন। ছোট এক বোন আছে তার। তাদের গ্রামের বাড়ি বরিশালে। বড় হয়ে কী হতে চাও- এই প্রশ্ন করতেই নাইম জানাল, সে পুলিশ অফিসার হতে চায়। পুলিশ ফায়ার সার্ভিসকে অনেক সহযোগিতা করেছে। আর লোকজনকে দূরে পাঠিয়ে দিয়েছে যেন তাদের ক্ষতি না হয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নাইমের এই কাজ যে প্রশংসা পাচ্ছে সেই খবর বাড়িওয়ালার ভাগ্নের কাছ থেকে শুনেছে বলে জানায় নাইম। সিলেটের বাসিন্দা মার্কিন প্রবাসী ফারুক সামি জানিয়েছেন, নাইমের ইচ্ছা পূরণের জন্য তার পড়াশোনার দায়িত্ব তিনি নিচ্ছেন। সঙ্গে ৫০০০ ডলার পুরস্কারও তিনি দিচ্ছেন ছোট্ট এই সুপারম্যানকে। সামি জানিয়েছেন, মানুষের প্রতি নাইমের ভালবাসা দেখে আমি মুগ্ধ। এত কষ্টের মধ্যেও সে লেখাপড়া করে চলেছে, কারণ পুলিশ অফিসার হতে চায়। তার ইচ্ছা পূরণে সহযোগী হতে চাই।’ আরব আমিরাতের বাসিন্দা চট্টগ্রামের জাহাঙ্গির হোসাইন আবার নাইমের সাহসিকতার ইনাম হিসেবে তার দুবাই ভ্রমণের ব্যবস্থা করছেন বলে জানিয়েছেন। জাহাঙ্গির জানিয়েছেন, ‘নাইমের মানবিক কাজ আমাকে মুগ্ধ করেছে। আমি তার দুবাই বেড়ানোর বন্দ্যোবস্ত করছি। ভিসা, বিমান টিকিটসহ বেড়ানোর সব খরচ আমি দেব।’ নাইমের মা নাজমা বেগম জানিয়েছেন, ‘নাইমের পাসপোর্ট নেই। সে ব্যবস্থা হলে তাকে দুবাই যেতে দিতে আমার আপত্তি নেই।’ আর এসব শুনে নাইম শুধু হেসেছে। সকাল থেকে অনেক মানুষ ভিড় করে তাকে দেখতে এসেছেন। পুরস্কার, দুবাই বেড়ানোর এই সব খবর পেয়ে সে বলেছে, ‘সবই ভাল। আনন্দের খবর। কিন্তু কী এমন আমি করেছি!
×