ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

অনিয়ম পাওয়া গেলে কাউকে ছাড় নয় ॥ পূর্তমন্ত্রী

ইমারত নির্মাণ বিধি ভঙ্গ তদন্তে মাঠে নামছে রাজউক

প্রকাশিত: ১০:৩৫, ১ এপ্রিল ২০১৯

 ইমারত নির্মাণ বিধি ভঙ্গ তদন্তে মাঠে নামছে রাজউক

স্টাফ রিপোর্টার ॥ অর্থলিপ্সু মানুষ ইমারত নির্মাণ বিধিমালা ভঙ্গ করে রাজধানীতে বহুতল ভবন নির্মাণ করে আইন ভঙ্গ করেছেন। এসব আইন অমান্যকারীদের চিহ্নিত করতে সোমবার থেকেই রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) মোট ২৪ টিম নিয়ে মাঠে নামবে। এসব টিম আগামী ১৫ দিনের মধ্যেই তাদের তালিকা তৈরি করবে। তালিকায় উঠে আসা নিয়ম ভঙ্গকারী হিসেবে চিহ্নিত হওয়া ভবন মালিকদের নামের তালিকা গণমাধ্যমে প্রকাশ করা হবে বলে জানিয়েছেন গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম এমপি। একইসঙ্গে অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা কোন ভবনে পর্যাপ্ত না থাকলে অকুপেন্সি সনদ দেয়া হবে না বলেও জানান। রবিবার সম্প্রতি বনানী এফআর টাওয়ারের অগ্নিকান্ডের প্রেক্ষিতে ও ঢাকা শহরে বিদ্যমান ভবনসমূহের বর্তমান অবস্থা ও সম্পর্কে করণীয় বিষয়ে এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। রাজউক অডিটরিয়ামের অনুষ্ঠিত এ দিক নির্দেশনামূলক বিশেষ সভা শেষে প্রেস ব্রিফিংয়ে মন্ত্রী সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন। মন্ত্রী বলেন, রাজউকের ২৪টি টিম প্রথমে বহুতল ভবন, দ্বিতীয় দফায় সকল ভবন পরিদর্শন করবে। এরপর সকলকে বিল্ডিং কোডের আওতায় আনার জন্য যে সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার, আমরা সে ব্যবস্থা গ্রহণ করব। বিল্ডিং কোডের অধীনে সকল শর্ত পালন না করলে বিল্ডিং ব্যবহার করতে দেয়া হবে না। অনুমোদনহীন বিল্ডিং ভেঙ্গে ফেলা হবে। অনুমোদনের বাইরে কোন অবকাঠামো থাকার কোন সুযোগ নেই। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে মন্ত্রী বলেন, অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা বিল্ডিং-এ পর্যাপ্ত না থাকলে অকুপেন্সি সনদ দেয়া হবে না। আমরা আরও সিদ্ধান্ত নিয়েছি বিল্ডিং ব্যবহারের পূর্বে হোল্ডিং নম্বর থাকতে হবে। যে সকল বিষয় সন্নিবেশিত থাকলে বিল্ডিংটি নিরাপদ, বাস উপযোগী, ব্যবহার উপযোগী, পরিবেশসম্মত থাকবে, এর একটি শর্ত পূরণ না হওয়া পর্যন্ত অকুপেন্সি সার্টিফিকেট ইস্যু করা হবে না। গণপূর্ত মন্ত্রী বলেন, বিভিন্ন স্থানে লম্বা লম্বা বক্তব্য রাখা অর্থলিপ্সু নরপিশাচ ওই সব ক্ষমতাবান ব্যক্তিরা কী অবস্থায় থাকেন বা কারা আইন লঙ্ঘন করেন, তাদের চেহারা দেশবাসীর জানাতে এই তালিকা প্রকাশ করব। তদন্ত রিপোর্ট হাতে পেলে অবৈধ সকল ভবনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব। অবৈধ ভবন অনুমোদনে যেই জড়িত থাকুক, তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও জানান মন্ত্রী। তিনি বলেন, রাজধানীর সকল ভবন পরিদর্শন করে বিল্ডিং কোডের আওতায় আনার জন্য প্রয়োজনীয় সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। গণপূর্তমন্ত্রী বলেন, আমরা দেখব কোন বহুতল ভবন ইমারত নির্মাণ বিধিমালা অথবা শর্তাদি প্রতিপালন করে নাই। সেই সব ভবনের মালিকদের চেহারা মানুষের জানা উচিত। এবার শুধু রাজউকের দেয়ালে নয়, জাতীয় দৈনিক ও টেলিভিশনে বিজ্ঞাপন আকারে প্রকাশ করব, কারা অর্থলোভী মানুষরূপী নরপিশাচ। মন্ত্রী বলেন, বনানীতে অনাকাক্সিক্ষত অগ্নিকান্ডের ঘটনা সরকার অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে গ্রহণ করেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজে এ ঘটনা মনিটর করছেন। তার নির্দেশনায় গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়, রাজউক, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, সিভিল ডিফেন্স ও ফায়ার, ঢাকা সিটি কর্পোরেশন সকলে মিলে আমরা একসঙ্গে কাজ করেছি। তিনি বলেন, আমাদের মন্ত্রণালয় এবং রাজউক স্বল্প সময়ে তদন্ত প্রতিবেদন দেবে। প্রতিবেদনে বিল্ডিংয়ের অনুমোদন থেকে শুরু করে বিল্ডিং উর্ধমুখী হলো কিসের ভিত্তিতে, সে সময় কারা দায়িত্বে ছিলেন, যথাযথ অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা ছিল কিনা, সিঁড়ি পর্যাপ্ত প্রশস্ত ছিল কিনা, একটা দুর্ঘটনা হলে দ্রুত গতিতে মানুষ বেরিয়ে আসার মতো অবস্থা ছিল কিনা-এ সমগ্র বিষয় তদন্ত কমিটি নির্ধারণ করবে। যে সময় উর্ধমুখী অতিরিক্ত ভবন নির্মিত হয়েছিল, সে সময় সেখানে ইন্সপেক্টর বা অথরাইজড অফিসার কারা ছিলেন অথবা অন্যান্য কারা কিভাবে সম্পৃক্ত সকলকে তদন্ত কমিটি দৃশ্যপটে নিয়ে আসবে। স্বাধীন তদন্ত কমিটির রিপোর্টের ভিত্তিতে আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করব। এফ আর টাওয়ারের ব্যাপারে মন্ত্রী বলেন, ২০০৭ সালে একজন অথরাইজড অফিসার রিপোর্ট করেছেন এফআর টাওয়ার বিধি বহির্ভূতভাবে ১৮ তলার স্থলের ২৩ তলা করা হয়েছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। এ দায়িত্বহীনতাকে আমরা চিহ্নিত করব। যে অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা পুরান ঢাকায় এবং বনানীতে ঘটল সে ধরনের দুর্ঘটনা যাতে ভবিষ্যতে আর না ঘটে সে জন্য দেশবাসীর সহযোগিতা কামনা করেছেন মন্ত্রী। মন্ত্রী নগরবাসীর সকল ভবন মালিক, নির্মাণ প্রতিষ্ঠানসহ সকলের সহযোগিতা কামনা করেন। সকলে সহযোগিতা না করলে সমন্বিতভাবে কাজ করা সম্ভব হবে না। আর সমন্বিতভাবে কাজ না করলে এ জাতীয় দুযোগ বারবার হানা দেবে। যারা বিল্ডিং ব্যবহার করেন তাদের অনুরোধ করে মন্ত্রী বলেন, যে বিল্ডিং এ অগ্নি নির্বাপক ব্যবস্থা নাই, সিঁড়ির ব্যবস্থা নাই, দ্রুত নেমে আসার ব্যবস্থা নাই, অনুমোদনহীন একটি ফ্ল্যাট, সেটা আপনারা ব্যবহার করবেন না। আমরা চাই মানবিক দায়িত্ববোধে সকলে এগিয়ে আসুন। গণপূর্তমন্ত্রী বলেন, প্রতিটি স্তরে ডিজিটালাইজড ব্যবস্থা করছি, যেখানে অকুপেন্সি সার্টিফিকেটের মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অবৈধ হয়ে যাবে। একদিনেই সব করে ফেলা সম্ভব না। উদ্যোগ নিয়েছি, পুরান ঢাকার অপরিকল্পিত বাড়ি ভেঙ্গে বাসযোগ্য বহুতল ভবন করে দেব। সেখানে হার অনুযায়ী ভবন মালিকদের ফ্ল্যাট করে দেব। নতুন ঢাকা সম্পর্কে তিনি বলেন, নতুন ঢাকার উত্তরা, পূর্বাচল ও ঝিলমিল প্রকল্পের ৪৫ শতাংশ জায়গা ফাঁকা রেখে ইমারত অনুমোদন দিচ্ছি। ঢাকার ভেতরে অনেক অনুমোদনহীন ভবন অথবা নক্সা পরিপন্থী অনেক ভবন নির্মাণ করেছে।
×