ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

জিয়ার সামরিক সরকারের পেটোয়া বাহিনী নির্যাতন চালায় মিছিলে

প্রকাশিত: ১০:১৮, ১ এপ্রিল ২০১৯

 জিয়ার সামরিক সরকারের পেটোয়া বাহিনী নির্যাতন চালায় মিছিলে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ১৯৭৮ সালের ৩১ মার্চ। দিনটি ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের আন্দোলন-সংগ্রামের ঐতিহাসিক দিন। এই দিনটিকে তারা গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও অধিকার আদায়ের অবিস্মরণীয় দিন হিসাবে প্রতিবছর পালন করে যাচ্ছেন। সামরিক শাসক জেনারেল জিয়াউর রহমানের সামরিক আইনের আওতায় দেশে রাজনীতি ও পেশাজীবী সংগঠনগুলোর কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। আওয়ামী লীগসহ প্রায় সব রাজনৈতিক দলের প্রধান প্রধান নেতাকে জেলখানায় বন্দী করে। সেদিনের সেই পরিস্থিতি মোকাবেলায় ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়াররা এক দুঃসাহসী সিদ্ধান্ত নিয়ে দেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও নিজেদের পেশাগত দাবি আদায়ের জন্য ঢাকার গুলিস্তানে মাহবুব আলী মিলনায়তনে সমাবেশে মিলিত হয়েছিলেন। সমাবেশ থেকে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয় সামরিক আইন ভঙ্গ করে রাজপথে মিছিল বের করা হবে। আইডিইবি’র তৎকালীন সভাপতি প্রফেসর মোঃ তাজাম্মুল হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক এ কে এম এ হামিদের নেতৃত্বে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়াররা ঢাকায় রাজপথে নেমে আসে এবং গণতন্ত্র ও পেশাগত দাবির স্লোগানে মুখরিত করে তোলা হয় ঢাকার রাজপথ। রবিবার আইডিইবি ভবনের সোস্যাল গার্ডেনে ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স, বাংলাদেশ (আইডিইবি) আয়োজিত গণঅধিকার দিবসে বক্তারা এ কথা বলেন। গণঅধিকার দিবস ২০১৯ উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান। বিশেষ অতিথি ইঞ্জিনিয়ার মোঃ এনামুল হক এমপি, ইঞ্জিনিয়ার মোয়াজ্জেম হোসেন রতন এমপি প্রমুখ। আইডিইবির সভাপতি এ কে এম এ হামিদের সভাপতিত্বে স্বাগত বক্তব্য রাখেন আইডিইবির সাধারণ সম্পাদক মোঃ শামসুর রহমান। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন আইডিইবি’র সম্মানিত উপদেষ্টাবৃন্দ, বঙ্গবন্ধু ডিপ্লোমা প্রকৌশলী পরিষদের নেতৃবৃন্দ, বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইউনিট কমান্ডের নেতৃবৃন্দ, আইডিইবি কেনিকের সহকর্মীবৃন্দ, প্রবীণ নেতৃবৃন্দ ও সদস্যবৃন্দ, আইডিইবি ঢাকা জেলা শাখার সম্মানিত নেতৃবৃন্দ, ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স সার্ভিস এ্যাসোসিয়েশনের নেতৃবৃন্দ। স্বাগত বক্তব্যে আইডিইবির সাধারণ সম্পাদক মোঃ শামসুর রহমান বলেন, সামরিক সরকারের পেটোয়া বাহিনী নির্যাতন চালায় অধিকার আদায়ে সোচ্চার রাজপথের ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের ওপর। ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের রক্তে রাজপথ রঞ্জিত হয়। পঙ্গু হয়ে অনেক ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার দুর্বিষহ জীবনযাপন করছেন। ইতিহাসের কালপরিক্রমায় বিশেষ গুরুত্ববহ এ দিনটিকে আইডিইবি গণঅধিকার দিবস হিসেবে ঘোষণা করেছে। সেই ধারাবাহিকতায় প্রতিবছর ৩১ মার্চ ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়াররা দেশব্যাপী গণঅধিকার দিবস হিসেবে এ দিনটি পালন করে আসছে। গণঅধিকার দিবসের এ দিনে আমি শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি ওই সময়ে নির্যাতিত শ্রদ্ধেয় নেতৃবৃন্দ ও সদস্য প্রকৌশলীবৃন্দকে। যারা জীবন বাজি রেখে দেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটিয়ে স্থাপন করেছেন এক অনন্য ইতিহাস। বক্তারা বলেন, ১৯৭৮ সালের ৩১ মার্চ ঢাকার রাজপথে মিছিলে সরকারের লেলিয়ে দেয়া বাহিনী ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের মিছিলে ব্যাপক লাঠিচার্জসহ বেপরোয়াভাবে আঘাত করে রক্তাক্ত করে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার নেতৃবৃন্দ ও সদস্যদের। এ মিছিল থেকে গ্রেফতার করা হয় আইডিইবি’র সভাপতিসহ ৯ জন নেতাকে। ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের আন্দোলন তীব্রতর হলে সামরিক সরকার বাধ্য হয়ে আটক নেতৃবৃন্দকে নিঃশর্ত মুক্তি দিতে বাধ্য হয়। ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের ন্যায়সঙ্গত দাবিও মেনে নেয়। প্রতিষ্ঠিত হয় ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের ইউনিফর্ম পদবি উপ-সহকারী প্রকৌশলী ও পদোন্নতি কোটা। এ আন্দোলন ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের পেশাকেন্দ্রিক হলেও অবরুদ্ধ গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারই ছিল আমাদের মুখ্য উদ্দেশ্য। আমাদের এ আন্দোলনের পরপরই সাংবাদিক সমাজ তাদের সাংগঠনিক কার্যক্রম শুরু করে এবং পর্যায়ক্রমে ঘরোয়া রাজনীতিও দেশে শুরু হয়। তাই এই আন্দোলন সংগ্রামের সূত্রপাত করতে পেরে আজও আমরা গর্বিত হই। একই দায়বদ্ধতা থেকে ১৯৮৩-৮৪ সালেও সামরিক আইন ভঙ্গ করে আমরা রাজপথে আন্দোলন করেছি। ’৯০ ও ’৯৬ সালে গণতান্ত্রিক আন্দোলনেও আমরা রাজপথে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেছি। যা আজও অব্যাহত রয়েছে।
×