ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

শেয়ারবাজারে দুই হাজার কোটি টাকার উদ্যোক্তা শেয়ার বিক্রি

প্রকাশিত: ০৯:৫১, ১ এপ্রিল ২০১৯

 শেয়ারবাজারে দুই হাজার কোটি টাকার উদ্যোক্তা শেয়ার বিক্রি

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ শেয়ারবাজারে দরপতনের মধ্যেও পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির উদ্যোক্তা ও স্পন্সরদের শেয়ার বিক্রির হিড়িক পড়েছে। গত তিন মাসে ১২টি কোম্পানির উদ্যোক্তা, স্পন্সর ও পরিচালকরা শেয়ার বিক্রি করে পুঁজিবাজার থেকে কমপক্ষে দুই হাজার কোটি টাকা তুলে নিয়েছেন। কোম্পানিগুলোর মধ্যে রয়েছ- মুন্নু সিরামিক, মুন্নু স্টাফলার, হাক্কানী পাল্প, ইউনাইটেড ইন্স্যুরেন্স, নুরানী ডায়িং, ড্রাগন সোয়েটার, ডরিন পাওয়ার, স্টাইল ক্রাফট, আর্গন ডেনিম, সিভিও প্যাট্রোকেমিক্যাল ও বিডি অটোকারস লিমিটেড। ডিএসইর তথ্যানুযায়ী, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বেড়েছিল। শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠানের কারণে শেয়ার কেনার চাপ থাকায় সূচক এবং লেনদেনও বৃদ্ধি পায়। জানুয়ারি মাস জুড়ে কেনার চাপ থাকায় কোম্পানির শেয়ারের দামে বড় উল্লম্ফন ঘটে। ফেব্রুয়ারিতে কিছুটা কমলেও উর্ধমুখী ধারবাহিকতা বজায় থাকে। কিন্তু মার্চে পুঁজিবাজারে মন্দাবস্থার সৃষ্টি হয়। এ অবস্থায় শেয়ার বিক্রি করেছেন উদ্যোক্তারা। বাজারে শেয়ারের জোগান বাড়লেও চাহিদা না থাকায় কমেছে শেয়ারের দাম। সর্বোপরি শেয়ার কেনার পরিমাণ কমায় বাজারে নিম্নমুখী অবস্থার সৃষ্টি হয়। অন্যদিকে নতুন কোম্পানি শেয়ারবাজারে আসা এবং তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর লক ফ্রির কারণে শেয়ার বিক্রির চাপ বাড়ে। কিন্তু সেই অনুযায়ী ক্রেতা ছিল না। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, মুদ্রানীতিতে বেসরকারী ঋণের প্রবৃদ্ধি কমানো, ব্যাংকের ঋণ আমানত সমন্বয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কড়াকড়ি, খেলাপী ঋণের বিপরীতে প্রভিশন সংরক্ষণ ও সঞ্চয়পত্রে সুদের হার বৃদ্ধি এবং ব্যাংক খাতের কোম্পানির লভ্যাংশ ঘোষণা না করায় পুঁজিবাজারে ঢিমেতাল অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এমনি অবস্থায় প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা বাজার পর্যবেক্ষণের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়। পুঁজিবাজারের অব্যাহত মন্দাবস্থা দেখা দেয়ায় ডিএসই কর্তৃৃপক্ষসহ পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা তালিকাভুক্ত কোম্পানির উদ্যোক্তা পরিচালকদের অবাধে শেয়ার বিক্রির বিপক্ষে শক্ত অবস্থান নেয়। অবস্থা বেগতিক দেখে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনও (বিএসইসি) নড়েচড়ে বসে। ডিএসইর হিসাব অনুযায়ী, শেয়ার বিক্রিতে এগিয়ে রয়েছে নুরানী ডায়িং লিমিটেড। গত ১১ মার্চ এই কোম্পানির কর্পোরেট ডিরেক্টর দাউপুর রাইস মিলস ২৮ লাখ ৭৩ হাজার, স্পন্সর ডিরেক্টর রেহানা আলম ১৬ লাখ ৫৭ হাজার ৫০০ ও নুরুল আলম ১৮ লাখ ৮৭ হাজার ৩৪০ শেয়ার বিক্রি করেছেন। এছাড়া স্পন্সর ডিরেক্টর এস কে নুর মুহাম্মদ আজগর পাঁচ লাখ ১০ হাজার ৫১০টি শেয়ার বিক্রির ঘোষণা দিয়েছেন। এদিকে মুন্নু সিরামিকের কর্পোরেট উদ্যোক্তা মুন্নু ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন গত ১১ মার্চ ২৮ লাখ শেয়ার বিক্রি করার ঘোষণা দিয়েছেন। কোম্পানিটির কর্পোরেট উদ্যোক্তা যদিও ব্লক মার্কেটে শেয়ার বিক্রির কৌশল অবলম্বন করেছেন। এর আগেও এ উদ্যোক্তা কয়েক দফায় ১৫ লাখের বেশি শেয়ার বিক্রি করেছেন। এর মধ্যে বেশিরভাগই ছিল ব্লক মার্কেটে। বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ব্লক মার্কেটে শেয়ার বিক্রি করার ঘোষণা দিয়ে কোম্পানিটি বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে নতুন প্রতারণায় নেমেছেন। কারণ ব্লক মার্কেটের শেয়ার অন্য হাত ঘুরে পাবলিক মার্কেটেই ফিরে আসে। ডিএসই ব্রোকার্স এ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি মোস্তাক আহমেদ এ বিষয়ে বলেন, বাজারে আস্থাহীনতা ও তারল্য সঙ্কট রয়েছে। নানা কৌশল অবলম্বন করে স্পন্সর ও পরিচালকরা যেন শেয়ার বিক্রির প্রতিযোগিতায় নেমেছেন। তিনি বলেন, উদ্যোক্তারা শেয়ার বিক্রি করে মূলধন তুলছেন আর বাজারে শেয়ারের জোগান বাড়লেও চাহিদা কমে যাচ্ছে এবং বাজার নিম্নমুখী প্রবণতায় ধাবিত হচ্ছে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের এক পরিচালক নাম না প্রকাশ করার শর্তে বলেন, অনেক কোম্পানির শেয়ারে লক ইন ফ্রি হচ্ছে। এতে বাজারে শেয়ারের জোগান বাড়ছে কিন্তু চাহিদা বাড়ছে না। সম্প্রতি পর্ষদ সভায়ও এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। সব মিলিয়ে পুঁজিবাজার কিছুটা নাজুক অবস্থার মধ্যে পড়েছে। উত্তরণে চেষ্টা চলছে বলেও জানান তিনি।
×