ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

ওয়াসার ভূ-উপরিস্থ পানি ব্যবহার বৃদ্ধি প্রকল্প

পদ্মা থেকে পানি আনার কাজ শেষ হতে চললেও মেঘনা প্রকল্প এগোচ্ছে না

প্রকাশিত: ০৯:৩৬, ১ এপ্রিল ২০১৯

 পদ্মা থেকে পানি আনার কাজ শেষ হতে চললেও মেঘনা প্রকল্প এগোচ্ছে না

ফিরোজ মান্না ॥ পদ্মা নদী থেকে ঢাকা শহরে পানি সরবরাহের কাজ প্রায় শেষ। তবে একই সময়ে হাতে নেয়া মেঘনা নদী থেকে ঢাকা শহরে পানি আনার জন্য ‘গন্ধর্বপুর পানি শোধনাগার প্রকল্পের’ কাজের কোন অগ্রগতি নেই। এই প্রকল্পের কাজের কনসালটেন্সি রিপোর্ট এখন পর্যন্ত ওয়াসায় জমাই হয়নি। প্রায় ৬ বছর আগে হাতে নেয়া প্রকল্পটি নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে। কেন গন্ধর্বপুর প্রকল্পটির কাজের কোন গতি নেই। তবে ওয়াসা বলছে, পদ্মা-মেঘনা নদী ও আশুলিয়ার তেঁতুলঝড়া-ভাকুর্তা থেকে পানির সরবরাহ পুরো দমে শুরু হলে ভূ-উপরিস্থ পানির ব্যবহার বেড়ে যাবে। পদ্মা নদী থেকে প্রতিদিন ৪৫ কোটি লিটার ও মেঘনা থেকে ৫০ কোটি লিটার পানি সরবরাহ পাওয়া যাবে। ইতোমধ্যে আশুলিয়া তেঁতুলঝড়া-ভাকুর্তা প্রকল্প থেকে ১৫ কোটি লিটার পানি ঢাকা শহরের মিরপুরে সরবরাহ করা হচ্ছে। ওয়াসার এমডি তাকসিম এ খান বলেন, বর্তমানে ঢাকা ওয়াসার মোট উৎপাদিত পানির শতকরা ২২ ভাগ ভূ-উপরিস্থ উৎস থেকে সংগ্রহ করা হচ্ছে। বাকি ৭৮ ভাগ পানি ভূ-গর্ভস্থ উৎস তথা গভীর নলকূপ এর মাধ্যমে আসছে। ২০২১ সাল নাগাদ ঢাকা শহরে সরবরাহকৃত পানির ৭০ ভাগ আসবে ভূ-উপরিস্থ পানির উৎস থেকে। অবশিষ্ট ৩০ ভাগ ভূ-গর্ভস্থ তথা গভীর নলকূপ থেকে আসবে। বর্তমানে ঢাকা ওয়াসার দৈনিক পানি উত্তোলন-উৎপাদন সক্ষমতা প্রায় ২৫৫ কোটি লিটার। আর দৈনিক গড়ে ২৪৫-২৫২ কোটি লিটার পানির চাহিদার পুরোটাই ঢাকা ওয়াসা সরবরাহ করছে। এর মধ্যে নতুন সংযোজন তেঁতুলঝরা-ভাকুর্তা প্রকল্প। এখান থেকে বর্তমানে পরীক্ষামূলকভাবে দৈনিক ১৫ কোটি লিটার পানি রাজধানীতে সরবরাহ করা হচ্ছে। এই পানি মিরপুর এলাকায় সরবরাহ করা হচ্ছে। ঢাকার দ্রুত সম্প্রসারণ ও লোকসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে পানির চাহিদা ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। পানির চাহিদা পূরণে ‘ঘুরে দাঁড়াও ঢাকা ওয়াসা কর্মসূচী’র আওতায় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে পরিবেশবান্ধব, টেকসই ও গণমুখী পানি ব্যবস্থাপনার লক্ষ্যে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক প্রকল্প গ্রহণ করেছে ঢাকা ওয়াসা। ভূ-গর্ভস্থ পানির ওপর নির্ভরশীলতা থেকে নগরবাসী মুক্তি দেয়ার জন্য ঢাকা ওয়াসা বেশ কয়েকটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। মেঘনা নদী থেকে পানি ঢাকায় আনার বিষয়ে হাতে নেয়া প্রকল্পের কাজে একটু গতি কম হলেও আমরা আশা করছি ২০২১ সালের মধ্যে এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন সম্ভব হবে। কিছু টেকনিক্যাল অসুবিধার কারণে প্রকল্পটির কাজ বাস্তবায়ন করতে দেরি হচ্ছে। তবে পদ্মা নদী থেকে পানি এনে দৈনিক ৪৫ কোটি লিটার পানি সরবরাহের লক্ষ্যে ‘পদ্মা জশলদিয়া পানি শোধনাগার নির্মাণ প্রকল্প ফেজ-১, চীন সরকারের আর্থিক সহায়তায় বাস্তবায়িত হচ্ছে। সায়েদাবাদ পানি শোধনাগার নির্মাণ প্রকল্প, ফেজ-৩ প্রকল্প এর প্রস্তুতিমূলক কাজ চলছে। এই প্রকল্প থেকে দৈনিক ৪৫ কোটি লিটার পানি শোধন করে নগরীতে সরবরাহ করা হবে। আগামী ২/৩ মাসের মধ্যে প্রকল্পটি চালু হবে। মেঘনা নদী থেকে পানি এনে শোধনের জন্য এডিবি, এএফডি, ইআইবি এবং কেএফডব্লিঊ এর সহায়তায় ‘গন্ধর্বপুর পানি শোধনাগার প্রকল্প’ গ্রহণ করা হয়েছে, যার মাধ্যমে নগরীতে দৈনিক ৫০ কোটি লিটার পানি সরবরাহ করা হবে। আশা করা যাচ্ছে ‘ভিশন ২০২১’ কে সামনে রেখে আগামী ২০২১ সাল নাগাদ শতকরা ৭০ ভাগ পানি ভূ-উপরিস্থ উৎস থেকে আর মাত্র ৩০ ভাগ পানি ভূ-গর্ভস্থ উৎস থেকে সংগ্রহ করে পরিবেশবান্ধব ও টেকসই পানি ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা হবে। ঢাকা ওয়াসাকে পরিবেশবান্ধব করার ঘোষণা দেয়া হলেও ঢাকার চারপাশের নদীগুলো চরমভাবে দূষিত। এই দূষণ রোধ না হলে ওয়াসার পানিও পরিবেশ বান্ধব হবে না বলে পানি বিশেষজ্ঞরা বলেছেন। তারা বলেছেন, বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষ্যা, বালু ও তুরাগ নদীর অবস্থা খুবই খারাপ। দূষণ দখলে নদীগুলোর প্রাণ যায় যায়। এই নদীগুলোর সঙ্গে রাজধানী ঢাকার পরিবেশ, প্রতিবেশ এবং জনস্বাস্থ্যের সম্পর্ক রয়েছে।
×