ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

গ্রেনেড হামলা, ১০ ট্রাক অস্ত্র আটক ও নারায়ণগঞ্জের সাত খুন

আলোচিত তিন মামলা উচ্চ আদালতে আপীল শুনানির অপেক্ষায়

প্রকাশিত: ০৯:৩৬, ১ এপ্রিল ২০১৯

আলোচিত তিন মামলা উচ্চ আদালতে আপীল শুনানির অপেক্ষায়

বিকাশ দত্ত ॥ বহুল আলোচিত একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা, ১০ ট্রাক অস্ত্র আটক ও নারায়ণগঞ্জের সাত খুনের চাঞ্চল্যকর তিনটি মামলা উচ্চ আদালতে আপীল শুনানির অপেক্ষায়। সাতখুন মামলার পেপার বুক তৈরি শেষ হয়েছে। অন্যদুটি মামলার পেপারবুক তৈরিও শেষ পর্যায়ে। একুশে আগস্ট ও ১০ ট্রাক অস্ত্র আটক মামলা দুটি হাইকোর্টে আপীল শুনানি অনুষ্ঠিত হবে। অন্যদিকে নারায়ণগঞ্জ সাত খুনের মামলাটি আপীল বিভাগে শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে। রাষ্ট্রপক্ষ আশা করছে শীঘ্রই এ মামলা তিনটি আপীল শুনানি হবে। দ্রুত কার্যতালিকাতে আনার চেষ্টা করা হবে। অতিরিক্ত এ্যাটর্নি জেনারেল মুরাদ রেজা জনকণ্ঠকে বলেন, এ তিনটি মামলা চাঞ্চল্যকর। আমি আশা করছি যত সম্ভব দ্রুত এগুলোর আপীল শুনানির ব্যবস্থা নেয়া হবে। সমস্ত প্রক্রিয়া শেষ করে মামলাগুলো কার্যতালিকায় আনার ব্যবস্থা নেয়া হবে। এদিকে সুপ্রীমকোর্টের স্পেশাল অফিসার ব্যারিস্টার সাইফুর রহমান জনকণ্ঠকে বলেছেন, মামলা তিনটি গুরুত্বপূর্ণ । এর মধ্যে নারায়ণগঞ্জ সাতখুন মামলার পেপার বুক তৈরি শেষ হয়েছে। অন্যদুটি মামলার পেপারবুক তৈরিও শেষ পর্যায়ে। পেপার বুক তৈরি শেষ হলেই আপীল শুনানির পর্যায়ে যাবে। ২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় বিচারিক আদালত সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর ও সাবেক উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুসহ ১৯ জনের মৃত্যুদন্ডের আদেশ প্রদান করে। একই সঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরীসহ ১৯ জনকে যাবজ্জীবন কারাদন্ডের আদেশ দেয়া হয়। অন্যদিকে ২০১৪ সালের ৩০ জানুয়ারি ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলায় জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমির ও সাবেক শিল্পমন্ত্রী মতিউর রহমান নিজামী (মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় মৃত্যুদন্ড কার্যকর), বাবরসহ ১৪ জনকে মৃত্যুদন্ড প্রদান করা হয়। অন্যদিকে ২০১৭ সালের ২২ আগস্ট হাইকোর্ট নারায়ণগঞ্জের আলোচিত সাত খুন মামলায় সাবেক কাউন্সিলর নুর হোসেন ও সাবেক তিন র‌্যাব কর্মকর্তা তারেক সাঈদ-আরিফ-মাসুদ রানাসহ ১৫ জনের ফাঁসির রায় বহাল রাখে হাইকোর্ট। এ সমস্ত মামলায় আসামিগণ ন্যায়বিচারের আশায় আপীল করেন। একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলা ॥ রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলার দুই মামলায় সাজাপ্রাপ্ত ৪৪ আসামির ডেথ রেফারেন্স ও জেল আপীল শুনানির জন্য চলতি বছরের ১৩ জানুয়ারি গ্রহণ করে হাইকোর্ট। বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে এসব আপীল উপস্থাপন করা হলে তা শুনানির জন্য গ্রহণের আদেশ দেয়া হয়। আপীলকারীদের মধ্যে মৃত্যুদন্ডাদেশপ্রাপ্ত এবং বিভিন্ন মেয়াদে কারাদন্ডপ্রাপ্ত আসামি রয়েছেন। এর আগে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার ঘটনায় দায়ের হওয়া দুই মামলার রায়সহ প্রায় ৩৭ হাজার ৩৮৫ পাতার নথি ২০১৮ সালের ২৭ নবেম্বর হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় এসে পৌঁছে। ঢাকার এক নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল থেকে এ নথি হাইকোর্টে সংশ্লিষ্ট শাখায় পাঠানো হয়। নথির মধ্যে এই হত্যা মামলার রায় ৩৬৯ পাতা এবং বিস্ফোরক আইনের মামলার রায় ৩৫৬ পাতা। আর অন্যান্য নথির মধ্যে রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামিপক্ষের সাক্ষীর জবানবন্দী ও জেরা, তদন্তকারী কর্মকর্তার কাছে দেয়া সাক্ষীদের জবানবন্দী, যুক্তিতর্ক, আত্মপক্ষ সমর্থনের বক্তব্য, আদালতে দেয়া আসামিদের স্বীকারোক্তি, ট্রাইব্যুনালে দেয়া আসামি, রাষ্ট্রপক্ষের হাজিরা ও দরখাস্ত। ২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর ঢাকার এক নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক শাহেদ নূরউদ্দিন মামলা দু’টিতে রায় ঘোষণা করেন। সে হিসেবে রায় ঘোষণার ৪৮ দিন পর নথি হাইকোর্টে পাঠানো হলো। ১০ অক্টোরব একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলার মামলায় সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর ও সাবেক উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুসহ ১৯ জনের মৃত্যুদন্ডের আদেশ প্রদান করে। একই সঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরীসহ ১৯ জনকে যাবজ্জীবন কারাদন্ডের আদেশ দেয়া হয়েছে। অবশিষ্ট ১১ আসামির বিরুদ্ধে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদন্ড হয়। দশ ট্রাক অস্ত্র মামলা ॥ ১০ ট্রাক অস্ত্র আটকের মামলাটি বর্তমানে হাইকের্টে শুনানির জন্য রয়েছে। ৮ জানুয়ারি বহুল আলোচিত ১০ ট্রাক অস্ত্র আটকের ঘটনায় দায়ের করা মামলায় মৃত্যুদন্ড পাওয়া আসামিদের ডেথ রেফারেন্স ও আপীল শুনানিতে একটি বেঞ্চ অপারগতা প্রকাশ করে। এর পর প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন শুনানির জন্য নতুন বেঞ্চ গঠন করে দেন। ৮ জানুয়ারি বিচারপতি মোঃ কামরুল হোসেন মোল্লা এবং বিচারপতি ভবানী প্রসাদ সিংহের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ অপারগতা প্রকাশ করেন। নারায়ণগঞ্জে সাত খুন মামলা ॥ নারায়ণগঞ্জ সাত খুন মামলাটি বর্তমানে আপীল বিভাগে শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে। বিচারিক আদালত এবং হাইকোর্ট এ মামলাটির বিচার কাজ শেষ হয়েছে। ২০১৬ বছরের ১৬ জানুয়ারি নিম্ন আদালতের দেয়া রায়ে ২৬ জনকে মৃত্যৃদন্ড ও ৯ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদন্ড দেয়া হয়। এর পর ২৮ আসামি হাইকোর্টে আপীল করেন। ২০১৭ সালের ২২ আগস্ট সাত খুন মামলায় ১৫ জনের মৃত্যুদন্ড বহাল রেখে রায় দেন। হাইকোর্টের রায়ে বিচারিক আদালতে মৃত্যুদন্ডাদেশ পাওয়া ১১ আসামির দন্ড কমিয়ে যাবজ্জীবন করাদন্ড প্রদান করা হয়। গত বছরের ১৯ নবেম্বর হাইকোর্ট পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করে। হাইকোর্টের রায়ের পর আসামিগণ আপীল বিভাগে আপীল করেন। বর্তমানে আপীল বিভাগের শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে।
×