ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

যাত্রী হয়রানি

কুড়িগ্রামে খেয়াঘাটে বাড়তি টোল আদায়

প্রকাশিত: ০৯:১১, ১ এপ্রিল ২০১৯

 কুড়িগ্রামে খেয়াঘাটে  বাড়তি টোল  আদায়

স্টাফ রিপোর্টার, কুড়িগ্রাম ॥ কুড়িগ্রামের সব ক’টি খেয়াঘাটে যাত্রীদের কাছ থেকে ইচ্ছামতো ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। জেলা পরিষদ থেকে প্রতিবছর ইজারা দেয়া হলেও সুনির্দিষ্ট করে ভাড়া নির্ধারণ করে দেয়া হয় না। এ সুযোগে ইজাদাররা যাত্রীদের কাছে অযৌক্তিক হারে ভাড়া আদায় করে। এতে প্রায় যাত্রীর সঙ্গে খেয়াঘাটের লোকদের বাগবিতন্ডা হয় এমনকি মারামারির মতো ঘটনাও ঘটে। ইজারার বিধান অনুযায়ী ঘাটে ভাড়ার তালিকা ঝোলানোর কথা থাকলেও কোন ঘাটেই তা মানা হচ্ছে না। সরেজমিনে দেখা গেছে অধিকাংশ নদীতে ঘাট থেকে ঘাটের দূরত্ব গড়ে দেড় থেকে দু’কিলোমিটার। আর ব্রহ্মপুত্র নদের ঘাটের দূরত্ব গড়ে ছয় কিলোমিটার। যাত্রী ও হালকা মালপত্র পরিবহনে এ সব ঘাটে ব্যবহার করা হয় ইঞ্জিন চালিত নৌকা। সম্প্রতি কুড়িগ্রামের চিলমারী থেকে রৌমারী যাওয়ার জন্য ঘাটে গিয়ে দেখা যায় দেড় শতাধিক নৌকা অপেক্ষা করছে। মোটরসাইকেল নিয়ে নৌকায় উঠতে প্রতিযাত্রীকে গুনতে হয় ৫০ টাকা। ঘাটের লেবাররা মোটরসাইকেলটি নৌকায় তুলে দিয়ে এ টাকা দাবি করে। যদিও এ কাজটি ইজারাদারের নিয়োগকৃত লোকদের বিনা পয়সায় করার কথা। যাত্রী বোঝাই করে ব্রহ্মপুত্র নদের মাঝামাঝি এসে ভাড়া আদায় শুরু করেন মাঝি। প্রতি যাত্রী ৭০ টাকা। আবার সঙ্গে মোটরসাইকেল থাকলে আরও ৭০ টাকা আদায় করে। প্রায় দেড় ঘণ্টার যাত্রা শেষে যখন নৌকাটি রৌমারী ঘাটে পৌঁছে তখন ওই ঘাটের কুলিরা আবারও ৫০ টাকা মোটরসাইকেলের জন্য আদায় করে। সব মিলে চিলমারী ঘাট থেকে রৌমারী ঘাট পর্যন্ত যাতায়াতে খরচ হয় ২৪০ টাকা। বিভিন্ন ভাবে যাত্রীদের কাছে টাকা আদায় প্রসঙ্গে মাঝি মতিন ও আম্বার জানান, ঘাটে দেড় শতাধিক নৌকা থাকে। কিন্তু দৈনিক চলে মাত্র চারটি নৌকা। সিরিয়াল পেতে ১০ থেকে ১২ দিন লেগে যায়। একটা ট্রিপ দিয়ে এতদিন অপেক্ষা করতে হয়। সেই সঙ্গে ডিজেলের দাম বেশি। ইজারাদারকেও আগের চেয়ে বেশি টাকা দিতে হয়। অনুসন্ধানে জানা গেছে ব্রহ্মপুত্র চিলমারী ঘাট রৌমারী, রাজীবপুর, কোদালকাটি, বনগ্রাম ও কর্তিমারী ঘাট নিয়ে একটি লট। জেলা পরিষদ থেকে গত বছর এ লটটির ডাক হয়েছে ৫৬ লাখ টাকা। চিলমারীর জনৈক আজিজ ব্যাপারীর নামে লটটি ইজারা নেয়া হলেও তার অংশীদারিত্ব মূলত ১০ শতাংশ। বাকিরা প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতা ও ব্যবসায়ী। জানা যায়, লট ইজারা নেয়ার পর আলাদাভাবে ভাড়া দেয়া হয়েছে। রৌমারী ঘাট ২২ লাখ, রাজীবপুর ঘাট ২৮ লাখ, বনগ্রাম ঘাট ৬ লাখ কর্তিমারী ১ লাখ টাকায় ভাড়া দেয়া হয়েছে। শুধু চিলমারী ঘাটটি ইজারাদারের কাছে আছে। এ ছয়টি ঘাট থেকে প্রতিদিন চারটি করে প্রতি নৌকায় ১শ থেকে দেড়শ যাত্রী থাকে। মাঝিরা জানান কুলিদের চাঁদা বাদে প্রতি ট্রিপে তাদের আয় হয় ৭ হাজার থেকে সাড়ে সাত হাজার টাকা। এর মধ্যে ইজারাদারদেরও সিরিয়াল পেতে দিতে হয় ২শ টাকা, যাত্রীপ্রতি ৫ টাকা ও মোটরসাইকেল প্রতি ১০টাকা। কুড়িগ্রামের নয়টি উপজেলার মধ্যে রৌমারী ও রাজীবপুর উপজেলা ব্রহ্মপুত্র নদ দ্বারা বিচ্ছিন্ন। ফলে ওই দুই উপজেলার মানুষ জেলা শহরে আসতে নদী পথ ছাড়া কোন উপায় নেই। বেশি ভড়া আদায় প্রসঙ্গে চিলমারী ও রৌমারী ঘাটের টোল আদায়কারী মোসলেম, টিপু ও রফিকুল এ ব্যাপারে কিছু জানে না বলে জানান। কুড়িগ্রাম জেলা পরিষদ সূত্রে জানা গেছে, জেলার ওপর দিয়ে বয়ে গেছে ১৬টি নদ-নদী। এখানে ছোট বড় খেয়া-ঘাট আছে ৫৩টি। এগুলো জেলা পরিষদের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হয়। প্রতিবছর তারা ইজারা দেয়। তবে দূরত্ব অনুযায়ী ভাড়া নির্ধারণ করে দেয়া হয় না। ব্রহ্মপুত্র নদের ছয়টি বড় ঘাটের মতো ছোট ঘাটগুলোতেও ইচ্ছে মতো ভাড়া আদায় করা হয়। জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বেগম আলেয়া খাতুন জানান আমরা প্রতিটি ঘাটে ভাড়ার চার্ট করে দিয়েছি। আমরা যখন যাই তখন তো চার্ট টাঙ্গানো থাকে। তবে তিনি বিষয়টি দেখবেন বলে জানান।
×