ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বহুতল ভবনে অগ্নিনিরাপত্তা

প্রকাশিত: ০৮:৫৪, ১ এপ্রিল ২০১৯

বহুতল ভবনে অগ্নিনিরাপত্তা

বনানী ট্র্যাজেডির পর সর্বমহলে আলোচিত হয়ে চলেছে রাজধানীর বহুতল ভবনগুলোর অগ্নিনিরাপত্তা প্রসঙ্গটি। রাজউক ও ফায়ার সার্ভিস সূত্রে এ সংক্রান্ত যেসব তথ্য মিলেছে তা একদিকে যেমন ভীতি জাগায়, অন্যদিকে তেমনি নাগরিকদের বিক্ষুব্ধ করে তোলে। ঢাকা মহানগরীর অন্তত সাড়ে ১১ হাজার বহুতল ভবন অগ্নিকান্ডের ঝুঁকিতে রয়েছে। এসব ভবনে অগ্নিনিরাপত্তা সংক্রান্ত ফায়ার সার্ভিসের কোন ছাড়পত্র বা অগ্নিনিরাপত্তা পরিকল্পনার (ফায়ার সেফটি প্ল্যান) অনুমোদন নেই। তার মানে হলো ইমারত বিধিমালা অনুযায়ী নির্মিত হয়নি এসব ভবন। প্রসঙ্গত, অগ্নিকাণ্ডের ঝুঁকি কমাতে ২০০৩ সালে অগ্নিপ্রতিরোধ ও নির্বাপণ নামে একটি আইন করে সরকার। এই আইন অনুযায়ী ঢাকা মহানগরে বহুতল ভবন নির্মাণে ফায়ার সার্ভিস থেকে ছাড়পত্র নিতে হয়। মূলত ভবনের সামনে সড়কের প্রশস্ততা, নকশা অনুসারে ভবনের অগ্নিনিরাপত্তা পরিকল্পনা, ভবন থেকে বের হওয়ার বিকল্প পথ, কাছাকাছি পানির সংস্থান, গাড়ি ঢুকতে পারবে কি না- এসব বিষয় পর্যবেক্ষণ করে ছাড়পত্রটি দেয় ফায়ার সার্ভিস। তারপর এই ছাড়পত্র দেখিয়ে রাজউক থেকে ভবনের নকশার অনুমোদন নিতে হয়। এরপর ভবনের নির্মাণ কাজ শুরু করতে হয়। নির্মাণ কাজ আংশিক বা পুরোপুরি শেষ হওয়ার পর ভবনটি ব্যবহারের জন্য আবার রাজউকের কাছ থেকে বসবাস বা ব্যবহারের সনদ নিতে হয়। এই সনদ দেয়ার সময় আগে জমা দেয়া নকশা অনুযায়ী ভবনটি নির্মিত হয়েছে কি না তা দেখে রাজউক। কিন্তু প্রশ্ন হলো বাস্তবে এই প্রক্রিয়া যথাযথভাবে কি সম্পন্ন করে রাজউক? সেটা যে করে না তার প্রমাণ বনানীর এফ আর টাওয়ার অগ্নিকান্ডে ছাব্বিশটি তাজা প্রাণের ঝরে যাওয়া। ফায়ার সার্ভিসের আইন অনুযায়ী ছয়তলার ওপর যে কোন ভবনই বহুতল। আর রাজউকের আইন অনুযায়ী ১০ তলা থেকে বহুতল ভবন। দুই আইনের এমন সাংঘর্ষিক অবস্থার কারণে ১০ তলার নিচের বহুতল ভবনের নকশা অনুমোদনের ক্ষেত্রে ফায়ার সার্ভিসের ছাড়পত্র চায় না রাজউক। ফলে এই ভবনগুলো অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থা ছাড়াই গড়ে উঠছে। দুই আইনের এই সাংঘর্ষিক অবস্থা কি বহাল থাকবে? ২০০৮ থেকে ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ঢাকা মহানগরে প্রায় ৪০ হাজার ভবন তৈরি হয়েছে। অথচ দুঃখজনক হলেও সত্য বসবাস বা ব্যবহার সনদ নিয়েছে মাত্র ১৬২টি ভবন। আমরা বারবার বলেছি, কোন কারণে আগুন লাগতে পারে- এমনটা ভেবে নিয়েই আধুনিক ভবনে অগ্নিপ্রতিরোধ বা অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা গ্রহণ করাটাই নিয়ম। আগুন লেগে গেলে সে আগুন নেভানোর সক্ষমতা থাকা অবশ্য কর্তব্য। বলাবাহুল্য, যে কোন প্রতিষ্ঠানের জন্য পূর্ব প্রস্তুতির কোন বিকল্প নেই। এটাও স্মরণে রাখা চাই, বহুতল ভবনের প্রতিটি ফ্লোরে আগুন নেভাবার পর্যাপ্ত উপকরণ ও সরঞ্জাম হাতের কাছে থাকলে প্রাথমিক ক্ষয়ক্ষতি অনেকটাই হ্রাস করা সম্ভব। তাছাড়া যে কোন বহুতল ভবনেরই জরুরী নির্গমন পথ (ফায়ার এক্সিট ডোর) থাকা বাঞ্ছনীয়। শুক্রবার গণভবনে এক সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বহুতল ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে ‘বিল্ডিং কোড’ যথাযথভাবে অনুসরণের তাগিদ দেন। তিনি স্পষ্ট ভাষায় বলেন, অগ্নিকাণ্ডসহ ভবনের সার্বিক নিরাপত্তা ভবন মালিক ও ব্যবহারকারীকে নিশ্চিত করতে হবে। তা ছাড়া সরকারী সংস্থাগুলোর কঠোর নজরদারি বাড়ানোসহ জনসচেতনতা সৃষ্টির ওপরও বিশেষ গুরুত্ব দেন প্রধানমন্ত্রী। বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রতিটি বহুতল ভবনের অনুমোদিত মূল নকশার সঙ্গে বর্তমানে যেভাবে আছে তার মিল-অমিল দেখা এবং ভাড়াটে বদল হওয়ার ‘অকুপেন্সি সনদ’ পরীক্ষা করা অত্যন্ত জরুরী। বহুতল ভবনে আগুন লাগলেও মানুষ যেন প্রাণে বাঁচতে পারে সেজন্য সব ধরনের ব্যবস্থা নিতে হবে। এক্ষেত্রে কোন ধরনের গাফিলতি কাম্য নয়। সময় এসেছে সংশোধনের। ঢাকা তথা সারাদেশে যাতে একটিও ভবন অগ্নিনিরাপত্তা ঝুঁকিতে না থাকে সেজন্য এখনই কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। কোনক্রমেই বহুতল ভবন ব্যবহারকারী নাগরিকদের জিম্মি করা চলবে না।
×