ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

জাতিসংঘে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী

কার্বন উদগীরণকারী দেশগুলোকে চুক্তি বাস্তবায়নে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে

প্রকাশিত: ১১:২৭, ৩১ মার্চ ২০১৯

কার্বন উদগীরণকারী দেশগুলোকে চুক্তি বাস্তবায়নে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে

বিডিনিউজ ॥ জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ আয়োজিত ‘সবার জন্য জলবায়ু ও টেকসই উন্নয়ন’ শিরোনামে জাতিসংঘের সভায় অংশ নিয়েছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মোঃ শাহরিয়ার আলম। শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে অনুষ্ঠিত এ সভায় তিনি জলবায়ু বিষয়ক প্যারিস চুক্তি জাতিসংঘের সব সদস্য দেশকে মেনে চলার আহ্বান জানান। প্রতিমন্ত্রী বলেন, সবচেয়ে বেশি কার্বন উদগীরণকারী দেশগুলোকে অবশ্যই দ্রুততার সঙ্গে গ্রিন হাউস গ্যাস উদগীরণ বন্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে এবং প্যারিস চুক্তি অনুযায়ী উন্নত দেশগুলোকে ২০২০ সালের মধ্যে বার্ষিক ১০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার তহবিল সরবরাহের প্রতিশ্রুতি এবং ২০১৯ এর মধ্যে গ্রিন ক্লাইমেট ফান্ড অবশ্যই পুনর্ভরণের ব্যবস্থা নিতে হবে। আর্থিক তহবিল সরবরাহ ও প্রযুক্তি হস্তান্তরের মাধ্যমে নাজুক উন্নয়নশীল দেশগুলোর অভিযোজন প্রচেষ্টায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে অবশ্যই পাশে দাঁড়াতে হবে যাতে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলো সক্ষমতা বিনির্মাণ করতে পারে। জলবায়ুর পরিবর্তন মোকাবেলা করে ঘুরে দাঁড়ানো এবং টেকসই উন্নয়ন বাস্তবায়নের সক্ষমতা বিনির্মাণে শেখ হাসিনা সরকারের নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ ‘কার্বন বাজেটিং’, ‘কার্বনবিহীন উৎপাদন পথ’ এবং ‘নিম্ন-কার্বন শিল্পায়ন’ এর মতো বিশেষ পরিকল্পনাসহ জলবায়ু ও দুর্যোগসৃষ্ট বহুমাত্রিক ঝুঁকির কথা বিবেচনায় রেখে সম্প্রতি যুগান্তকারী ‘ডেল্টা প্ল্যান-২১০০’ গ্রহণ করেছে যা পরবর্তী একশ বছরের টেকসই উন্নয়নে আমাদের পথ দেখাবে। খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আমরা কৃষি খাতকে ‘জলবায়ু পরিবর্তন সহনশীল’ কৃষি খাতে রূপান্তরিত করছি। সারাদেশে বৃক্ষ আচ্ছাদন শতকরা ২২ থেকে ২৪ ভাগে উন্নীত করার পদক্ষেপ হাতে নেয়া হয়েছে। ইউনেস্কোর ঐতিহ্য বিশ্বের সর্ববৃহৎ ম্যানগ্রোভ বনভূমি ‘সুন্দরবন’ এর সংরক্ষণে আমরা ৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের প্রকল্প বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি। বাংলাদেশ সরকারের দুর্যোগ মোকাবেলা প্রস্তুতি ও কর্মসূচী যেমন ‘পূর্ব সতর্কতা ব্যবস্থার উন্নয়ন’, ‘অবাধ তথ্য সরবরাহ’, ‘প্রয়োজনীয় ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ’, স্বেচ্ছাসেবীদের সক্রিয় ও নিবেদিত অংশগ্রহণ ইত্যাদি তুলে ধরে প্রতিমন্ত্রী বলেন, সমন্বিতভাবে এসব কর্মসূচী দুর্যোগে প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতির হার ব্যাপক কমিয়ে আনতে পেরেছে যা সুনির্দিষ্টভাবে আমাদের জাতীয় সক্ষমতাকে বহুগুণে বাড়িয়ে দিয়েছে। এছাড়া এক মিলিয়নেরও ওপরে মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে আশ্রয়দান শুধু আমাদের ভূমি ও অর্থনীতির ওপরই প্রভাব ফেলছে না, এটি আমাদের পরিবেশ ও প্রকৃতিকে মারাত্মক হুমকির মধ্যে ফেলেছে বলে উল্লেখ করেন প্রতিমন্ত্রী। ‘টেকসই উন্নয়ন এ্যাজেন্ডা ২০৩০’ এর অর্থনৈতিক, সামাজিক ও পরিবেশগত বিষয়গুলোর প্রেক্ষাপটে বর্তমান ও ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য বৈশ্বিক জলবায়ু সুরক্ষার লক্ষ্যকে সামনে রেখে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ এ সভার আয়োজন করে। এবছর সেপ্টেম্বরে অনুষ্ঠিতব্য জলবায়ু সম্মেলনের প্রস্তুতির ক্ষেত্রেও এ সভা বিশেষ তাৎপর্য রাখে। একইদিন জাতিসংঘ সদর দফতরে অনুষ্ঠিত জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমের মন্ত্রিপর্যায়ের সভায় অংশগ্রহণ করে এ সেক্টরের সামগ্রিক উন্নয়নে বাংলাদেশের ২৬টি প্রতিশ্রুতির কথা জানান পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মোঃ শাহরিয়ার আলম। প্রতিমন্ত্রী বলেন, শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে দ্রুত সাড়াদান প্রস্তুতি ব্যবস্থার অংশ হিসেবে বাংলাদেশ ২৬টি ক্ষেত্রে অর্থাৎ সেনাবাহিনীর ৯টি, নৌবাহিনীর ৬টি, বিমানবাহিনীর ৩টি এবং পুলিশ বাহিনীর ৮টি ক্ষেত্রে জাতিসংঘকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
×