ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

আজ থেকে রাজউকের অভিযান

প্রকাশিত: ১০:৫৫, ৩১ মার্চ ২০১৯

আজ থেকে রাজউকের অভিযান

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রাজধানীতে অগ্নি নির্বাপণবিহীন ও অপরিকল্পিতভাবে গড়ে তোলা সকল বহুতল ভবনের বিরুদ্ধে আজ থেকে অভিযান শুরু করছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। রবিবার থেকে শুরু হওয়া এ অভিযান একটানা পনেরো দিন পর্যন্ত চলবে বলে রাজউক চেয়ারম্যান আব্দুর রহমান জনকণ্ঠকে নিশ্চিত করেছেন। একইসঙ্গে এসব ভবনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গুরুতর হলে প্রয়োজনে ভবনটি সিলগালা করে দেয়ারও পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে সংস্থাটি। তবে প্রাথমিকভাবে রাজধানীতে ১৯৯৬ সালের ইমারত নির্মাণ বিধিমালা অনুযায়ী যেসব বহুতল ভবন নির্মাণ করা হয়েছে শুধুমাত্র সেসব ভবনের বিরুদ্ধেই অভিযান পরিচালনা করা হবে বলে রাজউক সূত্রে জানা গেছে। পরবর্তীতে এর ২০০৮ সালের ইমারত বিধিমালা অনুযায়ী নির্মিত সকল ভবনের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা হবে। রাজউকের আইন না মেনে গড়ে তোলা সকল বহুতল ভবন খুঁজে বের করে তাদের আইনের আওতায় আনতে এই উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। এছাড়া আইনের ব্যত্যয় করা সকল ভবনের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেবে রাজউক। বৃহস্পতিবার বনানীর এফ আর (ফারুক-রুপায়ন) টাওয়ারে অগ্নিকা-ের পর রাজধানীর সকল বহুতল ভবন কতটা নিরাপদ তা বের করতে রাজউক এ উদ্যোগ গ্রহণ ও বাস্তবায়নের ঘোষণা দিয়েছে বলে রাজউক সূত্রে জানা গেছে। অভিযানে রাজধানীর সব বহুতল ভবনের ফায়ার সেফটি যাচাই বাছাই করে ত্রুটি-বিচ্যুতি চিহ্নিত করা হবে। একইসঙ্গে প্রতিটি ভবনের রাজউকের নিয়মানুযায়ী কোনটার কি সুবিধা নেই তা বের করা হবে। এরপর এসব ভবনের মালিক কে তাও বের করে সকল তথ্য গণমাধ্যমের কাছে তুলে ধরবে সংস্থাটি। বিশেষ করে ভবনগুলোর ফায়ার সেফটির কি অবস্থা সেটি গুরুত্ব সহকারে দেখা হবে। সূত্র জানায়, বনানীর কামাল আতাতুর্ক এভিনিউয়ের ১০ তলার ওপর সকল ভবনে প্রাথমিকভাবে অভিযান পরিচালনা করা হবে। অপরদিকে এসব ভবনের বাইরে পুরো রাজধানীর সকল বহুতল ভবনের কাগজপত্র পরীক্ষা করবে সংস্থাটি। বনানীসহ যেসকল ভবনে অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা নেই সেসসব স্থানে কিভাবে অগ্নি নিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তোলা যায় সে সম্পর্কে বিশেষজ্ঞদের মতামত নিয়ে তার সকল প্রকার ব্যবস্থা নেয়া হবে। রাজউক সূত্র জানায়, ১৫ দিনব্যাপী চলা এই অভিযানে প্রাথমিকভাবে বনানীর এফআর টাওয়ার ও এর আশপাশের বা কামাল আতাতুর্ক এভিনিউয়ের বহুতল ভবনগুলোকেই অধিক গুরুত্ব দেয়া হবে। এসব ভবন কবে অনুমোদন প্রদান করা হয়েছে, যে কর্মকর্তা অনুমোদন দিয়েছেন তা সঠিক ছিল কিনা বা নিয়মের ব্যত্যয় ঘটানো হয়েছে কিনা তা দেখা হবে। এছাড়া ভবন ব্যবহারের অনুমতি সংক্রান্ত আকুপেন্সি সার্টিফিকেট নেয়া হয়েছে কিনা, বহুতল ভবনের জন্য রাজউকের নির্ধারিত নীতিমালা মানা হয়েছে কিনা বা ব্যবহার করা শুরুর পর এসব ভবন রাজউকের দেয়া শর্ত মানছে কিনা তা যাচাই বাছাই করে দেখবে। এছাড়া নির্মাণের সময় থাকা সরকারের ইমারত বিধিমালা অনুযায়ী এসব ভবন তৈরি করা হয়েছিল কিনা এমনকি পরবর্তীতে ভবনের ওপরের বা পাশের অংশের কোন প্রকার বর্ধিত করা হয়েছে কিনা তাও পরীক্ষা করে দেখবে বলে জানা গেছে। যেভাবে চিহ্নিত হয় ঝুঁকিপূর্ণ ভবন ॥ পরিদর্শন ও প্রতিবেদন তৈরির প্রক্রিয়ায় সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, ২৪টি পয়েন্ট ধরে তারা ভবনগুলো পরীক্ষা করেন। এর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট হলো কী ধরনের ভবন, আগুন নেভানোর নিজস্ব ব্যবস্থা কেমন, মূল সিঁড়ির পাশাপাশি জরুরী বিকল্প সিঁড়ি আছে কিনা, থাকলে তা কতটা প্রশস্ত ভবনের বেজমেন্ট কত তলা, সেমি বেজমেন্ট আছে কিনা, ট্যাংকির পানি ধারণক্ষমতা কত, মূল পাম্প জকি, পাম্প অক্সিলারি, পাম্পের কী অবস্থা, লিফট-ফায়ার লিফট, জেনারেটর কক্ষ ও আগুন নিয়ন্ত্রণ কক্ষ আছে কিনা, থাকলে সেগুলোর মধ্যে দূরত্ব কতটুকু, আগুন নেভানোর বহনযোগ্য সরঞ্জাম ও ভবনের গ্যারেজ অংশে স্বয়ংক্রিয়ভাবে আগুন নেভানোর ব্যবস্থা আছে কিনা, দুর্ঘটনা-দুর্যোগের সময় সতর্ক করার জন্য এ্যালার্ম ও বধিরদের সতর্ক করতে বিশেষ আলোর ব্যবস্থা আছে কিনা, ধোঁয়া শনাক্তকরণ যন্ত্র, দুর্যোগের সতর্কবার্তা জানানোর উপযোগী প্যানেল বোর্ড, বিশেষ নিরাপত্তাবেষ্টিত কক্ষ, ঢালু সিঁড়ি এবং কর্মীদের আগুন নেভানোসহ দুর্যোগ মোকাবেলার প্রশিক্ষণ আছে কিনা। অভিযানে এসব বিষয় তদন্ত করে দেখা হবে বলে জানা গেছে।
×