ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

রাজশাহীতে বালুঘাট ॥ হুমকিতে মেগা প্রকল্প

প্রকাশিত: ০৯:২৮, ৩১ মার্চ ২০১৯

রাজশাহীতে বালুঘাট ॥ হুমকিতে মেগা প্রকল্প

স্টাফ রিপোর্টার, রাজশাহী ॥ নগরীর হাড়ুপুর ও নবগঙ্গা এলাকায় সম্প্রতি পানি উন্নয়ন বোর্ড প্রায় ৮০ কোটি টাকা ব্যয়ে নদী তীর সংরক্ষণের কাজ সম্পন্ন করেছে। এর কাছাকাছি এলাকায় তৈরি হচ্ছে কয়েক শ’ কোটি টাকা ব্যয়ের মেগা প্রকল্প রাজশাহী হাইটেক পার্ক। এরই মধ্যে শুরু হয়েছে পদ্মা ড্রেজিয়ের কাজও। কিন্তু একই এলাকায় বালুঘাট ইজারা দেয়ায় এসব বড় প্রকল্প এখন হুমকিতে পড়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা বলছেন, নগরীর হাড়ুপুর ও নবগঙ্গা এলাকায় বালুঘাট ইজারা না দেয়ার জন্য প্রশাসনকে আগেই অনুরোধ করা হয়েছিল। কিন্তু জেলা প্রশাসন সম্প্রতি অন্য পয়েন্টের সঙ্গে এই দুটি পয়েন্টের বালুঘাটও ইজারা দিয়েছে। ফলে পদ্মার তীরবর্তী এলাকায় নির্মাণাধীন মেগা প্রকল্পগুলো নদী ভাঙ্গনের কবলে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। জানা গেছে, গত কয়েক বছরের মতো গত ১৮ মার্চ জেলা বালুমহাল ব্যবস্থাপনা কমিটির উদ্যোগে রাজশাহীতে পদ্মার বেশকিছু বালুঘাট ইজারা দেয়া হয়েছে। নগরীর পশ্চিমের হাড়ুপুর ও নবগঙ্গা বালুমহাল এলাকা দুটি ইজারা দিয়ে জেলা প্রশাসন ৫ কোটি ২ লাখ টাকা আয় করেছে। কিন্তু এই দুটি বালুমহাল পদ্মা নদীর তীরবর্তী কয়েক শ’ কোটি টাকা ব্যয়ে বাস্তবায়নাধীন সরকারের মেগা প্রকল্প ‘রাজশাহী হাইটেক পার্ক’ সন্নিহিত এলাকায় অবস্থিত। এছাড়া আলোচিত বালুমহাল এলাকায় পদ্মার ভাঙ্গন রোধে সম্প্রতি ৮০ কোটি টাকা ব্যয়ে নদী তীর সংরক্ষণের কাজ সম্পন্ন করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। একইসঙ্গে পদ্মার উজানে সোনাইকান্দি থেকে মাঝারদিয়াড় এলাকায় ৬০ কোটি টাকা ব্যয়ে নদীতে ড্রেজিংয়ের কাজও শুরু হয়েছে। এসব প্রকল্পের এলাকাতে আবারও বালুঘাট ইজারা দেয়ায় এলাকাবাসীসহ রাজশাহীর সচেতন মহলে সৃষ্টি হয়েছে ক্ষোভ। সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, বালু ব্যবসায়ীরা পদ্মার বুক থেকে বড় বড় ট্রলারে করে বালু এনে ড্রেজার মেশিন লাগিয়ে পাইপ লাইনের মাধ্যমে বালু নদী তীরেই জমা করছে এসব প্রকল্প এলাকায়। বালু পাইপ ছিদ্র হয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাঁধের ওপর দিয়ে অনবরত ভেজা বালু চুইয়ে আবার নদীতে পড়ছে। এতে শহর রক্ষা বাঁধের বিপুল ক্ষতি হচ্ছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা জানান, নগরীর হাড়ুপুর ও নবগঙ্গা এলাকায় শীঘ্রই নদী ড্রেজিংয়ের কাজ শুরু হবে। এই এলাকায় বালু ব্যবসায়ীদের শত শত ট্রলার আসা যাওয়ার কারণে প্রকল্পের কাজ বিঘ্নিত হবে। সুষ্ঠুভাবে প্রকল্প বাস্তবায়নের স্বার্থে হাড়ুপুর-নবগঙ্গা বালুঘাটের ইজারা বাতিল করা জরুরী বলেও তারা মনে করছেন। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, হাইটেক প্রকল্পের কোল ঘেঁষে পর্বত সমান উঁচু করে বালু জমা করে রাখা হচ্ছে সারাবছর। সেখান থেকে প্রতিদিন শত শত ট্রাক আর ডাম্পার ভরে বালু পাঠানো হচ্ছে বিভিন্ন স্থানে। ভারি এসব ট্রাক আর ডাম্পারের কারণে প্রকল্প এলাকাসহ হাড়ুপুর ও নবগঙ্গায় শহর রক্ষা বাঁধ কাম সড়কটিও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এলাকার ছোট ও গলি সড়কগুলোর অস্তিত্ব আজ প্রায় বিপন্ন। নগরীর ভেতরে এভাবে উঁচু করে বালু জমা রাখার কারণে এলাকার পরিবেশও হয়ে পড়ছে বিপন্ন। এলাকার বাসিন্দারা দরজা লাগিয়ে ঘরের ভেতরে থাকলেও বালুতে ভর্তি হয়ে যাচ্ছে বিছানাপত্র। দৈনন্দিন জীবন-যাপনেও চরম ভোগান্তিতে থাকতে বাধ্য হচ্ছেন এলাকার হাজার হাজার মানুষ। এ বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) রাজশাহীর নির্বাহী প্রকৌশলী সৈয়দ শহিদুল আলম বলেন, অপরিকল্পিত ড্রেজিংয়ের কারণে শহর রক্ষা বাঁধসহ বিভিন্ন প্রকল্প ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বঙ্গবন্ধু হাইটেক পার্ক হুমকির মুখে পড়বে কী না- তা তদন্ত করে দেখা হবে। গাইবান্ধায় শহর রক্ষা বাঁধ নিজস্ব সংবাদদাতা গাইবান্ধা থেকে জানান, শহর সংলগ্ন রেলওয়ে ভেড়ামারা সেতুর পাশেই শহর রক্ষা বাঁধ ঘেঁষে মাটি কেটে নিয়ে অবৈধভাবে ব্যবসা করছে একটি চক্র। বাঁধ ঘেঁষে মাটি কাটায় এবং ট্রাক্টর দিয়ে পরিবহন করার ফলে খোলাহাটি ইউনিয়নের পশ্চিম কোমরনই এলাকার ঘাঘট নদীর শহর রক্ষা বাঁধটি হুমকির মুখে পড়েছে। ফলে আগামী বর্ষা মৌসুমে নদীতে পানি বৃদ্ধি পেলে তীব্র স্রোতে বাঁধটি ভেঙ্গে গিয়ে অকাল বন্যায় গাইবান্ধার শহরতলি এলাকার খোলাহাটি ইউনিয়নের ব্যাপক এলাকা বন্যাকবলিত হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। দীর্ঘদিন থেকে এই এলাকায় অবৈধভাবে মাটি কাটার কাজ অব্যাহত থাকলেও পানি উন্নয়ন বোর্ড, জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসন এ বিষয়ে কার্যকর কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করছেন না। জানা গেছে, ওই এলাকার প্রভাবশালী লোকের ছত্রছায়ায় মাটি ব্যবসায়ীর এই চক্রটি বাঁধ সংলগ্ন নদী থেকে মাটি কেটে ট্রাক্টর দিয়ে পরিবহন করে বিভিন্ন জায়গায় তা বিক্রি করছে। এমনকি ট্রাক্টর চলাচলের সুবিধার জন্য বাঁধের মাটি কেটে চলাচলের রাস্তা তৈরি করে দেয়া হয়েছে। তদুপরি ট্রাক্টরের অবাধ চলাচলের ফলে রাস্তা-ঘাটের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। ফলে ওই বাঁধের বিভিন্ন স্থানে গর্তের সৃষ্টি হয়েছে এবং গোটা বাঁধজুড়েই ধুলাবালি জমেছে। ফলে বাঁধ দিয়ে হালকা যানবাহন ও পথচারী চলাচল মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হয়েছে। ওই এলাকায় মাটি কাটা অব্যাহত থাকলে অদূর ভবিষ্যতে রেলওয়ে ভেড়ামারা সেতুটিও হুমকির মুখে পড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
×