ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

আবার বিধ্বংসী রূপে মাশরাফি

প্রকাশিত: ১১:৪৭, ৩০ মার্চ ২০১৯

 আবার বিধ্বংসী রূপে মাশরাফি

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ সম্প্রতি বল হাতে একেবারে অচেনা হয়ে উঠেছিলেন মাশরাফি বিন মর্তুজা। বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগে (বিপিএল) দুর্দান্ত বোলিং করলেও জাতীয় দলের হয়ে নিউজিল্যান্ড সফরে ছিলেন পুরোপুরি নিষ্প্রভ। ৩ ওয়ানডেতে মাত্র ১ উইকেট পেয়েছিলেন খরুচে বোলিং করে। এরপর ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লীগেও (ডিপিএল) দুই ম্যাচ বিরতি দিয়ে ফেরার পর খাপছাড়া বোলিং করছিলেন। অবশেষে ‘নড়াইল এক্সপ্রেস’ আগুন হয়ে ফিরেছেন শুক্রবার। তার বিধ্বংসী বোলিংয়ে গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্সকে বিকেএসপির ৩ নম্বর মাঠে ২৯ রানে হারিয়েছে আবাহনী লিমিটেড। ৪৬ রানে ৬ উইকেট নেন মাশরাফি। আবাহনী প্রথম ব্যাট করে ওপেনার জহুরুল ইসলাম অমির ক্যারিয়ারসেরা লিস্ট ‘এ’ ইনিংস ১৩০ রানের সুবাদে ৬ উইকেটে ২৮৬ রান তুলেছিল। জবাবে ইমরুল কায়েসের ১২৬ রানের পরও মাশরাফি ঝড়ে গাজী গ্রুপ শেষ পর্যন্ত ৪৮.৪ ওভারে ২৫৭ রানেই গুটিয়ে যায়। সপ্তম ম্যাচে এটি আবাহনীর ষষ্ঠ জয়, আর সমান ম্যাচে গাজীর পঞ্চম হার। পয়েন্ট টেবিলে শীর্ষে আবাহনী, গাজী গ্রুপ আছে ৯ নম্বরে। নিউজিল্যান্ড সফর শেষ করে আসায় দুই ম্যাচ বিশ্রাম পেয়েছিলেন মাশরাফি। তার পরিবর্তে আবাহনীর নেতৃত্ব দিয়েছেন মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত। তবে ঐতিহ্যবাহী দলটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল মাশরাফি ফেরার পর তিনিই অধিনায়কত্ব করবেন। বাস্তবে সেটি হয়নি, মোসাদ্দেকের নেতৃত্বেই খেলতে প্রস্তুত হয়েছেন মাশরাফি। তবে দুই ম্যাচ পর দলে ফিরলেও বল হাতে একেবারেই সুবিধা করতে পারছিলেন না তিনি। অন্যতম নির্ভরযোগ্য এ পেসার ব্রাদার্স ইউনিয়নের বিপক্ষে চলতি ডিপিএলে প্রথম ম্যাচ খেলে ৩৯ রানে ২ উইকেট নিয়েছিলেন। কিন্তু এরপর শাইনপুকুর ক্রিকেট ক্লাবের বিপক্ষে ০/১৪, প্রাইম ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাবের বিপক্ষে ০/৫৬ ও মোহামেডান স্পোর্টিংয়ের বিরুদ্ধে ০/৫১ কোন উইকেটের দেখা পাননি। গত ফেব্রুয়ারির শুরুতে শেষ হওয়া বিপিএলে দুর্দান্ত বোলিং করে নিয়মিত উইকেট লাভ করেছিলেন। কিন্তু এরপর নিউজিল্যান্ডে গিয়ে ৩ ম্যাচে ১ উইকেট এবং ফিরে এসে ডিপিএলে ছন্নছাড়া মাশরাফিকে দেখা যাচ্ছিল। তবে সবাই অপেক্ষায় ছিলেন মাশরাফির বিধ্বংসী রূপ দেখার জন্য। অবশেষে সেটির মঞ্চায়ন ঘটল শুক্রবার বিকেএসপির ৩ নম্বর মাঠে। ১০ ওভারে ৪৬ রান নিয়ে ৬ উইকেট দখল করলেন। এটি তার লিস্ট ‘এ’ ক্যারিয়ারে ষষ্ঠবারের মতো ৫ বার তার বেশি উইকেট নেয়ার ঘটনা। আর তাতেই জিততে থাকা গাজী গ্রুপ শেষ পর্যন্ত হেরে গেল ২৯ রানে। টস জিতে আগে আবাহনীকে ব্যাটিংয়ে পাঠিয়েছিল গাজী গ্রুপ। ৬৬ রানের উদ্বোধনী জুটি গড়ে ৩৬ বলে ২৯ রান কর্ইে সাজঘরে ফেরেন ওপেনার সৌম্য সরকার। অভিজ্ঞ ভারতীয় ওয়াসিম জাফরও বেশিদূর যেতে পারেননি (১৯)। দ্রুতই আউট হয়েছেন নাজমুল হোসেন শান্তও (১১)। তবে দ্রুত এ ৩টি উইকেটের পতন ঘটলেও ফর্মে থাকা জহুরুল এদিনও দুর্দান্ত ব্যাট চালিয়েছেন। সে কারণেই বিপর্যয়টা বুঝতে পারেনি আবাহনী। চতুর্থ উইকেটে তিনি অধিনায়ক মোসাদ্দেকের সঙ্গে ১৪৫ রানের বিশাল জুটি গড়ে দলকে বড় সংগ্রহের পথে এগিয়ে নিয়ে যান। মোসাদ্দেক বেশ দ্রুতবেগে ৭৬ বলে ৮ চারে ৭১ রান করে সাজঘরে ফিরলে জুটি ভাঙ্গে। তবে ততক্ষণে সেঞ্চুরি পেয়ে গেছেন জহুরুল। চলতি লীগে এটি তার দ্বিতীয় সেঞ্চুরি। তিনিও ইনিংসের শেষ ওভারে সাজঘরে ফেরেন। তবে ততক্ষনে লিস্ট ‘এ’ ক্যারিয়ারে নিজের সেরা রানটি পেয়ে গেছেন। জহুরুল ক্যারিয়ারের চতুর্থ শতক হাঁকিয়ে ১৩৮ বলে ১৪ চার, ২ ছক্কায় ১৩০ রানে সাজঘরে ফেরেন। আবাহনী ৬ উইকেটে ২৮৬ রানের বড় সংগ্রহ পেয়ে যায়। গাজীর হয়ে দুটি করে উইকেট নেন কামরুল ইসলাম রাব্বি ও নাসুম আহমেদ। জবাব দিতে নেমে গাজী গ্রুপ প্রথম ওভারেই মাশরাফির পেসে ধাক্কা খায়, দলীয় শূন্য রানে সাজঘরে ফেরেন রনি তালুকদার। এরপর দ্রুতই মাইশুকুর রহমানকেও (১৫) শিকার করে ত্রাস হয়ে ওঠেন মাশরাফি। তবে ইমরুল ও শামসুর রহমান দারুণ খেলছিলেন। জুটিতে ৯৩ রান যোগ করে আবাহনীকে হারের শঙ্কাও দিয়েছিলেন। তবে শামসুর ৫৩ বলে ৩০ রান করে রানআউটের খপ্পরে পড়লে বিপর্যয় শুরু হয় গাজীর। তখন একাই লড়েছেন ইমরুল। হাঁকিয়েছেন সেঞ্চুরি। ফিরতি স্পেলে এসে মাশরাফি আরও বিভীষিকাময় হয়ে ওঠেন গাজীর ব্যাটসম্যানদের জন্য। তার সঙ্গে যোগ দেন আরেক পেসার মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন। মাশরাফি আরও ৪টি, সাইফউদ্দিন ২টি উইকেট নেন। এর মধ্যে ইমরুল ১১৮ বলে ১৫ চার, ৫ ছক্কায় ১২৬ রান করে মাশরাফির কাছেই উইকেট দিয়েছেন। এমনকি তৌহিদ তারেকও ৪১ বলে ৩৯ রান করে শিকার হয়েছেন নড়াইল এক্সপ্রেসের। তাই আর জিততে পারেনি গাজী গ্রুপ। ৪৮.৪ ওভারে তাদের মুখ থুবড়ে পড়তে হয়েছে ২৫৭ রানে। স্কোর ॥ আবাহনী ইনিংস- ২৮৬/৬; ৫০ ওভার (জহুরুল ১৩০, মোসাদ্দেক ৭১, সৌম্য ২৯; নাসুম ২/৪৭, কামরুল ২/৭০)। গাজী গ্রুপ ইনিংস- ২৫৭/১০; ৪৮.৪ ওভার (ইমরুল ১২৬, তারেক ৩৯, শামসুর ৩০; মাশরাফি ৬/৪৬, সাইফউদ্দিন ২/৬৩)। ফল ॥ আবাহনী ২৯ রানে জয়ী। ম্যাচসেরা ॥ মাশরাফি বিন মর্তুজা (আবাহনী)।
×