ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

অন্তঃসত্ত্বা রুমকির শেষ কথা-‘বাবা আমি আর বাঁচব না...!’

প্রকাশিত: ১০:৫৭, ৩০ মার্চ ২০১৯

 অন্তঃসত্ত্বা রুমকির শেষ  কথা-‘বাবা আমি আর বাঁচব না...!’

জনকণ্ঠ ডেক্স ॥ রাজধানীর বনানীতে বৃহস্পতিবার দুপুরে সংঘটিত বিধ্বংসী অগ্নিকান্ডের সময় এফআর টাওয়ারের বিভিন্ন ফ্লোরে আটকা পড়ে অনেকেই নারকীয় যন্ত্রণা ভোগ করছিলেন। আর মৃত্যুর পূর্ব মুহূর্তেও বাঁচার জন্য আকুতি জানাচ্ছিলেন নিজ নিজ স্বজনের কাছে। অসহায় মানুষগুলোর আহাজারি কাঁদিয়েছে দেশবাসীকে। সর্বগ্রাসী আগুনের অসহায় শিকার হয়ে সেদিন যাদের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে, তাদের প্রায় সবার লাশ নিজ নিজ এলাকায় শুক্রবার জুমার নামাজের আগে-পরে দাফন করা হয়েছে। প্রতিটি এলাকার মানুষ মর্মান্তিক এ ঘটনায় শোকবিহ্বল হয়ে পড়েন। তাহমিন হক ববী, নীলফামারী থেকে জানান, ‘বাবা’ চারদিকে আগুন আর ধোঁয়া। আমার নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে, বাবা। আমি আর হয়ত বাঁচব না, বাবা। তোমার জামাইকেও খুঁজে পাইনি। তার মোবাইলও বন্ধ। বাবা, আমি খুব কষ্ট পাচ্ছি-আমি তোমাদের কাছে কোন ভুল করে থাকলে আমাকে ক্ষমা করে দিও, বাবা। আমার জন্য তোমরা সকলেই দোয়া কর, বাবা। এরপর মোবাইলের লাইনটি ডিসকানেক্ট হয়ে যায়। কথাগুলো ঠিক এভাবে মোবাইলে কল করে বাবাকে বলেছিল রুমকি আক্তার (৩০)। ওই ঘটনায় রুমকির স্বামী মাকসুদুর রহমান জেমি (৩২) ভবন থেকে লাফিয়ে পড়ে নিহত হয়। এই দম্পক্তি ওই টাওয়ারের ১০ তলায় হেরিটেজ এয়ার এক্সপ্রেস ট্রাভেল এজেন্সিসে কর্মরত ছিল। এই ট্রাভেল এজেন্সিতে রুমকি আক্তার ছিল এ্যাকাউন্ট্যাট ও স্বামী জেমি ছিল ট্যুর প্যাকেজ অপারেটর। পারিবারিক সূত্রমতে, রুমকি আক্তারের গর্ভে ৫ মাসের মেয়েসন্তান ছিল। পৃথিবীর আলো দেখার আগেই মায়ের গর্ভেই মায়ের সঙ্গে পৃথিবী ছেড়ে চলে গেল অনাগত সন্তানটি। শুক্রবার দুপুর ১২টার দিকে রুমকির মরদেহ নিয়ে আসা হয় তার গ্রামের বাড়ি উত্তরবঙ্গের নীলফামারীর জলঢাকা উপজেলার কৈমারী ইউনিয়নের বিন্যাকুড়ি আদর্শপাড়া গ্রামে। এই ঘটনায় শুধু রুমকির গ্রামেই নয়-পুরো জলঢাকা উপজেলায় মাতম দেখা যায়। হাজার হাজার মানুষ ছুটে আসে রুমকিদের গ্রামের এই বাড়িতে। রুমকিকে নিয়ে যখন তার লাশবাহী গাড়িটি গ্রামে প্রবেশ করে তখন চারদিকে চলছিল আহাজারি আর আহাজারি। স্বজনদের কান্নার শব্দ যেন প্রতিধ্বনিত হয়ে ছড়িয়ে পড়ছিল। শোকের মাতমে ভাসছিল এলাকাটি। জুমার নামাজের পর বিকেল ৩টায় গ্রামের ঈদগা মাঠে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে রুমকি আক্তারকে তার মা রিনা বেগমের পাশেই দাফন করা হয়। ৫ মাস আগে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে রুমকির মা রিনা বেগম মারা যান। রুমকির স্বামী মাকসুদুর রহমানের মরদেহ একই দিন দাফন করা হয় তার গ্রামের বাড়িতে। দুই পরিবারের সিদ্ধান্তে নিজ নিজ পৃথক গ্রামে তাদের দাফন করা হলো। তারা তিন বছর পর সংসার জীবনে প্রথম সন্তানের আগমনের প্রহর গুনছিল। সেই সঙ্গে তারা ঢাকায় একটি নতুন ফ্ল্যাট বাসাও কিনেছিল। ইচ্ছা ছিল সন্তানটি পৃথিবীতে এলেই নতুন ্ফ্ল্যাটে গিয়ে উঠবে। ফোনে স্ত্রীর কাছ থেকে চিরবিদায় নিলেন তুষার ॥ নিজস্ব সংবাদদাতা, মির্জাপুর, টাঙ্গাইল থেকে জানান, পরিবারের সকলের সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা বলার পর মৃত্যুমুখে পতিত হলেন কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার নাহিদুল ইসলাম তুষার। আগুনের লেলিহান শিখার মধ্য থেকেই স্ত্রীর কাছে ক্ষমা চাইলেন, আমি আর বেরুতে পারব কিনা জানি না! আমাকে ক্ষমা করে দাও! আমার জন্য সবাইকে দোয়া করতে বল। ফোনেই স্ত্রী মাহমুদা আক্তার নদীর কাছ থেকে এভাবে চিরবিদায় নেন তুষার। বৃহস্পতিবার দুপুরে বনানীর এফআর টাওয়ারে অগ্নিকান্ডে ভেতরে আটকা পড়ে মারা যান নাহিদুল ইসলাম তুষার। তুষার মির্জাপুর উপজেলার গোড়াই ইউনিয়নের ভানিয়াবহ গ্রামের প্রকৌশলী এছাক আলীর ছেলে। পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, তুষার বনানীর এফআর টাওয়ারের দশ তলায় হ্যারিটেজ ট্রাভেলস এজেন্সি নামে একটি কোম্পানিতে চাকরি করতেন। সেখানে তিনি কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। চার বছর আগে মাহমুদা আক্তার নদীকে বিয়ে করে তুষার দাম্পত্য জীবন শুরু করলেও তাদের কোন সন্তান ছিল না। বৃহস্পতিবার রাতে বনানী থেকে তুষারের লাশ মির্জাপুরের ভানিয়াবহ গ্রামের বাড়িতে পৌঁছলে এলাকার শত শত মানুষ সেখানে ভিড় জমায়। শুক্রবার সকাল দশটায় নিজ গ্রাম ভানিয়াবহতে তার নামাজে জানাজা শেষে সামাজিক কবরস্থানে তুষারের লাশ দাফন করা হয়। বৃষ্টির বাড়িতে শুধুই কান্না ॥ স্টাফ রিপোর্টার, যশোর অফিস থেকে জানান, প্রাণবন্ত শেখ জারিন তাসনিম বৃষ্টি(২৬) নামের মেয়েটি সারাদিন বাসা মাতিয়ে রাখতেন। ঢাকায় থাকলেও প্রতিদিন বাড়িতে বাবা এবং মায়ের সঙ্গে কথা বলতেন। কথা বলতেন শ্বশুরবাড়ির লোকজনের সঙ্গে। ফেসবুকেও তার ছিল ব্যাপক উপস্থিতি। গত ১১ মার্চ স্বামী কাজী শাদ নূর এবং তার একটি যুগল ছবি দিয়ে লিখেছেন, ‘চলো না দীঘারসৈকত ছেড়ে ঝাউবনে, ছায়ায় ছায়ায়... শুরু হোক পথচলা, শুরু হোক কথা বলা...। না, আর কোনদিন কথা বলবেন না বৃষ্টি। ঢাকার বনানীতে এফআর টাওয়ারে অগ্নিকান্ডে নিহতদের মধ্যে রয়েছেন তিনি। শুক্রবার দুপুরে তার মরদেহ যশোরে এসে পৌঁছলে পরিবারের সদস্যরা শোকে ভেঙ্গে পড়েন। বৃষ্টি ওই ভবনের ১২তলায় ইউরো সার্ভিস লিমিটেড নামে একটি প্রতিষ্ঠানের মানবসম্পদ বিভাগে চাকরি করতেন। বৃহস্পতিবার ওই ভবনে আগুন লাগার পর তিনি তার স্বামী কাজী শাদ নূরকে মোবাইলে ফোন দিয়ে ঘটনার কথা জানান। স্বামী তাকে উপরে ছাদে যাওয়ার পরামর্শ দেন। তিনি বলেছিলেন, ধোঁয়ায় কোনদিকে যাওয়া যাচ্ছে না। এরপর থেকে তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। বৃষ্টির দেবর কাজী নিপুন জানান, অব্যাহত চেষ্টার পর রাত বারোটায় বৃষ্টির ফোনে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়। ফায়ার সার্ভিসের এক কর্মী ওই ফোনে তার মৃত্যু খবর জানান। এফআর টাওয়ারের ১৮ তলার সিঁড়িতে মরদেহ পাওয়া গেছে বলে জানান উদ্ধারকারী দলের ওই কর্মী। শোকে পাথর তানজিলার বাবা-মা ॥ নিজস্ব সংবাদদাতা, সান্তাহার, বগুড়া থেকে জানান, আগামী ২এপ্রিল বাবা-মায়ের বিবাহবার্ষিকী পালন করার কথা ছিল সান্তাহারের মেয়ে তানজিলা মৌলি মিথির। কিন্তু সে আশা পূরণ হলো না। ঢাকার বনানীর এফ আর টাওয়ার অগ্নিকান্ড মিথির স্বপ্ন ও দেহ পুড়ে অঙ্গার করে দিয়েছে। একমাত্র সন্তান হারিয়ে শোকে পাথর এ্যাডভোকেট মাসুদুর রহমান মাসুম ও তার স্ত্রী ইয়াসমিন বেগম। দলে দলে শোকাহত মানুষ ভিড় জমাচ্ছে মিথির জন্মস্থান পৌর শহরের এক নম্বর ওয়ার্ডের বশিপুর সরদারপাড়া মহল্লার বাড়িতে। লাশবাহী হিমগাড়ি যেখানে রাখা হয়েছে তার থেকে হাতদশেক দূরে মিথির চিরচেনা পুকুরঘাট। যে ঘাটে বসে-আর হেঁসেখেলে কেটেছে তার শিশু ও কিশোরী কাল। শুক্রবার সেই ঘাটে দেখা গেল মিথির লাশ বহনের জন্য ধুয়েমুছে রাখা স্টিলের খাটিয়া। মেধাবী তানজিলা মৌলি মিথি (২৪) এশিয়ান ইউনিভার্সিটির বিবিএ ৫১তম ব্যাচের শিক্ষার্থী। পড়ালেখার পাশাপাশি চাকরি করতেন হেরিটেজ এয়ার এক্সপ্রেস ট্যুরিজম কোম্পানিতে। যে কোম্পানির অফিস ছিল এফ আর টাওয়ারের ১০ তলায়। দুই পরিবারে মাতম ॥ স্টাফ রিপোর্টার নারায়ণগঞ্জ থেকে জানান, বনানীর এফ আর টাওয়ারে অগ্নিকান্ডে মারা গেছে নারায়ণগঞ্জের ভুঁইগড়ের ফজলে রাব্বি এবং সোনারগাঁয়ের নবীনগর এলাকার আহম্মেদ জাফর। স্বজনের মৃত্যুতে আহাজারি করছে পরিবারের স্বজনরা। নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার ফতুল্লার ভূঁইগড় এলাকায় পরিবার নিয়ে বসবাস করতেন ফজলে রাব্বি। ফজলে রাব্বি ঢাকার একটি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিবিএ পাস করে ২০১৫ সালে আরএফ টাওয়ারে ১২ তলায় ইউরো ফ্রেড ফরোয়ার্ডিং কোম্পানিতে নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত ছিলেন। প্রায় চার বছর আগে বিয়ে করেন। তাদের সংসারে প্রায় আড়াই বছর বয়সী হৃদয়ান আহমেদ নামে এক সন্তান রয়েছে। দুই ভাই, এক বোনের মধ্যে নিহত ফজলে রাব্বি মেঝ। গ্রামের বাড়ি বি’বাড়িয়া জেলার নবীনগর থানার সাতমোড়া। বৃহস্পতিবার অগ্নিকা-ে ফজলে রাব্বি আটকা পড়ে মারা যায়। ভুল বকছেন মামুনের মা ॥ স্টাফ রিপোর্টার দিনাজপুর থেকে জানান, পরিবারের সবচেয়ে আদরের ও এলাকার শান্তশিষ্ট ছেলে হিসেবে পরিচিত আব্দুল্লাহ আল মামুনের মরদেহ দিনাজপুরে এসে পৌঁছলে পরিবারসহ এলাকাজুড়ে হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। ঢাকার বনানীর এফআর টাওয়ারে অগ্নিকা-ে নিহত আব্দুল্লাহ্ আল মামুনকে শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টায় ঢাকা থেকে শহরের পশ্চিম বালুয়াডাঙ্গার বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। এ সময় তার বাড়িতে শতশত মানুষ ভিড় করে এক নজর দেখতে। তার মৃত্যুতে এলাকায় নেমে এসেছে শোকের ছায়া। এদিকে মৃত্যুর সংবাদ পাওয়ার পর থেকেই ভুলভাল বকছেন মমতাময়ী মা মেহেরুন নেছা। হাতে তজবিহ নিয়ে মাঝে মাঝেই খোঁজ করছেন তার ছেলে মামুন কখন আসবে। সে কেমন আছে, ঈদে আসবে কিনা। ছেলে ফিরেছে ঠিকই কিন্তু সে ছেলে কখনই আর মা বলে ডেকে জড়িয়ে ধরবে না। সে যে চলে গেছে না-ফেরার দেশে, এ কথা কে তাকে বোঝাবে? তার প্রথম জানাজা বৃহস্পতিবার রাতে অনুষ্ঠিত হয় ঢাকার কল্যাণপুরে, যেখানে তিনি দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করে আসছিলেন। শুক্রবার বেলা ১১টায় তার ২য় জানাজা অনুষ্ঠিত হয় গ্রামের বাড়ি বিরল উপজেলার কালিয়াগঞ্জ সংলগ্ন মিরাবন গ্রামে এবং জুমার নামাজের পরে ৩য় জানাজা অনুষ্ঠিত হয় দক্ষিণ বালুয়াডাঙ্গা মিনার জামে মসজিদের ঈদগাহ মাঠে। জানাজা শেষে দিনাজপুর শহরের ফরিদপুর কবরস্থানে পিতার পাশে মরহুমকে চিরশায়িত করা হয়। রাব্বির গ্রামে শোকের ছায়া ॥ নিজস্ব সংবাদদাতা পাবনা থেকে জানান, এফআর টাওয়ারে অগ্নিকাণ্ডে নিহত আমির হোসাইন রাব্বির দাফন সম্পন্ন হয়েছে। শুক্রবার জুমার নামাজের পর জেলার আতাইকুলা থানার মাধপুর চরপাড়া গ্রামে তার মরদেহ দাফন করা হয়। রাব্বির অকালমৃত্যুতে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। নিহত রাব্বি ওই এলাকার আইয়ুব আলী খানের ছেলে। এলাকাবাসী জানিয়েছে, আমির হোসাইন রাব্বি পাবনা সরকারী এডওয়ার্ড কলেজ থেকে মাস্টার্স করার পর বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে চাকরি জীবন শুরু করেন। আতাউরের বাড়িতে মাতম ॥ নিজস্ব সংবাদদাতা, কচুয়া, চাঁদপুর থেকে জানান, আতাউর ওই ভবনের তৃতীয় তলায় অবস্থিত হেরিটেজ ট্যুর এ্যান্ড ট্রাভেলসের কর্মকর্তা ছিলেন। বৃহস্পতিবার দুপুর আনুমানিক ১টার সময় তার ছেলে তাজিমের সঙ্গে আতাউরের শেষবারের মতো মোবাইলে কথা হয়। তখন তিনি ভবনের ছাদের ওপর অবস্থান করছিলেন। এ সময় তিনি তার জন্য দোয়া করতে বলেন। আতিকের শেষ কথা-দোয়া কর ॥ নিজস্ব সংবাদদাতা, শরীয়তপুর থেকে জানান, এফ আর টাওয়ারে অগ্নিকা-ের ঘটনায় নিহত মির্জা আতিকুর রহমানের শরীয়তপুরের গ্রামের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। শুক্রবার সকালে মরদেহ শরীয়তপুর সদর উপজেলার সারেঙ্গা গ্রামে নিজ বাড়িতে আনার পর এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। স্ত্রী-সন্তান, আত্মীয়-স্বজন ও পাড়া-প্রতিবেশীদের কান্নায় বাতাস ভারি হয়ে ওঠে। মা পুত্র শোকে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন। আতিককে শেষবারের মতো দেখার জন্য শত শত উৎসুক জনতা গ্রামের বাড়িতে ভিড় জমায়। শুক্রবার বাদ জুমা তার জানাজা শেষে সারেঙ্গা গ্রামের জামে মসজিদ কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়েছে। স্থানীয় সূত্র ও নিহতের স্ত্রীর বড় ভাই মুকুল খান জানান, শরীয়তপুর সদর উপজেলার সারেঙ্গা গ্রামের মৃত আব্দুল কাদির মির্জার ছেলে মির্জা আতিকুর রহমান বনানীর স্ক্যান অয়েল কোম্পানিতে প্রায় ১৫ বছর যাবৎ এক্সিকিউটিভ পদে কর্মরত ছিলেন। তিনি স্ত্রী এ্যানি আক্তার পলি, চতুর্থ শ্রেণীতে পড়ুয়া মেয়ে তানহা (১০) ও ছেলে রাফিউর রহমানকে (৪) নিয়ে ঢাকার মানিকদি এলাকায় ভাড়া বাসায় বসবাস করতেন। প্রতিদিনের ন্যায় বৃহস্পতিবার তিনি এফআর টাওয়ারের ১৩ তলায় কর্মস্থলে যান। অগ্নিকান্ডের ঘটনার পর বেলা আনুমানিক ১ টার দিকে স্ত্রীকে ফোনে ভবনে আগুন লাগার সংবাদ দেন এবং দোয়া করতে বলেন এবং তিনি বলেন, পুরো ভবনে আগুন লেগে ধোঁয়ায় অন্ধকার হয়ে নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে। পাটগ্রামে আবীরের লাশ দাফন ॥ নিজস্ব সংবাদদাতা, লালমনিরহাট থেকে জানান, রাজধানীর বনানীর বহুতল ভবন এফআর টাওয়ারে অগ্নিকান্ডে নিহত লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার আনজির সিদ্দিক আবীরের লাশ শুক্রবার বাদ আছর জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। নিহত আবীরের চাচা মোস্তাফিজার রহমান জানান, আবীর মিকা সিকিউরিটিস লিমিটেড কোম্পানিতে কর্মরত ছিলেন। এফআর টাওয়ারের ১৪তলায় কোম্পানিটির অফিস ছিল। তিনি লালমনিরহাট জেলার পাটগ্রাম পৌর শহরের আবু বকর সিদ্দিক বাচ্চু মিয়ার ছেলে। দুই ভাইয়ের মধ্যে আবীর ছোট। বৃহস্পতিবার রাত ১০টার দিকে টাওয়ারটির ১৬তলা থেকে তার লাশ উদ্ধার করেছেন সেনাবাহিনীর সদস্যরা। তিনি আরও জানান, আবীরের লাশ তার নিজ বাড়ি পাটগ্রাম সরকারী কলেজ মাঠে শুক্রবার বাদ আছর জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়েছে। এদিকে, আবীরের মৃত্যুতে লালমনিরহাট জেলাজুড়ে শোকের ছায়া বইছে। অনাগত সন্তানের মুখ দেখা হলো না লিটনের ॥ স্টাফ রিপোর্টার, খুলনা অফিস থেকে জানান, খুলনার তেরখাদা উপজেলার কোদলা গ্রামের বাসিন্দা মিজানুর রহমান লিটন (৩৩) বনানীর অগ্নিকা-ে মৃত্যুবরণ করে শুক্রবার লাশ হয়ে বাড়িতে ফিরেছেন। তিনি দেখে যেতে পারলেন না অনাগত সন্তানের মুখ। তার স্ত্রী তানিয়া বেগম দ্বিতীয়বারের মতো মা হতে চলেছেন। দ্বিতীয় সন্তান পৃথিবীতে আসার কয়েকদিন আগেই আগুনে পুড়ে তিনি না ফেরার দেশে চলে গেলেন। শুধু অনাগত সন্তানের মুখ দেখা নয়, তার ৫ বছরের ছেলে তানিম হয়েছে পিতৃহীন। আর স্বামীহারা হয়ে অল্প বয়সেই বিধবা হলেন স্ত্রী তানিয়া। স্থানীয়রা জানায়, শুক্রবার দুপুরে মরদেহ গ্রামের বাড়ি খুলনার তেরখাদায় এসে পৌঁছালে লিটনের স্ত্রী সন্তানসহ স্বজনদের আহাজারিতে আকাশ-বাতাস ভারি হয়ে ওঠে। তার স্ত্রী স্বামী শোকে ভীষণ অসুস্থ ও বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন। বাদ জুমা জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে লিটনের দাফন সম্পন্ন হয়েছে।
×